অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের প্রথম সংঘটিত শিল্প বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে মন্থর গতি, শিল্প বিবর্তন, আমুল ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন, বিপ্লব, যন্ত্রের ব্যবহারকারী মানুষ, সময়ের বিভিন্নতা, ইংল্যান্ডে সূচনা কাল বিতর্ক, শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি, শহর কেন্দ্রীকতা ও কৌশলগত বিপ্লবের সূচনা সম্পর্কে জানবো।
শিল্প বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য
ঐতিহাসিক ঘটনা | শিল্প বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য |
প্রথম সূচনা | ইংল্যান্ড |
সময়কাল | অষ্টাদশ শতক |
সর্বপ্রথম ব্যবহার | অগাস্তে ব্ল্যাঙ্কি |
জনপ্রিয় করেন | আর্নল্ড টয়েনবি |
ভূমিকা:- অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়। এরপর ক্রমে তা সমগ্ৰ ইউরোপ-এ বিস্তার লাভ করে। শিল্প বিপ্লবের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয়। যেমন –
(১) মন্থর গতি
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ধীরে ধীরে মন্থর গতিতে বহু মানুষের সম্মিলিত চেষ্টার ফলে শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক বিপ্লব, অষ্টাদশ শতকে আমেরিকা বা ফ্রান্স -এর বিপ্লব অথবা অন্য কোনও বিপ্লবের মতো এতে কোনও চমক বা আকস্মিকতা নেই। এর ফলশ্রুতিও আকস্মিক নয়।
(২) শিল্প বিবর্তন
ঐতিহাসিক হ্যাজেন, হেজ প্রমুখ ঐতিহাসিকরা ‘শিল্প বিপ্লব’ কথাটির পরিবর্তে ‘শিল্প বিবর্তন’ কথাটি ব্যবহারের পক্ষপাতী। হ্যাজেন বলেন যে, শিল্পের এই আন্দোলনকে শিল্প বিবর্তন বলাই যুক্তিসঙ্গত। তাঁর মতে কয়েক যুগ ধরে এই বিবর্তন চলে এবং এখনও এই বিবর্তনের শেষ হয় নি।
(৩) আমুল ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন
এই কথাও ঠিক যে, শিল্পক্ষেত্রের মন্থর পরিবর্তনটি মানুষের সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে আমূল ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এনেছিল তাতে তাকে বিপ্লব বলা অযৌক্তিক নয়।
(৪) বিপ্লব
অধ্যাপক বার্নি, বেয়ার্ড প্রমুখ একে বিপ্লব নামেই অভিহিত করেছেন। অধ্যাপক বার্নি-র মতে, শিল্পক্ষেত্রের এই পরিবর্তন ছিল সুদূরপ্রসারী ও স্পষ্ট, ভালো ও মন্দের বিস্ময়কর সংমিশ্রণ, বস্তুগত উন্নতি ও সামাজিক বঞ্চনার নাটকীয় সংমিশ্রণ, যাকে বিপ্লব বলে অভিহিত করা যেতে পারে।
(৫) যন্ত্রের ব্যবহারকারী মানুষ
সিপোল্লা-র মতে, এই বিপ্লব মানুষকে কৃষক-পশুপালক অবস্থা থেকে জড়শক্তি চালিত যন্ত্রের ব্যবহারকারী অবস্থায় উন্নীত করেছিল।
(৬) সময়ের বিভিন্নতা
এই বিপ্লব সর্বত্র একই সময়ে দেখা দেয় নি। বিপ্লবের সূচনা হয় ইংল্যান্ডে এবং পরে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
(৭) ইংল্যান্ডে সূচনা কাল বিতর্ক
ইংল্যান্ডে এই বিপ্লবের সূচনা কবে হয় তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। যেমন –
- (ক) আর্নল্ড টয়েনবি-র মতে, ১৭৪০-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ হল শিল্প বিপ্লবের সূচনাকাল।
- (খ) ফিলিস ডীন এ সম্পর্কে ১৭৬০-১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের কথা বলেন।
- (গ) রোস্টো (Rostow), হবসবম প্রমুখ অধিকাংশ ঐতিহাসিক শেষোক্ত মতটিকেই সমর্থন করেন।
- (ঘ) মার্কিন ঐতিহাসিক নেফ (J. U. Nef) অবশ্য এই ধরনের কোনও সুনির্দিষ্ট কালসীমা চিহ্নিতকরণের বিরোধী এবং তিনি ইতিহাসের প্রবহমানতায় বিশ্বাসী।
(৮) শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি
আগে ইউরোপের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। কুটির শিল্পের মাধ্যমে দৈহিক শ্রমের সাহায্যে শিল্পসামগ্রী উৎপাদিত হত। শিল্প বিপ্লবের ফলে উৎপাদন পদ্ধতি যন্ত্রনির্ভর ও কলকারখানা-ভিত্তিক হয়ে ওঠে। এর ফলে ইউরোপের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়।
(৯) শহরকেন্দ্রিকতা
আগে ইউরোপের অধিকাংশ লোক গ্রামে বসবাস করত এবং কৃষি ও পশুপালন তাদের প্রধান বৃত্তি ছিল। শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষ শহরমুখী হয় ও কলকারখানায় শিল্পকর্মে নিযুক্ত হয়। এর ফলে শহরকেন্দ্রিক শিল্প-সভ্যতা গড়ে ওঠে।
(১০) কৌশলগত বিপ্লবের সূচনা
শিল্প বিপ্লব কৃষি, বস্ত্র, কয়লা, লৌহ, পরিবহন – সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তি ও কৌশলগত বিপ্লব এনে দেয়।
উপসংহার:- ইউরোপীয় মহাদেশের ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয় ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া বা আমেরিকা প্রভৃতি দেখে শিল্প বিপ্লব শুরু হয় আরোও অর্ধ শতাব্দীর পরে।
(FAQ) শিল্প বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইংল্যান্ডে।
ফরাসি দার্শনিক অগাস্তে ব্ল্যাঙ্কি।
ইংরেজি ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি।