ঔরঙ্গজেবের চরিত্র ও কৃতিত্ব প্রসঙ্গে সকল প্রকার দোষ মুক্ত পুরুষ ঔরঙ্গজেব, ব্যক্তি ঔরঙ্গজেব, টুপি সেলাই ও কোরান নকল, রাজকীয় পোশাকে দরবেশ, বিদ্যোৎসাহিতা, অসাধারণ পাণ্ডিত্য, শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা, শিল্প স্থাপত্যের নিন্দা, ব্যর্থ শাসক, অদূরদর্শিতা ও তার অতিরিক্ত কেন্দ্রিকরণ সম্পর্কে জানবো।
ঔরঙ্গজেবের চরিত্র ও কৃতিত্ব (Character and Achievements of Aurangzeb)
বিষয় | ঔরঙ্গজেবের চরিত্র ও কৃতিত্ব |
রাজত্বকাল | ১৬৫৮-১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ |
পূর্বসূরি | শাহজাহান |
উত্তরসূরি | প্রথম বাহাদুর শাহ |
মৃত্যু | ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- ভারত ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত পুরুষ ঔরঙ্গজেব অসাধারণ চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সর্বদাই উন্নত নৈতিক আদর্শে পরিচালিত হত।
সকল প্রকার দোষ মুক্ত পুরুষ
তিনি সমকালীন সকল প্রকার চারিত্রিক দুর্বলতা, পাপ, অনৈতিক কার্যকলাপ ও অবক্ষয় থেকে মুক্ত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন
তিনি নিরামিষাশী ছিলেন। মদ্যপান বা অন্য কোনও বিলাসিতা তাঁর ছিল না। শাস্ত্রানুমোদিত চার পত্নী ছাড়া অপর কোনও নারীর সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না।
টুপি সেলাই ও কোরান নকল
রাজকোষের অর্থ নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যয়কে তিনি ‘হারাম’ বলে মনে করতেন। ব্যক্তিগত ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি টুপি সেলাই ও কোরান নকল করে আমির-ওমরাহদের মধ্যে বিক্রি করতেন।
রাজকীয় পোশাকে দরবেশ
তিনি এমনই অনাড়ম্বর, ধার্মিক ও ত্রুটিহীন জীবনযাপন করতেন যে, সমসাময়িকেরা তাঁকে ‘রাজকীয় পোশাকে আবৃত একজন দরবেশ’ বলে অভিহিত করতেন।
তৈমুর বংশের চিরায়ত ধারা অনুসরণ
তিনি বৃদ্ধ পিতাকে বন্দি করে ও ভ্রাতাদের হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এর জন্য তাঁকে দায়ী করা যায় না, কারণ এই বিষয়ে তিনি তৈমুর বংশের চিরাচরিত ধারাকেই অনুসরণ করেছিলেন মাত্র।
বিদ্যোৎসাহিতা
বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি আরবি আইন ও পারসিক সাহিত্য গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। হিন্দি ও তুর্কি ভাষায় তিনি সাবলীলভাবে কথাবার্তা বলতে পারতেন। ছয়টি ভাষায় তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। কোরান তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল। তাঁর হস্তলিপি ছিল অতি সুন্দর।
অসাধারণ পাণ্ডিত্য
তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম আইনের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘ফতোয়া-ই-আলমগীরী’ সংকলিত হয়। ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত হলেও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় তাঁর বিন্দুমাত্র আকর্ষণ ছিল না।
শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা
তাঁর আমলে দিল্লি, তট্টা, জৌনপুর ও শিয়ালকোট ইসলামিয় শাস্ত্র ও দর্শন-চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। শিক্ষা-বিস্তার ও নিরক্ষরতা দূরীকরণেও তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিল। মেধা অনুসারে তিনি ছাত্রদের বৃত্তি দিতেন। তাঁর উদ্যোগে বেশ কিছু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিল্প-সংস্কৃতির নিন্দা
শিল্পকলা, ভাস্কর্য, সাহিত্য, সংগীত ও চিত্রশিল্পকে ইসলাম-বিরোধী বলে তিনি সাম্রাজ্য। থেকে নির্বাসিত করতে চেয়েছিলেন।
ব্যর্থ শাসক
সুদক্ষ সেনাপতি, সাহসী যোদ্ধা, সুকৌশলী কূটনীতিবিদ, চক্রান্ত কৌশলে অদ্বিতীয়, ন্যায় বিচার ও কর্তব্যকর্মে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং অসাধারণ পরিশ্রমী হওয়া সত্ত্বেও—ঐতিহাসিক স্মিথ-এর মতে, শাসক হিসেবে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিলেন।
সাম্রাজ্যের দৃঢ়তায় ফাটল
ঐস্লামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে তিনি হিন্দুদের বিরাগভাজন হন।তাদের বিদ্রোহের পথে ঠেলে দিয়ে জাতীয় সংহতি বিনষ্ট করেন এবং সাম্রাজ্যের দৃঢ় ভিত্তিমূলে ফাটল ধরান।
অদূরদর্শিতা
তাঁর অদূরদর্শিতা ও হঠকারিতার জন্যই সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ রাজপুতরা তাঁর শত্রুতে পরিণত হয় এবং কার্যত শিবাজির অভ্যুদয়ের পথকে তিনি সুগম করে দেন।
অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ
তিনি অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ পছন্দ করতেন, প্রশাসন ও যুদ্ধের সকল ছোটখাট বিষয়গুলিও নিজে তত্ত্বাবধান করতেন এবং কর্মচারী—এমনকী নিজ পুত্রদেরও বিশ্বাস করতেন না।
আপন তত্ত্বাবধান
যুদ্ধের সকল বিষয় নিজ তত্ত্বাবধানে রাখার ফলে রাজকর্মচারীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার উদ্যম, ক্ষমতা ও দায়িত্ববোধ নষ্ট হয়ে যায়। তাঁরা ‘নির্জীব পুতুলে’ পরিণত হন।
বিচ্ছিন্নতাবাদ ও শৈথিল্য
যখন সম্রাট দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধে ব্যাপৃত, তখনও তাঁরা অসহায়ভাবে সম্রাটের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন। এর ফলে রাজধানীতে ও উত্তর ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও শৈথিল্য মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, যা রোধ করার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তাঁর অনুপস্থিতিতে দরবারের অভ্যন্তরে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে।
উপসংহার :- বিদেশি পর্যটক মানুচি-র মতে, “তিনি সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করেন। কারণ, তিনি ছিলেন প্রতিক্রিয়াশীল ও সংস্কারবিমুখ রাষ্ট্রবিদ।”
(FAQ) ঔরঙ্গজেবের চরিত্র ও কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের।
১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যে।
প্রথম বাহাদুর শাহ।