সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ প্রসঙ্গে পিতৃহত্যা, কবি প্রাণ, নিরপেক্ষ বিচারক, জনকল্যাণমূলক কাজ, বৈদেশিক মিত্রতা নীতি, কামরূপ অভিযান, মিথিলার রাজার কাছে পরাজিত ও ধর্ম সহিষ্ণুতা নীতি ত্যাগ সম্পর্কে জানবো।
সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ
সুলতান | গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ |
বংশ | ইলিয়াস শাহী |
শাসনকাল | ১৩৮৯-১৪০৯ খ্রি |
পূর্বসূরি | সিকান্দার শাহ |
উত্তরসুরি | সৈফুদ্দিন হামজা শাহ |
ভূমিকা :- ইলিয়াস শাহ ও সিকান্দার শাহ যদি রণকুশলতার দ্বারা স্বাধীন বাংলা সুলতানির প্রতিষ্ঠা করেন তবে এই বংশের তৃতীয় সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ তার সুশাসন ও সংস্কৃতি পরায়ণাতার জন্য জনপ্রিয়তা পান।
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহর পিতৃহত্যা
যদিও কিংবদন্তি আছে যে, তিনি পিতার রক্তে হাত রাঙিয়ে সিংহাসন দখল করেন। তবে হয়ত বিমাতার চক্রান্ত ও প্রতিকূল পরিস্থিতি তাকে এই কাজে বাধ্য করেছিল।
কবিপ্রাণ গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ
তিনি এতই কবিপ্রাণ ছিলেন যে, তিনি কবিতার ছত্র রচনা করে অসমাপ্ত রেখে তা পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফিজের কাছে পাদ পুরণের জন্য পাঠান।
নিরপেক্ষ বিচারক গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ
তিনি অত্যন্ত নিরপেক্ষ বিচারক ছিলেন। একটি কিংবদন্তী থেকে বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে তাঁর নিরপেক্ষতার কথা জানা যায়। তিনি ভুলক্রমে এক বিধবার পুত্রকে হত্যা করেন এবং এই বিধবা কাজীর কাছে বিচার চাইলে সুলতান নিজে অপরাধ স্বীকার করে কাজীর নির্দেশমত জরিমানা দেন।
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহর জনকল্যাণমূলক কাজ
তিনি ফকির, দরবেশদের খুবই সম্মান করতেন। তিনি মক্কা ও মদিনায় দুইটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। মক্কার মাদ্রাসা নির্মাণ করতে তিনি ১২ হাজার মিশরীয় স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেন। তিনি মক্কায় একটি সরাইখানা স্থাপন করেন এবং আরাফাহ খাল খনন করান।
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহর বৈদেশিক মিত্রতা নীতি
- (১) গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ বিভিন্ন দেশে মিত্রতামুলক দূত পাঠান। জৌনপুরের সুলতান মালিক সারওয়ারের কাছে তিনি দূত পাঠান। চীন সম্রাট য়ুংলোর দরবারে উপঢৌকন সহ তিনি ১৪০৫-৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনবার দূত পাঠান। এর বিনিময়ে চীন থেকেও দূত আসে।
- (২) চীনের দূতের সঙ্গে আগত দোভাষী মাহুয়ান তার বাংলাদেশ-এ ভ্রমণের বৃত্তান্ত লিখে রাখেন। চীনের সঙ্গে দূত বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।
যুদ্ধ ও কূটনীতিতে অদক্ষ গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গিয়াসুদ্দিন ইতিহাসে স্থায়ী কীর্তি পান। কিন্তু যুদ্ধ ও কূটনীতিতে তিনি সমান কৃতিত্ব দেখাতে পারেন নি।
সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহর কামরূপ অভিযান
গিয়াসুদ্দিন কামরূপ-কামতা রাজ্য আক্রমণ করেন। কামতা ও কামরূপের দুই রাজা তাদের পারস্পরিক বিবাদ চাপা দিয়ে উভয়ে যুক্তভাবে বাংলার গিয়াসুদ্দিন শাহকে বাধা দেন। তার ফলে তার অভিযান ব্যর্থ হয়।
মিথিলার রাজার কাছে গিয়াসুদ্দিন আজম শাহর পরাজিত
সম্ভবত তিনি মিথিলার রাজা শিব সিংহের হাতেও পরাজয় বরণ করেন। কারণ বিদ্যাপতির কবিতায় এই বিষয়ে অজস্র উল্লেখ আছে। বিদ্যাপতি কথিত “গ্যাসদীন সুলতান” যে গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ ছিলেন একথা অনেকে মনে করেন।
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহর ধর্মসহিষ্ণুতা নীতি ত্যাগ
কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, মুসলিম সন্ত মুজাফ্ফর শামস বলাখির প্রভাবে গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ শেষ জীবনে তাঁর ধর্মসহিষ্ণুতা নীতি ত্যাগ করেন। এসম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকায় এই মত সঠিক বলে মানা যায় না।
উপসংহার :- ১৪০৯ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসুদ্দিনের মৃত্যু হয়। এরপর তার পুত্র সইফুদ্দিন হামজা শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন।
(FAQ) সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ।
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ।
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ।
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ।