বরুণ গান্ধী প্রসঙ্গে জন্ম, বংশ পরিচয়, প্রাথমিক জীবন, শিক্ষা, রাজনীতিতে আগমন, বিজেপিতে যোগদান, সংসদ সদস্য, মামলা, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক, জরুরি সভা ডাকার অনুরোধ, রাহুল গান্ধীর বিরোধিতা, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ, জনপ্রতিনিধিত্ব বিল পেশ, টানা তৃতীয়বার এমপি, জন লোকপাল বিল, পত্রিকায় লেখা ও তার রচনা সম্পর্কে জানবো।
বরুণ গান্ধী
ব্যক্তিত্ব | বরুণ গান্ধী |
জন্ম | ১৩ মার্চ, ১৯৮০ খ্রি |
পিতা | সঞ্জয় গান্ধী |
মাতা | মামানেকা গান্ধী |
পরিচিতি | ভারতীয় রাজনীতিবিদ |
ভূমিকা :- একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং পিলিভীত লোকসভার তৃতীয় মেয়াদের সংসদ সদস্য হলেন ফিরোজ বরুণ গান্ধী বা বরুণ গান্ধী।
বরুণ গান্ধীর জন্ম
রাজনীতিবিদ বরুন গান্ধী ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ ভারত-এর নতুন দিল্লিতে জন্ম গ্ৰহণ করেন।
বরুণ গান্ধীর বংশ পরিচয়
তিনি সঞ্জয় গান্ধী এবং মানেকা গান্ধীর পুত্র, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতি এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রপৌত্র।
বরুণ গান্ধীর প্রাথমিক জীবন
১৯৮০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরেই বরুণের জন্ম হয়। ১৯৮০ সালের জুন মাসে বরুণের বয়স যখন তিন মাস তখন তার বাবা সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর বরুণের বয়স যখন চার বছর তখন ইন্দিরাকে হত্যা করা হয়।
বরুণ গান্ধীর শিক্ষা
নিউ দিল্লির ঋষি ভ্যালি স্কুল এবং ব্রিটিশ স্কুলে বরুণ পড়াশোনা করেছেন। এখানে তিনি ছাত্র পরিষদে একটি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে সাম্মানিক বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
বরুণ গান্ধী রাজনীতিতে আগমন
১৯৯৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বরুণ গান্ধীকে তার মা পিলিভীত আসনে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। মানেকা আগে থেকেই ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
রাজনীতিবিদ বরুণ গান্ধীর বিজেপিতে যোগদান
বরুণ ও তার মা ২০০৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন। বরুণ গান্ধী ২০০৪ সালের নির্বাচনে ৪০ টিরও বেশি নির্বাচনী এলাকায় দলের হয়ে প্রচারণা চালান।
রাজনীতিবিদ বরুণ গান্ধীর সাক্ষাৎকার
বিবিসিতে স্টিফেন স্যাকুরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০০৫ সালের অক্টোবরে গান্ধী তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন এবং তার পিতাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে রক্ষা করেছিলেন যিনি মারুতি উদ্যোগ পরিকল্পনা শুরু করে ভারতের শিল্পায়নকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছিলেন।
সংসদ সদস্য বরুণ গান্ধী
বিজেপি দল ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে মা মানেকা গান্ধীর পরিবর্তে বরুণ গান্ধীকে পিলিভীত নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি ৪১৯৫৩৯ টি ভোট পেয়ে আসনটিতে জয়ী হন। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভি এম সিংকে ২৮১৫০১ টি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এই নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের চারজন প্রার্থীর ( তার মা মানেকা গান্ধী, কাকিমা সোনিয়া গান্ধী এবং খুড়তুতো ভাই রাহুল গান্ধী) মধ্যে বরুণ গান্ধীর জয়টি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।
বরুণ গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা
