পানিপথের যুদ্ধ প্রসঙ্গে, পানিপথের প্রথম যুদ্ধ, পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ ও পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে জানবো।
পানিপথের যুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | পানিপথের যুদ্ধ |
দেশ | ভারত |
স্থান | হরিয়ানার পানিপথ |
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ | ১৫২৬ খ্রি: |
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ | ১৫৫৬ খ্রি: |
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ | ১৭৬১ খ্রি: |
ভূমিকা :- ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের পানিপথ নামক স্থানে তিনটি বিখ্যাত যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল যে যুদ্ধগুলি ইতিহাসে পানিপথ যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই শহরটি ‘উইভিং সিটি অফ ইণ্ডিয়া’ নামে পরিচিত। ভারতের ইতিহাসে পাণিপথের তিনটি যুদ্ধ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ
- (১) দিল্লির শাসক ইব্রাহিম লোদী ছিলেন দাম্ভিক ও উদ্ধত প্রকৃতির মানুষ। ফলে আফগান অভিজাতরা ইব্রাহিম লোদীকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। পাঞ্জাবের আফগান শাসক দৌলত খাঁ মোগল নেতা বাবরকে ভারত আক্রমণের প্ররোচনা দেন।
- (২) ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে বাবর ভারত আক্রমণ করেন, কিন্তু দৌলত খাঁর সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে কাবুলে ফিরে যেতে বাধ্য হন। পর বৎসর পূর্ণশক্তি নিয়ে বাবর পুনরায় ভারত অভিযান করেন এবং দৌলত খাঁকে পরাজিত করে পাঞ্জাব দখল করেন। অতঃপর মোগলবাহিনী দিল্লির দিকে অগ্রসর হয়।
- (৩) দিল্লির অদূরে পানিপথের প্রান্তরে মোগল-আফগান বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয় (১৫২৬ খ্রি)। কুশলী নেতৃত্ব দ্বারা বাবর মাত্র বারো হাজার সৈন্যের সাহায্যে বিশাল আফগান বাহিনীকে পরাজিত করেন। যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী নিহত হন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ভারত ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তুর্কি-আফগানদের পরিবর্তে মুঘল বংশের শাসনের সূচনা ঘটে।
ভারতে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ
- (১) সিংহাসন আরোহণ কালে আকবর ছিলেন মাত্র তেরো বছরের কিশোর। তাই মোগলদের বিশ্বস্ত অনুচর ও পাঞ্জাবের শাসনকর্তা বৈরাম খাঁ তাঁর অভিভাবক নিযুক্ত হন। এই সময় মুঘল সাম্রাজ্য আগ্রা, দিল্লি ও পাঞ্জাবের ক্ষুদ্র অংশে সীমাবদ্ধ ছিল।
- (২) শের শাহ -এর আত্মীয় মহম্মদ আদিল শাহ পূর্ব ভারতে প্রভূত শক্তি সঞ্চয় করে দিল্লি দখলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। হুমায়ুন -এর আকস্মিক মৃত্যু আদিলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে। আদিল শাহ-এর মন্ত্রী হিমু সসৈন্যে অগ্রসর হয়ে আগ্রা, দিল্লি জয় করে নিজেকে স্বাধীন সুলতান রূপে ঘোষণা করেন। কিশোর আকবর তখন পাঞ্জাব সীমান্তে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত ছিলেন।
- (৩) ইতিমধ্যে বৈরাম খাঁ আকবরকে দিল্লির মোগল বাদশা বলে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। এখন বৈরাম খাঁ ও আকবর হিমুর বিরুদ্ধে সসৈন্যে অগ্রসর হন। পাণিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে (১৫৫৬ খ্রি) হিমুকে পরাজিত ও নিহত করে আকবর দিল্লি পুনরুদ্ধার করেন।
ইতিহাস বিখ্যাত পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ
- (১) পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ১৭৬১ সালের ১৪ ই জানুয়ারী, দিল্লি থেকে প্রায় ৬০ মাইল উত্তরে পানিপথে মারাঠা সাম্রাজ্য এবং আফগানিস্তান -এর আহমদ শাহ আব্দালির মধ্যে সংঘটিত হয়, যে আহমদ শাহ দুরানি নামেও পরিচিত।
- (২) এই যুদ্ধে ৬০-৭০ হাজার সৈন্য নিহত হয়, যেখানে আহত ও বন্দীদের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া যায়। যুদ্ধের পরের দিন প্রায় ৪০ হাজার মারাঠা বন্দীকে হত্যা করা হয়েছিল।
- (৩) পরাজয়ের পর মারাঠারা সব দিক দিয়ে পালিয়ে যায় এবং আফগান, মুঘল, রোহিলা এবং অযোধ্যার সৈন্যরা তাদের উপর পতিত হয় এবং সৈন্য ও বেসামরিক লোকদের লুণ্ঠন ও হত্যায় ব্যস্ত থাকে।
উপসংহার :- অর্জুন কাপুর, সঞ্জয় দত্ত এবং কৃতি স্যানন অভিনীত পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত ২০১৯ সালের ভারতীয় চলচ্চিত্র পানিপথ ছবিটি বেশ কয়েকটি বড় ঐতিহাসিক ভুলের সাথে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
(FAQ) পানিপথের যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১. পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কখন হয়?
১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে।
২. পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ কখন হয়?
১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে।
৩. পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ কখন হয়?
১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে।