অরবিন্দ ঘোষের ভবানী মন্দির গ্ৰন্থ প্রসঙ্গে ভবানী মন্দির পুস্তিকায় যুব সম্প্রদায়কে আহ্বান, ভবানী মন্দির পুস্তকে নবশক্তিতে বলীয়ান জাপানের দৃষ্টান্ত, ভবানীর আরাধনা, শক্তি সাধনার পীঠস্থান ভবানী মন্দির, কর্মীদল, ভবানী মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য, ধর্মীয় আদর্শ ও স্বাধীনতার জন্য কর্মপন্থা সম্পর্কে জানব
অরবিন্দ ঘোষের ভবানী মন্দির গ্ৰন্থ
ঐতিহাসিক গ্ৰন্থ | ভবানী মন্দির |
লেখক | অরবিন্দ ঘোষ |
প্রকাশ কাল | ১৯০৫ খ্রি: |
উদ্দেশ্য | কর্মীদল গঠন |
ভূমিকা :- অরবিন্দ ঘোষ রচিত ‘ভবানী মন্দির’ নামে পুস্তিকাটি ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত হয়। এতে বিপ্লবীদের লক্ষ্য, কার্যাদর্শ ও সাংগঠনিক ভিত্তি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
দেবী কালী বা শক্তির ভিন্ন নাম ভবানী
স্বামী বিবেকানন্দ-এর শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত ও নব জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলার যুব সম্প্রদায়ের আরাধ্যা দেবী কালী বা শক্তিরই ভিন্ন নাম ভবানী।
ভবানী মন্দির পুস্তিকায় যুব সম্প্রদায়কে আহ্বান
দেবী ভবানী শক্তিস্বরূপিনী, তাই এই পুস্তিকায় অরবিন্দ বাংলার যুব সম্প্রদায়কে আহ্বান করেছেন মানসিক, দৈহিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠবার জন্য।
অরবিন্দের ভবানী মন্দির পুস্তকে নবশক্তিতে বলীয়ান জাপানের দৃষ্টান্ত
প্রবল পরাক্রান্ত ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশ রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করে জাপান সেই শক্তিমত্তাই পৃথিবীর সম্মুখে প্রতিপন্ন করেছে। অতএব নবশক্তিতে বলীয়ান জাপানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করাই ভারতবাসীর কর্তব্য। কিন্তু বাঙালীর সেই শক্তি সাধনা কিভাবে সম্ভব, তাহার গূঢ় অর্থ কি, তাহার বাস্তব রূপ কি ?
ভবানী মন্দির পুস্তকে ভবানীর আরাধনা
- (১) বাঙলার শক্তি সাধনার ধর্মীয় আদর্শ রাজনীতিক স্বাধীনতার আদর্শের সাথে মিশে গিয়ে ভারতের নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদের মধ্যে নূতন রূপ ধারণ করেছে, এবং তা বাঙালী মধ্যশ্রেণীর স্বাধীনতা সংগ্রামের বৈপ্লবিক আদর্শে পরিণত হয়েছে।
- (২) তাই শক্তি-স্বরূপিনী ভবানীর আরাধনা হল মধ্যশ্রেণীর বৈপ্লবিক স্বাধীনতা-সংগ্রামের প্রেরণা ও শক্তির উৎস। সুতরাং স্বাধীনতা লাভের জন্য দেবী শক্তি (কালী) বা ভবানীর আরাধনা অপরিহার্য।
শক্তি সাধনার পীঠস্থান ভবানী মন্দির
মহারাষ্ট্রীয় নায়ক শিবাজির শক্তি সাধনার অনুকরণে গড়ে তুলিতে হবে শক্তি সাধনার এক পীঠস্থান – ভবানী মন্দির। এই মন্দির নির্মাণের স্থান হবে “আধুনিক শহরের দূষিত প্রভাব থেকে বহু দূরে, শান্তি ও শক্তি-সমন্বিত, উচ্চ পবিত্ৰ বায়ু প্রবাহিত নির্জন পার্বত্য অঞ্চলে।”
ভবানী মন্দিরকে কেন্দ্র করে গঠিত কর্মীদল
- (১) এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়িয়া উঠবে একটি দেশ হিতার্থে নিবেদিত প্রাণ কর্মিদল। পূর্ণ সন্ন্যাস গ্রহণ হবে তাদের ইচ্ছাধীন, কিন্তু তাদের ব্রহ্মচর্য পালন হবে বাধ্যতামূলক।
- (২) ব্ৰহ্মচর্য পালনের সময় স্বাধীনতার জন্য প্রত্যেকের উপর ন্যস্ত কর্তব্য প্রত্যেককে অবশ্যই পালন করতে হবে। এই কর্তব্য পালনের পরে তারা ইচ্ছা করলে গার্হস্থ্য জীবনে ফিরে যেতে পারে। এই কর্তব্য শেষ হবে দেশের স্বাধীনতা লাভে।
অরবিন্দ ঘোষের ভবানী মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
একটি সর্বত্যাগী ও দেশ হিতার্থে নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিক “সন্ন্যাসী” বা কর্মিদল গঠন করাই ‘ভবানী মন্দির’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য।
ভবানী মন্দিরে সংগ্ৰামের ধর্মীয় আদর্শ
অরবিন্দের ভবানী মন্দির-এ স্বাধীনতা সংগ্রামের ধর্মীয় আদর্শ তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে বৈপ্লবিক সংগ্রামের একটি সাংগঠনিক আদর্শও দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার বিপ্লবীদের (এনার্কিস্টদের) সংগঠন ও নিয়ম-কানুনই বাংলার বিপ্লবীদের সাংগঠনিক আদর্শ ‘ও পন্থা বলে গৃহীত হয়েছে।
ঐতিহাসিক ভবানী মন্দির পুস্তকে স্বাধীনতার জন্য কর্মপন্থা
অরবিন্দ তাঁর এই পুস্তিকায় স্বাধীনতার জন্য রাজনীতিক কর্মপন্থা হিসাবে নরহত্যা ও ডাকাতি সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত করেন নি। পরবর্তীকালে সমিতির সংগঠনের মধ্যে এই পুস্তিকার ধর্মীয় ও সাংগঠনিক আদর্শ বহুলাংশে গৃহীত হয় এবং তার সাথে রাজনীতিক নরহত্যা ও ডাকাতির পস্থা সংযোজিত হয়।
ভবানী মন্দির সম্পর্কে সিডিসন কমিটির মত
‘সিডিসন কমিটি’র মতে, ‘ভবানী-মন্দির’-এ ধর্ম সম্পর্কে বহু আলোচনার সাথে রাশিয়ার বৈপ্লবিক আদর্শ ও পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে। ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দের পর সমিতি ও সঙ্ঘগুলি ‘ভবানী-মন্দির’ পুস্তিকায় আলোচিত ‘শপথ’ ও ‘প্রতিজ্ঞা’ সমূহ ব্যতীত অন্য সকল ধর্মীয় ভাবধারা ত্যাগ করে এবং ডাকাতি, নরহত্যা প্রভৃতি সন্ত্রাসবাদের আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি যোগ করে নেয়।
উপসংহার :- অরবিন্দের প্রস্তাবিত ভবানীর মন্দির কোনোদিনই প্রতিষ্ঠিত হয় নি। শুনা যায়, এই মন্দির প্রতিষ্ঠার ভার দেওয়া হয়েছিল বারীন্দ্রর উপর। বারীন্দ্র বহু অনুসন্ধান করে বিহার প্রদেশের কোনো এক পাহাড়ের উপর একটি স্থান মনোনীত করেন। কিন্তু ইহার পর তিনি কলিকাতায় ফিরে এসে সমিতির কার্যে এমনভাবে জড়িত হয়ে পড়েন যে, মন্দির-প্রতিষ্ঠার কার্য আরম্ভ করা আর সম্ভব হয় নাই।
(FAQ) অরবিন্দ ঘোষের ভবানী মন্দির গ্ৰন্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
অরবিন্দ ঘোষ
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
বারীন্দ্র ঘোষ