শাহজাহানের আমলে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ

উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও প্রকৃতি প্রসঙ্গে দারাশিকোর দায়িত্ব, বিরোধী জোট, দারার সিংহাসনের যোগ্যতা বিচার, দারার দুর্বলতা, সুজার নৈতিক চরিত্র, সুজা ঔরঙ্গজেব চুক্তি, ঔরঙ্গজেবের যোগ্যতা, ঔরঙ্গজেবের প্রতি শাহজাহানের নিষ্ঠুরতা ও দরবারে গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব সম্পর্কে জানবো।

উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও প্রকৃতি

ঐতিহাসিক ঘটনাউত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ
সময়শাহজাহানের আমল
যুদ্ধে অংশদারা, সুজা, মুরাদ, ঔরঙ্গজেব
জয়লাভঔরঙ্গজেব
উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও প্রকৃতি

ভূমিকা :- ১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ই সেপ্টেম্বর সম্রাট শাহজাহান গুরুতরভাবে অসুস্থ হন। এই সময় সম্রাটের বয়স ছিল ৬৫ বৎসর। তাঁর অসুস্থতার খবর প্রকাশিত হলে তাঁর চার পুত্রের মধ্যে সিংহাসন লাভের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরম্ভ হয়।

উত্তরাধিকার যুদ্ধে দারাশিকোর দায়িত্ব

সম্রাট তাঁর বার্ধক্য ও মৃত্যুর আশঙ্কা দেখে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকোকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। অসুস্থ সম্রাটের পক্ষে দারা রাজধানীতে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব নেন।

শাহজাহানের মৃত্যুর গুজব রটনা

এই খবর দক্ষিণে ঔরঙ্গজেব, গুজরাটে মুরাদ ও বাংলায় সুজার নিকট পৌঁছায়। এই সঙ্গে গুজব ছড়ায় যে, সম্রাটের দেহাবসান হয়েছে এবং দারাই সিংহাসনে বসেছেন।

তৈমুর বংশের প্রথা

  • (১)  এদিকে তৈমুর বংশের প্রথা ছিল যে, সিংহাসনে পিতার সকল পুত্রের সমান দাবী আছে। সিংহাসনের অধিকার ভ্রাতাদের মধ্যে তরবারির দৈর্ঘ্যের দ্বারাই স্থির হত। হুমাযুনকে তাঁর ভ্রাতা কামরান, আসকারি, হিন্দালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়।
  • (২)  আকবরকে উত্তরাধিকারের মীর্জা মহম্মদ হাকিমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। জাহাঙ্গীর নিজেই পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। শাহজাহান খসরু, শাহরিয়ারের রক্তপাত ঘটিয়ে সিংহাসনে বসেন।

তিন ভ্রাতার জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন

সুতরাং দারার সিংহাসন লাভের ফলে অপর তিন ভ্রাতার জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন দেখা দেয়। মুঘল পরিবারে একটি কথা প্রচলিত ছিল “তথত আউর তথতা” অর্থাৎ হয় সিংহাসন অথবা কফিনের কাঠ” এই ছিল রাজপুত্রদের ভাগ্য।

উত্তরাধিকার যুদ্ধে বিরোধী জোট

শাহজাহানের পর তাঁর যে কোনো পুত্র সিংহাসনে বসলে অপর তিন পুত্র বিনা যুদ্ধে তা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। এখন দারাশিকো সম্রাটের তরফে সিংহাসনে বসায়। অপর তিন ভ্রাতা তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হন।

দারার সিংহাসন লাভের যোগ্যতা বিচার

  • (১) শাহজাহানের ৪ পুত্রের মধ্যে দারা ছিলেন উদারচিত্ত। আকবরের মতই ধর্ম-সমন্বয়বাদে তিনি বিশ্বাস করতেন। তিনি সুফী ও শিয়া মতের অনুরাগী ছিলেন। হিন্দু উপনিষদের তিনি ফার্সী অনুবাদ করেন। তাঁর মাতা ছিলেন রাজপুত রমণী।
  • (২) দরবারের রাজপুত গোষ্ঠী ছিলেন দারার পক্ষে। সম্রাট শাহজাহান দারাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং তাকে অধিকাংশ সময় রাজধানীতেই রাখতেন। ফলে দারা কেন্দ্রীয় শাসন ও দরবারের কাজে অভিজ্ঞ ছিলেন।
  • (৩) শাহজাহানের অসুস্থতার সময় স্বভাবতই তিনি সম্রাটের নামে শাসনকার্য চালাতে থাকেন। যোগ্যতার দিক দিয়ে সিংহাসনে তাঁর দাবী বিশেষ ছিল।

রাজপুত্র দারার দুর্বলতা

দারার কয়েকটি দুর্বল দিক ছিল। যেমন –

  • (১) তিনি ঔরঙ্গজেবের মত সারাজীবন যুদ্ধ শিবিরে কাটান নি। ফলে সামরিক দক্ষতা, বাস্তব বুদ্ধি তাঁর কম ছিল। সিংহাসন লাভ করতে হলে তরবারির দৈর্ঘ্যই ছিল শেষ কথা। এদিক থেকে দারা দুর্বল ছিলেন।
  • (২) গোঁড়া মুসলিমরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। কারণ তাঁর সমদর্শী নীতিকে তারা সহ্য করতে প্রস্তুত ছিলেন না। শাহজাহানের রাজত্বকালে মৌলবাদী মুসলিমদের ক্ষমতা বিশেষভাবে বেড়ে ছিল। দারা এঁদের কাছে অপ্রিয় ছিলেন।

রাজপুত্র সুজার নৈতিক চরিত্র

শাজাহানের দ্বিতীয় পুত্র সুজা ছিলেন অমায়িক স্বভাবের লোক। তিনি সাহসী সেনাপতি ও শিয়া মতের অনুরাগী ছিলেন। কিন্তু তার নৈতিক চরিত্র ছিল নীচু মানের। সুরা ও নারী সঙ্গ ছেড়ে তিনি রাজকার্য দেখতে সময় পেতেন না। তাঁর শিয়া মতবাদ ও নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য সুন্নী সম্প্রদায় তাঁর প্রতি বিরক্ত ছিলেন।

উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় সুজা-ঔরঙ্গজেব চুক্তি

ঐতিহাসিক ফারুকীর মতে, শাহজাহানের অসুস্থতার আগেই আগ্রায় ঔরঙ্গজেব ও সুজা গোপনে দারার বিরুদ্ধে চুক্তিবদ্ধ হন। আলমগীরনামার লেখকের মতে, দারার প্রতি শাহজাহানের পক্ষপাতিত্ব দেখে এই দুই ভাই নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে চুক্তি করেন। এই চুক্তিকে বলবৎ করার জন্য ঔরঙ্গজেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র মহম্মদের সঙ্গে সুজার কন্যার বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়।

উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় বিবাহ সম্পর্ক স্থির

আদাব-ই-আলম গিরির মতে, শাহজাহান এই পরিকল্পিত বিবাহের কথা জানতে পেরে ঔরঙ্গজেবকে কঠোর তিরস্কার করে বিবাহ সম্পর্ক ভেঙে দিতে বলেন। কিন্তু ঔরঙ্গজেব নম্র অথচ দৃঢ়ভাবে এই কাজ করতে তাঁর অক্ষমতা জানান। শাহজাহান ক্রুদ্ধ হয়ে ঔরঙ্গজেবের হাত থেকে “আসীরের” জায়গীর কেড়ে নেন।

