ভারতের অঙ্গরাজ্যের হাইকোর্ট -এর গঠন, বিচারপতিদের যোগ্যতা, নিয়োগ, কার্যকাল ও পদচ্যুতি, বদলি, মূল এলাকা, আপিল এলাকা, সাংবিধানিক ক্ষমতা, নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারির ক্ষমতা, আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা, মামলা অধিগ্ৰহণের ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ক্ষমতা, তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত ক্ষমতাক্ষমতা ও অন্যান্য ক্ষমতা সম্পর্কে জানবো।
ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের হাইকোর্ট প্রসঙ্গে বর্তমান ভারতে হাইকোর্টের সংখ্যা, হাইকোর্ট গঠন, হাইকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা, হাইকোর্টের বিচারপতিদের যোগ্যতা, বেতন, ভাতা ও কার্যকাল, হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ, হাইকোর্টের এলাকা, হাইকোর্টের মূল এলাকা, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হাইকোর্ট, কলকাতায় হাইকোর্টের প্রতিষ্ঠাকাল, হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি।
ভারতের অঙ্গরাজ্যের হাইকোর্ট
অধিক্ষেত্র | সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্য |
বিচারপতি | ১ জন প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য কয়েকজন সহ বিচারপতি |
বিচারপতিদের কার্যকাল | ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত |
ভূমিকা :- ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বিচার বিভাগের শীর্ষে হাইকোর্টের অবস্থান । হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট -এর চেয়ে বেশি প্রাচীন । সংবিধান অনুসারে ভারত -এর প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে।
দুই বা ততোধিক রাজ্যের একটি হাইকোর্ট
পার্লামেন্ট (সংসদ) আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক রাজ্যের এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য একটি হাইকোর্ট স্থাপন করতে পারে।
বর্তমানে ভারতে হাইকোর্টের সংখ্যা
ভারতের অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা 28 টি কিন্তু হাইকোর্টের সংখ্যা 25 টি । পশ্চিমবঙ্গ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট, জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য শ্রীনগর হাইকোর্ট এবং তামিলনাড়ু ও পন্ডিচেরীর জন্য মাদ্রাজ হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট গঠন
- (১) সুপ্রিম কোর্টের গঠন সম্পর্কে ভারতের সংবিধান -এর সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে। কিন্তু রাজ্যের হাইকোর্ট গুলিতে কতজন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হবে, সে বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
- (২) সংবিধানে বলা হয়েছে যে, একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে। তাই বিভিন্ন হাইকোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
- (৩) প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতি যতজন বিচারপতি প্রয়োজন মনে করবেন ততজন বিচারপতি হাইকোর্টে থাকবে (216 নং ধারা)।
হাইকোর্টের বিচারপতিদের যোগ্যতা
ভারতের হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন সেগুলি হল –
- (১) বিচারপতিকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
- (২) তাকে ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত যে কোনো বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে দশ বছর থাকতে হবে।
- (৩) অন্তত 10 বছর কোনো হাইকোর্ট কিংবা দুই বা ততোধিক এই ধরনের আদালতে একাদিক্রমে অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।
ভারতের হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ
- (১) রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন।
- (২) হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে নিয়োগ করেন।
- (৩) অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগের সময় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং রাজ্যপাল ছাড়াও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে নিয়োগ করেন।
হাইকোর্টের বিচারপতিদের কার্যকাল ও পদচ্যুতি
হাইকোর্টের বিচারকগণ ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের পদে বহাল থাকেন। কার্যকাল শেষ হবার পূর্বে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন অথবা তার মৃত্যু হলে বিচারকের আসন শূন্য হয়। অসৎ আচরণ বা অসামর্থ্যের জন্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতিদের পদচ্যুত করতে পারেন।
ভারতের হাইকোর্টের বিচারপতিদের বদলি
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এক রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিকে অন্য রাজ্যের হাইকোর্টে বদলি করতে পারেন।
হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা
ভারতের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ২৫০০০০ টাকা ও অন্যান্য বিচারপতিরা যথাক্রমে ২২৫০০০ টাকা বেতন ও অন্যান্য ভাতা পেয়ে থাকেন। বিচার সভা বাজেট অনুমােদন ব্যতিরেকে রাজ্যের সঞ্চিত তহবিল থেকে তাদের প্রাপ্ত অর্থ প্রদান করা হয়।
হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
ভারতীয় সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী যেরূপ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে , হাইকোর্টের ক্ষেত্রে কিন্তু সেরূপ করা হয়নি। হাইকোর্ট গুলির ক্ষমতা সাধারণত দুটি এলাকায় বিভক্ত। যথা – মূল এলাকা ও আপিল এলাকা ।
হাইকোর্টের মূল এলাকা
ভারতের হাইকোর্টের মূল এলাকার বিস্তার খুব উল্লেখযোগ্য নয়। প্রধানত রাজস্ব সংক্রান্ত সকল বিষয় মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত । অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানী মামলাকেও মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
হাইকোর্টের আপিল এলাকা
রাজ্য সীমানার মধ্যে হাইকোর্ট হল দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধীনস্থ জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।
হাইকোর্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা
দুটি প্রধান এলাকা ছাড়াও হাইকোর্ট গুলি সাংবিধানিক কিছু ক্ষমতাপ্রয়োগ করে। যেমন –
(১) হাইকোর্টের নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারির ক্ষমতা
হাইকোর্ট তার ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব পালন করে। এই উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ জারি করতে পারে।
(২) হাইকোর্টের আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা
হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করতে পারে এবং অসাংবিধানিক দায়ে যেকোন আইন কে বাতিল করতে পারে ।
(৩) হাইকোর্টের মামলা অধিগ্রহণের ক্ষমতা
সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এমন কোনো মামলা নিম্ন আদালত থেকে নিজের হাতে নেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে।
(৪) হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ক্ষমতা
হাইকোর্ট অধস্তন আদালত গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেপারে। জেলা জজের নিয়োগ, বদলি,পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে এবং জেলা আদালত–সহ অন্যান্য অধস্তন আদালতের কর্মচারীবৃন্দের নিয়োগ-পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে হাইকোর্ট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৫) হাইকোর্টের তত্বাবধান সংক্রান্ত ক্ষমতা
হাইকোর্ট নিজের এলাকার অধীন সামরিক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্যান্য আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল সমূহের তত্ত্বাবধান করতে পারে। এই ক্ষমতার দ্বারা হাইকোর্ট যে কোনো প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করার জন্য অধস্তন আদালতসমূহ কে নির্দেশ দিতে সক্ষম।
(৬) হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারির ক্ষমতা
হাইকোর্ট কোনাে মামলার চূড়ান্ত বিচার সাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ যথা ইনজাংশন ইত্যাদি জারি করতে পারে।
(৬) হাইকোর্টের অন্যান্য ক্ষমতা
উপরিক্ত ক্ষমতা গুলি ছাড়াও সুপ্রিমকোর্টের মতো হাইকোর্টও Court of Record হিসেবে কাজ করে। হাইকোর্ট নিজের অবমাননার জন্য অপরাধীদের শাস্তি দানের ব্যবস্থা করতে পারে।
উপসংহার :- অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে হাইকোর্টের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই আদালত প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি অঙ্গ।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “হাইকোর্ট” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) হাইকোর্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৬২ বছর।
শম্ভুনাথ পণ্ডিত।
২৫ টি।
১ জুলাই ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ।
১ জন প্রধান বিচারপতি ও তাঁর সাথে কয়েকজন অন্যান্য বিচারপতি।