তুরস্কে বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে তুরস্কে সৈনদল গঠনের উদ্দেশ্য, তুরস্কে ভারতীয় বিপ্লবী, তুরস্ক সরকারের সহযোগিতা, মেসোপোটেমিয়া আক্রমণকারী ভারতীয় সৈন্যদের সাথে যোগাযোগ, তুরস্কে ব্রিটিশ বাহিনীর ভারতীয় সৈন্যদের পলায়ন, তুরস্কে ভারতীয় বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন তুরস্কে স্বেচ্ছাসৈনবাহিনী গঠনের পরিকল্পনা বানচাল, জার্মানি ও তুরস্কের সাহায্য দান বন্ধ সম্পর্কে জানবো।
তুরস্কে বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা
ঐতিহাসিক ঘটনা | তুরস্কে বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা |
তুরস্ক গমন | ১৯১৫ খ্রি: |
বিপ্লবী সদস্য | বরকতুল্লা, তারকনাথ |
উদ্দেশ্য | স্বেচ্ছাসৈন্যদল গঠন |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- ভারতবর্ষ-এর বৈপ্লবিক স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রয়োজনে তুরস্কে বৈপ্লবিক ঘাঁটি স্থাপন এবং ব্রিটিশ বিরোধী তুরস্ক সরকারের সাহায্যে তুরস্কবাদী ভারতীয়দের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসৈন্যদল গঠনের পরিকল্পনা ছিল।
তুরস্কে সৈনদল গঠনের উদ্দেশ্য
স্বেচ্ছাসৈন্যদল গঠনের উদ্দেশ্যে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা থেকে ভারতীয় বিপ্লবীদের একটি দল তুরস্কের ইস্তাম্বুল নগরীতে উপস্থিত হয়।
তুরস্কে ভারতীয় বিপ্লবী
তুরস্কে আগত বিপ্লবী দলে ছিলেন অধ্যাপক বরকতুল্লা, কেরসাম্প, তারকনাথ দাস এবং আরও কয়েকজন।
তুরস্ক সরকারের সহযোগিতা
তুরস্ক সরকার এই বিপ্লবীদের সাহায্য করবার জন্য একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারীকে নিযুক্ত করেন।
মেসোপোটেমিয়া আক্রমণকারী ভারতীয় সৈন্যদের সাথে যোগাযোগ
বিপ্লবীদের কয়েকজন বাগদাদ গমন করে মেসোপোটেমিয়া আক্রমণকারী ভারতীয় সৈন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সচেষ্ট হন।
তুরস্কে ব্রিটিশ বাহিনীর ভারতীয় সৈন্যদের পলায়ন
বিপ্লবীরা বিদ্রোহাত্মক পুস্তিকা, ঘোষণাপন প্রভৃতি ছাপিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে বিতরণ করতেন। ফলে অনেক সিপাহী সৈন্যদল থেকে পলায়ন করে।
তুরস্কে ভারতীয় বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন
এইভাবে পলাতক ১০০ জন সিপাহী একত্র করে বিপ্লবীরা ভারতীয় বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নাম দিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন।
তুরস্কে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ভাঙ্গন
- (১) কিন্তু তুরস্কের জনসাধারণের একাংশ এবং মোল্লাদের হিন্দু বিদ্বেষের ফলে অধিক সংখ্যক সৈন্য পলায়ন করতে পারে নি। মোল্লাদের উস্কানির ফলে আরবরা পলাতক হিন্দু সৈন্যদের ‘কাফের’ বলে হত্যা করত।
- (২) পরে এই সকল কারণে এবং সামরিক কর্মচারীদের একাংশের ধর্মান্ধতা ও অকর্মণ্যতার ফলে এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীটি ভাঙিয়া দিতে হইয়াছিল।
মেসোপটেমিয়ার ব্রিটিশ ঘাঁটিতে স্বেচ্ছাসৈনবাহিনী গঠন
১৯১৬ খ্ৰিস্টাব্দে মেসোপোটেমিয়ার ব্রিটিশ ঘাঁটি কুতালামারার পতন হলে জার্মান সামরিক কর্মচারীদের সহায়তায় সেই স্থানে অবরুদ্ধ ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে বিপ্লববাদ প্রচার করে তাদের নিয়ে একটি বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসৈনবাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। তুরস্ক সরকারও এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করে এই বাহিনীর জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করতে সম্মত হয়।
বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসৈনবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য
ভারতীয় বিপ্লবীদের ধারণা ছিল, ভারতে একটি বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসৈনবাহিনী প্রেরণ করতে পারলে ভারতবর্ষে একটি বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটবে, হাজার হাজার মানুষ তাদের সাথে মিলিত হয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করবে। এই ধারণা নিয়েই বিপ্লবীরা বারবার বিভিন্নস্থানে বিভিন্নভাবে ‘বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসৈনবাহিনী গঠনের প্রয়াস করেছিলেন।
তুরস্কে স্বেচ্ছাসৈনবাহিনী গঠনের পরিকল্পনা বানচাল
কুতালামাহার অবরুদ্ধ ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে এরূপ একটি বাহিনী গঠনের সম্ভাবনা যখন উজ্জ্বল হয়ে উঠে তখনই কয়েকজন উচ্চপদস্থ জার্মান সামরিক কর্মচারী এবং তুরস্কের কতিপয় উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীর ভিন্ন পরিকল্পনার ফলে বিপ্লবীদের এই প্রচেষ্টা ও বানচাল হয়ে যায়।
জার্মানি ও তুরস্কের সাহায্য দান বন্ধ
সেই সময় যুদ্ধের এক সংকটকাল চলছিল। যুদ্ধে অত্যধিক লোকক্ষয় হেতু জার্মানী এবং তুরস্কের সৈন্যের অভাব দেখা দেয়। তাই উভয় দেশই বিপ্লবীদের সাহায্যে ভারতীয় সৈন্যদের বুঝিয়ে তাদেরকে নিজ নিজ পক্ষে যুদ্ধে ব্যবহার করবার জন্য সচেষ্ট হয়েছিল। বিপ্লবীরা এতে সম্মত না হওয়ায় জার্মানী ও তুরস্ক উভয় দেশই বিপ্লবীদের সাহায্য দান বন্ধ করে।
উপসংহার :- শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বিপ্লবীরা তুরস্কে একটি বৈপ্লবিক স্বেচ্ছাসৈন্য বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তাঁরা ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে বার্লিনে ফিরে যায়।
(FAQ) তুরস্কে বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আমেরিকা।
১৯১৫ খ্রি:।
বরকতুল্লা, তারকনাথ দাস।
স্বেচ্ছাসৈন্যদল গঠনের উদ্দেশ্যে।