সিংহাসনে ঔরঙ্গজেবের যোগ্যতা

  • (১) শাহজাহানের তৃতীয় পুত্র ঔরঙ্গজেব ছিলেন ধর্মপ্রাণ সুন্নী। ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদের মতে, শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে যোগ্যতায় তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ। দারার মত তিনি ধর্মসহিষ্ণুতা নীতিতে আস্থাশীল ছিলেন না।
  • (২) ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার বলেছেন যে, মৌলানা আহমদ শিরহিন্দী যে মৌলবাদী সুন্নী তত্ত্বের প্রচার করেন ঔরঙ্গজেব তার অনুরাগী হন। সম্ভবত ঔরঙ্গজেবের বাস্তব বুদ্ধি ও দূরদর্শিতা তাকে এই শিক্ষা দেয় যে, দারার ধর্মসহিষ্ণুতার জন্য হিন্দু ও উদার মুসলিম সেনাপতিরা তাঁর পক্ষ নেবেন।
  • (৩) ঔরঙ্গজেবকে দারার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে মৌলবাদী, সুন্নী পন্থীদের সাহায্য লাভ ছাড়া উপায় ছিল না। New Cambridge History of India-র লেখক জন রিচার্ডসের মতে শাহজাহানের রাজত্বকালে নক্সাবন্দী সুফীসন্ত খাজা বাকী বিল্লাহ এবং শিরহিন্দের মৌলনা শেখ আহমদ শিরহিন্দী ও তাঁর শিষ্যগণ মৌলবাদী মত প্রচার করেন।
  • (৪) তাঁরা আকবরের ধর্ম সমন্বয় নীতির নিন্দা করেন। শাহজাহানের দরবারের বহু মুসলিম অভিজাত এই মৌলবাদী মতকে সমর্থন করতেন। তারা ঔরঙ্গজেবের সিংহাসনের দাবীকে সমর্থন করেন।
  • (৪) জাহিরুদ্দিন ফারুকী নামে এক গবেষক সম্প্রতি এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তাঁর মতে, অভিজাতরা যেমন দারাকে সিংহাসনে বসিয়ে তাঁর ধর্মসহিষ্ণুতার দ্বারা তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেন, “ঔরঙ্গজেব দারার নীতির বিকল্প হিসেবে সুন্নী মুসলিমদের সমর্থন জানান”।
  • (৫) ঔরঙ্গজেব তাঁর গোটা জীবন সামরিক শিবিরে অথবা সুবাদারিক কাজে কাটান। হাতে-কলমে রাজ্য শাসনের কাজ, যুদ্ধ পরিচালনার কাজ তার মত কেউ জানত না। ডঃ ঈশ্বরীপ্রসাদ “ঔরঙ্গজেবকে প্রতারণার শিল্পকলায় অভিজ্ঞ” বলেছেন (Master in the art of dissimulation)।
  • (৬) ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদের এই মতের সমর্থন প্রত্যক্ষদর্শী ইউরোপীয় লেখক মানুচির রচনায় পাওয়া যায়। তিনি বলেন যে ঔরঙ্গজেব শাহজাহানের জীবিতকালেই সব কাজ গোপনে করতে ভালবাসতেন এবং তাঁর উদ্দেশ্য সর্বদা গোপন রাখতেন। তিনি সর্বদা ব্যস্ত থাকতেন তাঁর নিজ পরিকল্পনার জন্য।
  • (৭) তিনি নিজেকে “মুসলিম ফকীর” হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি ভান করতেন যে তিনি সারা জীবন প্রার্থনা ও তপস্যাতেই কাটাতে ইচ্ছুক। কিন্তু তার মত ঘোর বিষয়ী লোক দেখা যায় না। ঔরঙ্গজেব ব্যক্তিগত জীবনে নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর ধর্মীয় নিষ্ঠাকে তিনি সিংহাসন লাভের জন্য কাজে লাগান বলে অনেকে মনে করেন।

