সিকান্দার শাহ

সুলতান সিকান্দার শাহ প্রসঙ্গে দিল্লিতে উপঢৌকন ও দূত প্রেরণ, ফিরোজ শাহের দ্বিতীয় বার বাংলা অভিযান, এক ডালা দুর্গ অবরোধ, সন্দী স্থাপন, স্বাধীন বাংলা, সিকান্দার শাহের শেষ জীবন, সাহিত্য-শিল্প অনুরাগ সম্পর্কে জানবো।

সুলতান সিকান্দার শাহ

সুলতানসিকান্দার শাহ
শাসনকাল১৩৫৭-৮৯ খ্রি
পূর্বসূরিশামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ
উত্তরসূরিগিয়াসউদ্দিন আজম শাহ
সুলতান সিকান্দার শাহ

ভূমিকা :- ইলিয়াস শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র সিকান্দার শাহ ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে পাণ্ডুয়ার সিংহাসনে বসেন। তিনি পিতার নীতি অনুসরণ করে দিল্লীর সঙ্গে মিত্রতা রেখে বাংলায় স্বাধীনতা ভোগ করার চেষ্টা করেন।

সিকান্দার শাহ কর্তৃক দিল্লিতে উপঢৌকন ও দূত প্রেরণ

বাংলার প্রাকৃতিক সীমান্ত যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সেদিকে তিনি দৃষ্টি দেন। তিনি দিল্লীতে উপঢৌকনসহ কয়েকবার দূত পাঠান।

সিকান্দার শাহর আমলে ফিরোজ শাহের বাংলা অভিযান

  • (১) সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক ইলিয়াস শাহের আমলে বাংলা অভিযান করে বিফল হন। ফিরোজ শাহ এজন্য বাংলায় পুনরায় হস্তক্ষেপ করার সুযোগ খুঁজেন।
  • (২) এই সময় সোনারগাঁওয়ের ভূতপূর্ব শাসক ফকরুদ্দিন মুবারক শাহের জামাতা জাফর খান দিল্লীতে ফিরোজ শাহের কাছে দরবার করেন যে, ইলিয়াস শাহ ও তাঁর পুত্র সিকান্দার অন্যায়ভাবে তার শ্বশুরের রাজ্য দখল করেছেন।
  • (৩) ফিরোজ এই রকম একটি অজুহাতের প্রতীক্ষায় ছিলেন। ১৩৫৯ খ্রীঃ তিনি ৮০ হাজার অশ্বারোহী সেনা নিয়ে দ্বিতীয়বার বাংলা অভিযান করেন।

সুলতান ফিরোজ শাহ কর্তৃক সিকান্দার শাহর একডালা দুর্গ অবরোধ

সিকান্দার শাহ দিল্লীর সুলতানি আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য তার পিতার মত একডালা দুর্গে আশ্রয় নেন। ফিরোজ এই দুর্গ অবরোধ করেন।

ফিরোজ শাহ ও সিকান্দার শাহর মধ্যে সন্ধি স্থাপন

বর্ষাকাল আসায় ফিরোজ শাহ বুঝতে পারেন যে, বাংলার নীচু জমিতে সুলতানি অশ্বারোহীরা আর যুদ্ধ করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষে এক সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় যার ফলে ফিরোজ কার্যত সিকান্দার শাহের স্বাধীনতা স্বীকার করেন। তবে সিকান্দার ফিরোজকে কিছু উপঢৌকন দিয়ে তাঁর সম্মান রক্ষা করেন।

সিকান্দার শাহর আমলে স্বাধীন বাংলা

এর পর বাংলা দীর্ঘকাল স্বাধীন ছিল। মুঘল বাদশাহের আমলে বাংলা পুনরায় দিল্লীর অধিকারে ফিরে যায়।

সিকান্দার শাহের শেষ জীবন

বাংলার সুলতান সিকান্দার শাহের পারিবারিক জীবন সুখের ছিল না। তার পুত্রদের মধ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে তার জীবিতকালেই গোলযোগ দেখা দেয়।

সিকান্দার শাহর সাহিত্য ও শিল্পানুরাগ

  • (১) সিকান্দার শাহ তাঁর পিতার মতই শিল্পকলা, ও সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। তারই নির্দেশে পাণ্ডুয়ার বিখ্যাত আদিনা মসজিদ নির্মিত হয়। দামাস্কাসের মসজিদের অনুকরণে তৈরি এই মসজিদটির নির্মাণ কার্যে প্রায় ২০ বছর সময় লাগে।
  • (২) এই মসজিদে অসংখ্য তোরণ ও ৪ শত স্তম্ভ, বহু সুদৃশ্য খিলান ও বহু গম্বুজ ছিল। মসজিদটি ৩৯৭ ফুট লম্বা ও ১৫৯ ফুট চওড়া। এছাড়া কোতোয়ালি দরওয়াজা প্রভৃতি সৌধ তার আমলে তৈরি হয়। তিনি বাংলা সাহিত্যের গুণগ্রাহী ছিলেন।

উপসংহার :- কিংবদন্তি আছে যে, সিকান্দার তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন (১৩৮৯ খ্রি)। এই পুত্রের নাম ছিল গিয়াসুদ্দিন।

(FAQ) সুলতান সিকান্দার শাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দিল্লির কোন সুলতান সিকান্দার শাহের আমলে বাংলা অভিযান করেন?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

২. সিকান্দার শাহের রাজত্বকাল কত?

১৩৫৭-১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ।

৩. পাণ্ডুয়ার বিখ্যাত আদিনা মসজিদ নির্মাণ করেন কে?

সিকান্দার শাহ।

Leave a Comment