পিলিভীতের দলচাঁদ মহল্লা এলাকায় একটি সভায় মুসলমানদের সম্পর্কে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অবশ্য তিনি এই বিষয়ে আদালতে খালাস পান। 5 মার্চ 2013- এ, একটি পিলিভীত আদালত গান্ধীকে 2009 লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় তার বিরুদ্ধে নথিভুক্ত দ্বিতীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মামলা থেকে খালাস দেয়।
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বরুণ গান্ধী
২০১৩ সালের মার্চ মাসে রাজনাথ সিং বরুণ গান্ধীকে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করেন। তিনিই ছিলেন দলের সর্বকনিষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক। ২০১৩ সালের মে মাসে বরুণ গান্ধীকে পশ্চিমবঙ্গ-এ বিজেপি সংক্রান্ত বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত করা হয়েছিল।
বরুণ গান্ধী কর্তৃক জরুরি সভা ডাকার অনুরোধ
- (১) ২০১৩ সালের জুন মাসে গান্ধী উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল তার জন্য লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারকে একটি জরুরি সর্বদলীয় সভা ডাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
- (২) তিনি বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য এমপিএলএডিএস তহবিল থেকে অনুদান, এমপিদের তিন মাসের বেতন বাতিল এবং কর্পোরেট ও ব্যক্তিদের থেকে পাওয়া ট্যাক্সকে কাজে লাগানোর মতো বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন।
- (৩) তিনি বলেন যে তিনি অনেক এমপির সাথে কথা বলেছেন এবং তারা সবাই এক্ষেত্রে অবদান রাখতে প্রস্তুত। তিনি বলেন যে স্পিকারের উচিত অনুঘটক হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে কর্ম পরিকল্পনা সমন্বয় করা।
প্রয়াত বিধায়ককে বরুণ গান্ধীর সহায়তা
- (১) ২০১৩ সালের জুলাই মাসে জনসংঘের আইনসভার সদস্য প্রয়াত ভগবতী প্রসাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বরুণ গান্ধী তার বেতন থেকে ১ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন। মৃত্যুর পর শেষকৃত্য করার জন্যও তার পরিবারের কাছে টাকা ছিল না।
- (২) বরুণ বলেছিলেন যে তিনি প্রসাদের মৃত্যুর পরেই এই খবর জানতে পেরেছিলেন। প্রয়াত বিধায়ককে সততার মডেল হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, তার মতো সৎ নেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বরুণ গান্ধী কর্তৃক উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ব্যয়
- (১) ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে সংবাদপত্রগুলি জানায় যে গান্ধীই দেশের একমাত্র এমপি, যিনি তার স্থানীয় এলাকা উন্নয়ন তহবিল (MPLAD) নির্ধারিত সময়ের আগে ব্যয় করেছিলেন। সরকারী সূত্রের মতে, বরুণ গান্ধী শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোগত কর্মকান্ডের উন্নয়নে তার তহবিল ব্যবহার করেছেন।
- (২) তার প্রস্তাবগুলি সম্পূর্ণ এমপিএলএডি তহবিলের চেয়ে বেশি মূল্যবান ছিল। সংসদ সদস্য হিসাবে তার মেয়াদকালে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। তার রাজনৈতিক সহযোগীরা বলেছেন যে তিনি সময়মতো প্রস্তাব জমা করেছিলেন এবং অর্থের ব্যবহার নিরীক্ষণের জন্য তার ব্যক্তিগত দলকে নিয়োগ করেছিলেন।
উত্তরপ্রদেশের সরকারকে বরুণ গান্ধীর অভিযোগ
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বরুণ গান্ধী সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশ সরকারকে অভিযুক্ত করেছিলেন। কারণ, এই সরকার তুষ্টির রাজনীতি অনুসরণ করেছিল। তিনি বলেছিলেন যে তার ভুলগুলি তার পতনের দিকে নিয়ে যাবে।
রাহুল গান্ধীর বিরোধিতা
- (১) তিনি দোষী সাব্যস্ত আইন প্রণেতাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর ক্ষোভের নিন্দা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে এটি প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপমানজনক ছিল এবং সেই সঙ্গে জাতির কাছেও অপমানজনক।
