বিজয়নগরে আগত বিদেশি পর্যটকগণ

বিজয়নগরে আগত বিদেশি পর্যটকগণ প্রসঙ্গে নিকোলো কোন্টি, আবদুর রাজ্জাক, পায়েজ ও বারবোসার বিজয়নগরে আগমন সম্পর্কে জানবো।

বিজয়নগরে আগত বিদেশি পর্যটকগণ

ঐতিহাসিক ঘটনাবিজয়নগরে বৈদেশিক পর্যটকগণ
নিকোলো কোন্টিইতালি
আবদুর রজ্জাকপারস্য
পায়েসপোর্তুগাল
বিজয়নগরে আগত বিদেশি পর্যটকগণ

ভূমিকা  :- পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে বহু পর্যটক ও দূত ভারত-এ এসেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এ অবস্থান করে সমকালীন অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা লিপিবদ্ধ করেন।

বিদেশি পর্যটক নিকোলো কোন্টির বিজয়নগরে আগমন

নিকোলো কোন্টি (Nicolo Conti) নামে ইতালীর পর্যটক ১৪২০ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর রাজ্য পরিদর্শন করেন। বিজয়নগর শহরের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “নগরীর পরিধি ষাট মাইল বিস্তৃত। এর প্রাচীর পর্বত পর্যন্ত প্রসারিত এবং পর্বতের পাদদেশে উপত্যকাগুলিকে বেষ্টন করেছে। …অস্ত্র ধারণে সক্ষম প্রায় নব্বই হাজার লোক এই শহরে বাস করে। এর রাজা ভারতের সকল রাজা অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাশালী।”

বিদেশি পর্যটক আবদুর রজ্জাকের বিজয়নগরে আগমন

  • (১) পারসিক রাজদূত আবদুর রজ্জাক ১৪৪২-৪৮ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগরে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যের জনসংখ্যা এত বেশী যে স্বল্প পরিসরে তার সম্যক ধারণা দেওয়া যায় না। রাজার কোষাগারে প্রকোষ্ঠগুলিতে গর্ত খনন করে তাতে গলিত স্বর্ণ ঢেলে জমানো হয়।
  • (২) দেশের উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকল অধিবাসী, এমন কি বাজারের কারিগররা পর্যন্ত, কান, গলা, হাত ও আঙ্গুলে মণিমুক্তা ও স্বর্ণালঙ্কার ধারণ করে। এই দেশটি মোটের উপর সুকর্ষিত, এবং অতি উর্বর। এই দেশে ১১ লক্ষ সৈন্যের একটি বাহিনী ছিল। এই রাজ্যে কালিকটের সমতুল্য ৩০০ বন্দর আছে, এইরূপ কথা শোনা যেত।
  • (৩) নগরীর সম্বন্ধে তিনি বলেন, ‘বিজয়নগরের ন্যায় একটি নগরী বিশ্বের অন্যত্র কোথাও আছে বলে দেখা যায় নি। একটির মধ্যে একটি, এইরূপে সাতটি প্রাচীর দ্বারা নগরীটি সুরক্ষিত ছিল।’ তিনি বলেন যে ভারতবর্ষের কোনো স্থানে বিজয়নগরের রাজার ন্যায় ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী’ কোনো শাসক ছিলেন না।

বিদেশি পর্যটক পায়েসের বিজয়নগরে আগমন

পর্তুগীজ পর্যটক পায়েস (Paes) বলেন, “বিশ্বের মধ্যে এই নগরী সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ। এখানে চাল, গম, শস্য, ভুট্টা, প্রচুর পরিমাণে যব এবং নানা প্রকার ডাল, অশ্বের খাদ্য ও অন্যান্য শস্যবীজ প্রভূত পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। রাস্তাঘাট ও বাজারে অগণিত ভারবাহী বলদ দেখা যায়।” তিনি এই নগরে বিভিন্ন দেশের এবং বিভিন্ন জাতির মানুষ দেখেছিলেন, কারণ বাণিজ্যের দিক থেকে এই রাজ্য অতি সমৃদ্ধ ছিল।

বিদেশি পর্যটক বারবোসার বিজয়নগরে আগমন

  • (১) এডোয়ার্ডো বারবোসা ( Eduardo Barbosa) নামে অপর একজন পর্যটক ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগরে এসেছিলেন। তিনি বলেন, বিজয়নগর ছিল ‘বিশাল, জনবহুল এবং দেশীয় হীরা, পেগুর চুনী, চীন ও আলেকজান্দ্রিয়ার রেশম এবং মালাবারের সিঁদুর, কপূর, কস্তূরী, গোলমরিচ ও চন্দনের বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র।’
  • (২) তিনি কৃষ্ণদেব রায়-এর ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশংসা করে বলেন, “রাজা খ্রিস্টান, ইহুদী, মুর (মুসলমান) বা হিন্দু নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে এখানে যাওয়া আসা করার এবং বিনা বাধায় নিজ ধর্ম পালন করে বসবাস করার স্বাধীনতা দিয়েছেন।”

উপসংহার :- বিজয়নগর সাম্রাজ্যে আগত বিদেশী পর্যটকদের বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে বিজয়নগর সাম্রাজ্য ছিল ধন-সম্পদে সমৃদ্ধ। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের উন্নতির কারণ ছিল মূলত উন্নত কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের উৎকর্ষ।

১. বিজয়নগরে আগত নিকোলো কোন্টি কোন দেশের পর্যটক ছিলেন?

ইতালি।

২. বিজয়নগরে আগত আবদুর রাজ্জাক কোন দেশের পর্যটক ছিলেন?

পারস্য।

৩. বিজয়নগরে আগত পায়েস কোন দেশের পর্যটক ছিলেন?

পোর্তুগাল।

Leave a Comment