ঔরঙ্গজেবের প্রতি শাহজাহানের নিষ্ঠুরতা

  • (১) অধুনা গবেষকরা অন্য মত পোষণ করেন। দারার প্রতি অন্ধস্নেহের জন্য শাহজাহান ঔরঙ্গজেবের প্রতি আদপেই নায্য ব্যবহার করেন নি। আদাব-ই-আলমগীরী থেকে শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেবের মধ্যে যে পত্রালাপের বিবরণ পাওয়া যায় তাতে ঔরঙ্গজেবের প্রতি শাহজাহানের নিষ্ঠুরতার বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায়।
  • (২) ঔরঙ্গজেব যখন মুলতানে সুবাদার ছিলেন তখন তিনি অর্থ কষ্টে পড়ে সম্রাটের সাহায্য ভিক্ষা করলে শাহজাহান তাকে নিরাশ করে ভর্ৎসনা করেন।
  • (৩) ঔরঙ্গজেব কান্দাহার দুর্গ দখলে ব্যর্থ হলে শাহজাহান তাকে এই অভিযানের দায়িত্ব হতে দ্রুত অব্যাহতি দেন। অপমানিত ঔরঙ্গজেব দুর্গ দখলের জন্য কিছু সময় ভিক্ষা করলে শাহজাহান জানান যে, “জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলেন, অপদার্থ ব্যক্তিকে পুনরায় দায়িত্বভার দেওয়া নিষ্ফল।” অথচ ঔরঙ্গজেবের পর দারা কান্দাহার অভিযানে ব্যর্থ হলে সম্রাট রোষ প্রকাশ করেন নি।
  • (৪) কান্দাহার থেকে ঔরঙ্গজেব রাজধানীতে ফিরে মাত্র ১০ দিন থাকতে পারেন। তাঁকে তৎক্ষণাৎ দক্ষিণে যেতে আদেশ দেওয়া হয়। ঔরঙ্গজেব জানান যে, তাঁর পরিবারবর্গ মুলতানে আছেন তিনি তাদের নিতে চান। সম্রাট তাকে সে সময় দেন নি। ফলে ঔরঙ্গজেব পিতার আদেশ শিরোধার্য করে দক্ষিণ যাত্রা করেন এবং পরে তার পরিবারের লোকেরা তাঁর সঙ্গে যোগ দেন।
  • (৫) এই সময় বর্ষা ও বন্যা চলছিল। চম্বল নদী পার হতে ঔরঙ্গজেবের কিছু বিলম্ব হলে শাহজাহান তাঁকে ভর্ৎসনা করে পত্র লেখেন। অথচ দক্ষিণে দ্রুত যাওয়ার মত কোনো জরুরী ব্যবস্থা ছিল না।
  • (৬) ঔরঙ্গজেব অভিমান প্রকাশ করে ভগিনী জাহানারাকে লেখেন যে, “সম্রাটের এই অনুগত ভৃত্য সর্বদাই তাঁর ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব কত পালন করে থাকে।
  • (৭) বুরহানপুরে “বাদশা-পসন্দ” নামে একটি বিশেষ আমের গাছের আম শাহজাহান পছন্দ করতেন। ঔরঙ্গজের এই গাছের আম যোগাড় করে দিল্লীতে পাঠান। কিন্তু আমের সংখ্যা কম হওয়াতে, সম্রাট পুত্রকে ভর্ৎসনা করে বলেন যে, ঔরঙ্গজেব এই আম কিছু নিয়েছেন।
  • (৮) অপমানিত, হতাশাগ্রস্ত ঔরঙ্গজেব জাহানারাকে ১৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে লেখেন, “সম্রাট যদি চান যে তাঁর সকল কর্মচারীর মধ্যে, আমি একাই অপমান ও অবহেলায় কাটাতে বাধ্য থাকব, আমার তা মান্য করা ছাড়া পথ নেই।”
  • (৯) ঐতিহাসিক জন রিচার্ডসও বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে পিতা শাহজাহানের পুত্র ঔরঙ্গজেবের প্রতি অহেতুক কঠোরতা প্রদর্শনের কথা বলেছেন।

উত্তরাধিকার যুদ্ধের বিভিন্ন কারণ

উপরোক্ত তথ্যগুলি হতে প্রমাণ হয় যে, সিংহাসনের উত্তরাধিকারের যুদ্ধের জন্য যেমন মুঘল উত্তরাধিকারের প্রথা, দারার প্রতি শাহজাহানের পক্ষপাতিত্ব এবং ঔরঙ্গজেবের উচ্চাকাঙ্ক্ষা দায়ী ছিল, তেমনই দায়ী ছিল ঔরঙ্গজেবের প্রতি শাহজাহানের নিষ্ঠুর আচরণ।

উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ দরবারে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

  • (১) এর সঙ্গে হিন্দু ও মুসলিম অভিজাত গোষ্ঠীর ক্ষমতার লড়াই যুক্ত হয়। মূলত উত্তরাধিকারের যুদ্ধ মুঘল সিংহাসনের দখল নিয়ে ভ্রাতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত হলেও এর সঙ্গে জড়িত ছিল দরবারের দুই বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ।
  • (২) ৪ ভ্রাতার মধ্যে মুরাদ ও সুজা ছিলেন অপদার্থ। মূলত সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ ছিল দারা ও ঔরঙ্গজেবের মধ্যে। উভয় প্রার্থী দরবারের এক একটি গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে সিংহাসন অধিকারের চেষ্টা করেন।
  • (৩) দারা জানতেন যে, সম্রাটের দেহান্ত হলে তাকে ঔরঙ্গজেবের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য দরবারের হিন্দু ও উদারনৈতিক গোষ্ঠীর সমর্থন তিনি পান। এই গোষ্ঠী মনে করতেন যে, দারা সিংহাসনে বসলে তাদের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
  • (৪) অপরদিকে সুন্নী গোষ্ঠী ঔরঙ্গজেবকে সমর্থন করেন একই কারণে। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় ঔরঙ্গজেব ছিলেন তার ভ্রাতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিনি বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে সুদূর মধ্য এশিয়ায়, দক্ষিণে তার সেনাপতিত্ব এবং সংস্কার দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।
  • (৫) অন্য তিন ভ্রাতার মতই তিনিও ছিলেন বাদশা বেগম মমতাজমহলের পুত্র। শাহজাহানের উচিত ছিল ঔরঙ্গজেবের দাবীর কথা বিবেচনা করা এবং অপেক্ষাকৃত শাসনকার্যে অযোগ্য দারার প্রতি পক্ষপাত না দেখানো।

উত্তরাধিকার যুদ্ধে দারার দায়িত্ব

  • (১) উত্তরাধিকারের যুদ্ধ আরম্ভ করার জন্য দারার দায়িত্ব কম ছিল না। তিনি পিতার অসুস্থতার কারণে শাসনদণ্ড পরিচালনা করেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রদেশে ভ্রাতাদের কাছে রাজধানীর খবর এবং পিতার অসুস্থতার খবর যাতে না যায় তার ব্যবস্থা করেন।
  • (২) তিনি তাঁর ভ্রাতাদের রাজধানীতে পিতার কাছে আসার পথ রুদ্ধ করলে যুদ্ধ আরম্ভ হয়। অবশ্য দারার ভ্রাতাদের উচ্চকাঙ্খাও এজন্য কম দায়ী ছিল না।

উপসংহার :- শাহজাহানের অসুস্থতার কারণে মুঘল সাম্রাজ্য-এ উত্তরাধিকার যুদ্ধ শুরু হয়। ঔরঙ্গজেব তার তিন ভ্রাতা সুজা, মুরাদ ও দারাশিকো কে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

(FAQ) উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন মুঘল সম্রাটের আমলে উত্তরাধিকার যুদ্ধ শুরু হয়?

শাহজাহান।

২. উত্তরাধিকার যুদ্ধে কে জয়লাভ করেন?

ঔরঙ্গজেব।

৩. উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময়কাল কত?

১৬৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দ।

৪. ঔরঙ্গজেবের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল?

মহম্মদ।

Leave a Comment