জার্মান শুল্ক সংঘ জোলভেরাইন প্রতিষ্ঠা, পটভূমি, জার্মানির বাণিজ্যের অসুবিধা, প্রাশিয়ার উদ্যোগ, শুল্ক চুক্তির অন্তর্ভুক্ত, বাণিজ্যে লাভবান, সব রাজ্যের যোগদান, প্রধান উদ্দেশ্য, নীতি, জোলভেরাইন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব হিসেবে অর্থনৈতিক রূপান্তর, পুঁজির বিকাশ, ঐক্যবোধ বৃদ্ধি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন, জার্মান সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন, ম্যারিয়ট ও বাওরিং -এর মন্তব্য সম্পর্কে জানবো।
জার্মান শুল্ক সংঘ জোলভেরাইন
বিষয় | জোলভেরাইন |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ |
প্রতিষ্ঠাতা | অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন |
নেতৃত্ব | প্রাশিয়া |
উদ্দেশ্য | অবাধ বাণিজ্য |
পরিস্থিতি | জার্মানির ঐক্য আন্দোলন |
ভূমিকা:- জার্মানির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তথা ঐক্য আন্দোলনের পটভূমিকায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ছিল জোলভেরাইন নামক একটি শুল্ক সংঘ প্রতিষ্ঠা।
জোলভেরাইন প্রতিষ্ঠার পটভূমি
ফরাসি বিপ্লব -এর সময় থেকেই জার্মানি প্রায় ৩০০ টি ছােটোবড়াে রাজ্যে বিভক্ত ছিল। সেখানে বিদেশি শাসন বর্তমান ছিল এবং বিভিন্ন ধরনের আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক চালু ছিল। কেবল প্রাশিয়ার অধীন জার্মানিতে ৬৭ রকমের শুল্ক চালু ছিল। এই অসুবিধা দূর করার জন্যই ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে জোলভেরাইন প্রতিষ্ঠিত হয়।
জোলভেরাইনের প্রতিষ্ঠা
১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মান অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন-এর উদ্যোগে এবং প্রাশিয়ার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত জোলভেরাইন নামক শুল্ক সংঘ জার্মানির ঐক্য আন্দোলনের গতিকে সুদৃঢ় করে।
জোলভেরাইন প্রতিষ্ঠার পূর্বে জার্মানির ব্যবসা বাণিজ্যের অসুবিধা
পূর্বে বিভিন্ন জার্মান রাজ্যে নানা ধরনের এবং পৃথক পৃথক আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক প্রচলিত ছিল। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ও মাল চলাচলে নানা অসুবিধা দেখা দিত।
জোলভেরাইনের প্রতিষ্ঠায় প্রাশিয়ার উদ্যোগ
শুধুমাত্র প্রাশিয়াতেই ৬৭ রকমের শুল্ক প্রচলিত ছিল। তাই ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়া প্রথম এই শুল্ক সংঘ গঠন করে।
জোলভেরাইনের মাধ্যমে শুল্ক চুক্তির অন্তর্ভুক্ত
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উত্তর ও মধ্য জার্মানির সকল রাষ্ট্র এই শুল্ক চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়। ক্রমে দক্ষিণের ব্যাভেরিয়া সাক্সনি ও অন্যান্য রাষ্ট্রও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে মোট ১৭ টি রাষ্ট্র এর সঙ্গে যুক্ত ছিল।
জোলভেরাইনের মাধ্যমে বাণিজ্যে লাভবান
প্রতিবছর একবার করে শুল্ক সংঘের বৈঠক বসত। নবগঠিত এই শুল্ক সংঘে যোগদানকারী রাজ্যগুলি বিনাশুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে নিজের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চালাত। এর ফলে বাণিজ্যিক দিক থেকে তারা যথেষ্ট লাভবান হয়।
জার্মানির সব রাজ্যের জোলভেরাইনে যোগদান
১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অস্ট্রিয়া ব্যতীত জার্মানির সব রাজ্যই এই শুল্ক সংঘে যোগদান করে।
জোলভেরাইনের প্রধান উদ্দেশ্য
মূলত অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে জোলভেরাইন গঠিত হয়। তবে এর রাজনৈতিক গুরুত্বও ছিল।
জোলভেরাইনের নীতি
এই শুল্কো সংঘের নীতিগুলি ছিল সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একই হারে সীমান্ত শুল্ক ধার্য করা, শুল্ক থেকে আদায়ীকৃত অর্থ জনসংখ্যার অনুপাতে সদস্যদের মধ্যে বন্টন করা এবং অবাধ বাণিজ্যের প্রচলন করা।
জোলভেরাইনের গুরুত্ব
প্রাশিয়া তথা জার্মানির ইতিহাসে জোলভেরাইন শুল্ক সংঘ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন –
(১) জোলভেরাইনের মাধ্যমে জার্মানির অর্থনৈতিক রূপান্তর
জার্মানি এই প্রথম একটি অর্থনৈতিক ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হল এবং এর ফলে জার্মানির দ্রুত অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটে।
(২) জার্মানির পুঁজির বিকাশে জোলভেরাইনের অবদান
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হল, রেলপথের সম্প্রসারণ ঘটল, বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারিত হল, আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেল এবং পুঁজির বিকাশ ঘটল।
(৩) জার্মানির ঐক্যবোধ বৃদ্ধি জোলভেরাইনের ভূমিকা
জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদান ও যোগাযোগের ফলে তাদের মধ্যে ঐক্যবোধ বৃদ্ধি পায়।
(৩) রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জনে জোলভেরাইনের ভূমিকা
অর্থনৈতিক ঐক্য রাজনৈতিক ঐক্যের পথ প্রশস্ত করে এবং অর্থনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রাশিয়া জার্মানির রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন করে।
(৪) জার্মান সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপনে জোলভেরাইনের অবদান
এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত জার্মান সাম্রাজ্য-এর ভিত্তি স্থাপন করেছিল জোলভেরাইন।
(৫) জোলভেরাইন সম্পর্কে ম্যারিয়টের মন্তব্য
ঐতিহাসিক ম্যারিয়ট বলেন যে, জার্মানিকরণের প্রথম ধাপ হল জোলভেরাইন।
(৬) জোলভেরাইন সম্পর্কে বাওরিং – এর মন্তব্য
ব্রিটিশ লেখক ডঃ বাওরিং বলেন যে, জোলভেরাইন জার্মান জাতীয়তাবাদের ভাবধারাকে আশা ও কল্পনার স্তর থেকে প্রকৃত ও আবশ্যকীয় পর্যায়ে রূপান্তরিত করে।…..জার্মানির মানুষ জোলভেরাইনকে তাদের জার্মানিকরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করত।
উপসংহার:- অধ্যাপক হেজ (Hayes)-এর মতে, জোলভেরাইন হল জার্মানির রাজনৈতিক ঐক্যের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ।
(FAQ) জোলভেরাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জোলভেরাইন হল জার্মানির একটি আন্তঃশুল্ক সংঘ। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির রাজ্যগুলিকে নিয়ে প্রাশিয়ার নেতৃত্বে এটি গড়ে ওঠে। এই ব্যবস্থার উদ্যোক্তা ছিলেন জার্মান অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন।
জার্মান অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে।
প্রাশিয়ার নেতৃত্বে।
অবাধ বাণিজ্য।