হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলা প্রসঙ্গে গ্ৰেপ্তার ৪০ জন বিপ্লবী, মামলার তত্ত্বাবধান, মামলার নামকরণ, বিচারের স্থান, মামলা পরিচালনা, সাক্ষ্যদানের জন্য যোধ সিংকে আনয়ন, সাক্ষ্যদানে যোধ সিং-এর অস্বীকৃতি, হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলার সময় আদালতে হত্যা ও তার ফল সম্পর্কে জানবো।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলা
ঐতিহাসিক ঘটনা | হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলা |
স্থান | আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো |
গ্ৰেপ্তার | ৪০ জন বিপ্লবী |
মামলার তত্ত্বাবধান | ডেনহাম |
সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার | যোধ সিং |
ভূমিকা :- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর পরই ভারতীয় বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার আরম্ভ হয়। গ্রেপ্তার এড়াবার জন্য কয়েকজন বিপ্লবী মেক্সিকো শহরে পালিয়ে যান।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলায় গ্ৰেপ্তার ৪০ জন বিপ্লবী
কিন্তু ৪০ জন বিপ্লবী মার্কিন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এই ৪০ জনের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিরপেক্ষতা ভঙ্গকরণ এবং একটি মিত্র দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে একটি মামলা আরম্ভ করা হয়।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলার তত্ত্বাবধান
ইংরেজ পক্ষে এই মামলার তত্ত্বাবধান করবার জন্য ভারতবর্ষ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের ডেনহাম নামে একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলার নামকরণ
মার্কিন সরকার এই মামলাটিকে ‘হিন্দু ষড়যন্ত্রের মামলা’ নামে অভিহিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রস্থিত যে সকল বিদেশী ভারতীয় বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত তাদেরও গ্রেপ্তার করে আটক রাখা হয়। মার্কিন পুলিশ জার্মান দূতাবাসের কয়েকজন কর্মচারীকেও গ্রেপ্তার করে এই মামলায় জড়িত করবার চেষ্টা করে।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলার বিচারের স্থান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিস্কো শহরে এই মামলার বিচার হয়।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা
প্রকৃতপক্ষে মার্কিন সরকার ও ব্রিটিশ সরকার উভয়ে একত্র হয়েই মামলাটি পরিচালনা করেছিল।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলায় সাক্ষ্যদানের জন্য যোধ সিং আনয়ন
ভারতীয় বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবার জন্য ব্যাংকক থেকে ধৃত যোধ সিংকে সানফ্রান্সিস্কো শহরে আনা হয়। যোধ সিং লাহোর ষড়যন্ত্র মামলারও রাজসাক্ষী হয়েছিল।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলায় সাক্ষ্যদানের জন্য কুমুদকে আনয়ন
সাক্ষ্যদানের জন্য কুমুদ মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ এশিয়া থেকে। এই ব্যক্তি পূর্বেই একটি ষড়যন্ত্র মামলা রাজসাক্ষী হয়েছিল।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলায় সাক্ষ্যদানে যোধ সিং-এর অস্বীকৃতি
সানফ্রান্সিস্কো শহরে এসে যোধ সিং বিবেকের দংশন অনুভব করে এবং বিচারালয়ে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে যে,
“পুলিশের নির্যাতনে ভারতে সে স্বদেশবাসীর বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকায় সে এই দেশের আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করছে। সে তার স্বজাতির বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে না।”
উন্মাদ যোধ সিং
সাক্ষ্যদানে অস্বীকৃতির ফলে মার্কিন পুলিশ যোধ সিং-এর উপর এরূপ ভয়ঙ্কর দৈবিক নির্যাতন করে যে সে সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে এক উন্মাদ আগারে পাঠিয়ে দেয়।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলার সময় আদালতে হত্যা
এইভাবে মার্কিন আদালতে যখন ভারতীয় বিপ্লবীদের বিচারকার্য চলছিল, সেই সময় সানফ্রান্সিস্কোর এই আদালতের মধ্যেই গদর পার্টির প্রধান নায়ক এবং এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত পণ্ডিত রামচন্দ্রকে জনৈক শিখ গুলি করে হত্যা করে।
রামচন্দ্রের হত্যার কারণ অজ্ঞাত
হত্যাকারী শিখ ব্যক্তিকে আদালতের একজন ‘বেলিফ’ উত্তেজিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে মেরে ফেলে। রামচন্দ্রের এই হত্যার কারণ আজও পর্যন্ত অজ্ঞাত আছে। অনেকের ধারণা, ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা বিভাগই এই শিখ ব্যক্তির দ্বারা রামচন্দ্রকে হত্যা করিয়েছিল।
হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলার সময় রামচন্দ্রের মৃত্যুর ফল
পণ্ডিত রামচন্দ্রের শোচনীয় মৃত্যুর ফলে ভারতবর্ষের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্রামের অপূরণীয় ক্ষতি হল। রামচন্দ্র কেবল আমেরিকার ‘গদর পার্টি‘র নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কালে পাঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্রামেরও নায়ক। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের বিপ্লব প্রচেষ্টায় তার দান ছিল সর্বাধিক।
উপসংহার :- এই মামলার বিচারে বিপ্লবীদের অনেকেই দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। এই শাস্তিদানের ফলে ‘বার্লিন কমিটি’র নেতৃত্বে আমেরিকায় বিপ্লব প্রচেষ্টার অবসান হয়।
(FAQ) হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিস্কো শহরে।
মার্কিন সরকার ও ব্রিটিশ সরকার।
পণ্ডিত রামচন্দ্র
গদর পার্টির প্রধান নায়ক।