- (২) সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ছিলেন। বরুণ আরও বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর যদি কোনো মর্যাদা অবশিষ্ট থাকে না তাহলে রাহুল গান্ধীর ক্ষোভের দিনে দেশে ফিরে আসার সাথে সাথেই তার পদত্যাগ করা উচিত।
২০১৪ সালের নির্বাচনে
২০১৪ সালের নির্বাচনের জন্য বরুণ গান্ধী ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুলতানপুরে তার প্রচারণা শুরু করেন। কাদিপুরে এক উৎসাহী জনতার সামনে তিনি আবেগঘন বক্তৃতা দেন এবং বলেন যে তিনি তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে সুলতানপুরে এসেছেন।
২০১৪ নির্বাচনে বরুণ গান্ধীর জয়লাভ
বরণ গান্ধী ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মে ২০১৪ সালে সুলতানপুর থেকে অমিতা সিংকে পরাজিত করেন।
জনপ্রতিনিধিত্ব বিল পেশ
২০১৬ সালের মার্চ মাসে তিনি লোকসভায় জনপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধনী) বিল পেশ করেন।
টানা তৃতীয়বার এমপি
তিনি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিলিভীত লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রায় ২৫০০০০ ভোটে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এমপি হন।
জন লোকপাল বিল
- (১) ২০১১ সালের আগস্ট মাসে বরুণ গান্ধী জন লোকপাল বিলের পক্ষে জোরালো ভাবে দাবি তোলেন। সরকার অনুমতি না দেওয়ার পর বরুণ গান্ধী আন্না হাজারেকে তার অনশন রাখার জন্য নিজ আধিকারিক ভবন ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
- (২) হাজারেকে কারাগারে পাঠানো হলে গান্ধী সংসদে জন লোকপাল বিল পেশ করার প্রস্তাব দেন। ২৪ আগস্ট তিনি আন্না হাজারের উদ্দেশ্যকে সমর্থন করার জন্য একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে রামলীলা ময়দানে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি প্রকাশ্যে দুর্নীতিবিরোধী কারণকে সমর্থন করেছিলেন।
পত্রিকায় বরুণ গান্ধীর লেখা
- (১) বরুণ গান্ধী ভারতের টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইকোনমিক টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য এশিয়ান এজ, দ্য হিন্দু, আউটলুক ইত্যাদির মতো বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক এবং ম্যাগাজিনের জন্য নিবন্ধ ও নীতিমালা লেখেন।
- (২) মালয়ালম মনোরমা, লোকমত, রাজস্থান পত্রিকা, পাঞ্জাব কেশরী, অমর উজালা, সন্দেশ, বার্তামন, সাক্ষী ইত্যাদির মতো ২১ টি সংবাদপত্র কভার করে বরুণ গান্ধী দেশের সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেটেড কলাম লেখেন। এই লেখা ২০০ মিলিয়নেরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছেছে।
বরুণ গান্ধীর রচনা
- (১) বরুণ গান্ধী ২০০০ সালে ২০ বছর বয়সে দ্য অদারনেস অফ সেল্ফ নামে তাঁর কবিতার প্রথম খণ্ড লিখেছিলেন। তাঁর কবিতার দ্বিতীয় খণ্ডের স্থিরতা শিরোনামটি এপ্রিল ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি বেস্টসেলিং নন- ফিকশন বইতে পরিণত হয়েছিল। প্রকাশের প্রথম দুই দিনে ১০০০০ কপি বিক্রি হয়েছিল।
- (২) ২০১৮ সালে তিনি দ্য রুরাল ম্যানিফেস্টো: রিয়েলাইজিং ইন্ডিয়াস ফিউচার থ্রু হার ভিলেজ শিরোনামে ভারতীয় গ্রামীণ অর্থনীতির উপর বই প্রকাশ করেন। বইটি প্রকাশের দশ দিনে ৩০০০০ কপি বিক্রি হয়েছে।
উপসংহার :- বরুণ গান্ধী নেহেরু-গান্ধী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবার ১৯৪৭ সালে দেশের স্বাধীনতার আগে থেকে ভারতের রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে।
(FAQ) বরুণ গান্ধী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৩ মার্চ, ১৯৮০ সালে নতুন দিল্লিতে।
সঞ্জয় গান্ধী ও মানেকা গান্ধী।
জওহরলাল নেহরু।