চালুক্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, ধর্মসহিষ্ণুতা, মন্দির স্থাপত্য, চিত্রকলা, শিব মন্দির, বিষ্ণু মন্দির ও বিরূপাক্ষ মন্দির সম্পর্কে জানবো।
চালুক্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | চালুক্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি |
বংশ | বাতাপির চালুক্য বংশ |
স্থান | দক্ষিণের বাতাপি |
স্থপতি | প্রথম পুলকেশী |
শ্রেষ্ঠ রাজা | দ্বিতীয় পুলকেশী |
শেষ শ্রেষ্ঠ রাজা | দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য |
ভূমিকা :- বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণ ভারতকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বিন্ধ্য অঞ্চল থেকে তুঙ্গভদ্রা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে দাক্ষিণাত্য এবং তুঙ্গভদ্রার দক্ষিণের অঞ্চলকে সুদূর দক্ষিণ বলা হয়। এই দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসে চালুক্য রাজবংশ ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
চালুক্য সভ্যতায় ব্রাহ্মণ্য ধর্ম
চালুক্য রাজারা ছিলেন ব্রাহ্মণ্য ধর্মের উগ্র পৃষ্ঠপোষক। তাদের আনুকূল্যে বৈদিক যজ্ঞ ও ধর্মমতের প্রাধান্য দেখা দেয়। প্রথম পুলকেশী কয়েকটি অশ্বমেধ যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেন। বৈদিক যজ্ঞ অনুষ্ঠানের জন্য চালুক্য রাজারা বহু শাস্ত্র রচনার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া পৌরাণিক ধর্মমতও চালুক্য রাজ্যে বিস্তার লাভ করে। শিব, বিষ্ণু প্রভৃতি পৌরাণিক দেবতার মন্দির চালুক্য রাজাদের আনুকূল্যে তৈরি হয়।
ভারতের চালুক্য সভ্যতায় বৌদ্ধ ধর্ম
চালুক্য রাজারা গোঁড়া হিন্দু ধর্মবলম্বী হলেও অন্য ধর্মমতের প্রতি সহনশীলতার অভাব দেখান নি। চালুক্য সাম্রাজ্য-এ বহু বৌদ্ধ স্তূপ ও বিহারের অস্তিত্ব থেকে একথা প্রমাণিত হয়। হিউয়েন সাঙ চালুক্য রাজ্যে ভ্রমণের সময় ১০০টি বিহারে প্রায় ৫০০০ ভিক্ষুকে বসবাস করতে দেখেন। তবে চালুক্য যুগে বৌদ্ধ ধর্ম পতনশীল অবস্থায় এসেছিল।
দক্ষিণের চালুক্য সভ্যতায় জৈন ধৰ্ম
চালুক্য রাজারা জৈন সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রতি বিশেষ সমর্থন জানাতেন। দ্বিতীয় পুলকেশীর জীবনীকার আইহোল লিপির রচয়িতা কবি রবিকীর্তি ছিলেন জৈন ধর্ম অবলম্বী। চালুক্য দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য জৈন মন্দির নির্মাণ করেন এবং জৈন সাধু জয়পণ্ডিতকে ভূমি দান করেন।
চালুক্য রাজাদের ধর্মসহিষ্ণুতা
ভারতের চালুক্য রাজারা এতই ধর্মসহিষ্ণু ছিলেন যে, ৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে অগ্নি উপাসক পারসিক সম্প্রদায় চালুক্য রাজ্যের থানা জেলায় বসবাস ও মন্দির তৈরির অনুমতি পায়।
চালুক্য মন্দির স্থাপত্য
ভারতের চালুক্য শাসনকালে পাহাড় কেটে বহু মন্দির তৈরি করা হয়। পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ রীতিটি প্রথমে বৌদ্ধরা আবিষ্কার করে। চালুক্য রাজা মঙ্গলেশ পাহাড় কেটে বাতাপির বিষ্ণুমন্দির তৈরি করেন।
চালুক্য চিত্রকলা
অজন্তা ও ইলোরা গুহা ছিল চালুক্য রাজ্যের ভেতর। এই গুহায় কয়েকটি চৈত্যগৃহ পাহাড় খোদাই করে চালুক্য রাজারা নির্মাণ করেন। অজন্তা তার দেওয়ালের একটি চিত্রে দ্বিতীয় পুলকেশীর প্রেরিত এক দূতকে পারসিক সম্রাট দ্বিতীয় খসরু রাজসভায় গ্রহণ করছেন দেখা যায়।
চালুক্য আমলে নির্মিত শিব মন্দির
দক্ষিণের চালুক্য রাজারা এমনি সাধারণ মন্দির পাথর সাজিয়ে তৈরি করেন। মেগুটির শিবমন্দির ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়। এই মন্দিরে কবি রবিকীর্তি বিরচিত দ্বিতীয় পুলকেশীর প্রশস্তি খোদাই করা আছে।
চালুক্য আমলে নির্মিত বিষ্ণু মন্দির
আইহোলের বিষ্ণু মন্দিরটি বৌদ্ধ বিহারের অনুকরণে তৈরি করা হয়। এই মন্দিরের গায়ের ভাস্কর্য শোভা অসাধারণ।
চালুক্য আমলে নির্মিত বিরূপাক্ষ মন্দির
দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্যের রাণী পট্টদাকলে বিখ্যাত বিরুপাক্ষ শিব মন্দির নির্মাণ করেন। হ্যাভেলের মতে, এই মন্দিরটিতে ইউরোপ-এর ধ্রুপদী গঠন রীতির সঙ্গে গথিক শিল্পের ভঙ্গিমার মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
উপসংহার :- প্রশাসনিক দক্ষতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারেও এই চালুক্য সাম্রাজ্য যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছিল। একাদশ শতকে এসে চালুক্য সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় তেলুগু সাহিত্য প্রচার ও প্রসার লাভ করে।
(FAQ) চালুক্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জয়সিংহ।
প্রথম পুলকেশী।
দ্বিতীয় পুলকেশী।
দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য।