প্রাচীন ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

প্রাচীন ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন প্রসঙ্গে ঋগ্‌বৈদিক যুগে নারীর গার্হস্থ্য জীবন, পরবর্তী বৈদিক যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন, মহাকাব্যের যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন, মৌর্য যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন, মৌর্য-পরবর্তী যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন, গুপ্ত যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ জীবন ও গুপ্ত পরবর্তী যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ জীবন সম্পর্কে জানবো।

ভারতে প্রাচীন যুগে নারীর গার্হস্থ্য জীবন প্রসঙ্গে ঋকবৈদিক যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন, ভারতে মহাকাব্যের যুগে নারীর গার্হস্থ্য জীবন, ভারতে মৌর্য যুগে নারীর গার্হস্থ্য জীবন ও গুপ্ত যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ জীবন সম্পর্কে জানব।

প্রাচীন ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রাচীন ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন
একাধিপত্যঋকবৈদিক যুগ
সামাজিক মর্যাদা হ্রাসপরবর্তী বৈদিক যুগ
বাল্যকালে অধীনপিতার
যৌবনে অধীনস্বামীর
বার্ধক্যে অধীনপুত্রের
প্রাচীন ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

ভূমিকা :- প্রাচীন ভারতীয় সমাজে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, প্রশাসনিক কাজে অংশগ্রহণ, সংস্কৃতিচর্চা প্রভৃতির সুযোগ পেত। তবে পরিবারের অন্দরমহলে গার্হস্থ্য জীবন পরিচালনা করাই ছিল তাদের প্রধান কর্তব্য। নারী যুগে যুগে নিষ্ঠার সঙ্গে তার এই সামাজিক কর্তব্য পালন করে গেছে।

ঋগ্‌বৈদিক যুগে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

ঋকবৈদিক যুগে নারী পরিবারের গার্হস্থ্যকর্ম পরিচালনায় একাধিপত্য ভোগ করতেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

  • (১) নারীই পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব সামলাতেন। গৃহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, উদ্যানের পরিচর্যা করা, দাসদাসীদের কাজের তদারকি করা, সংসারের দৈনিক ও বার্ষিক আয়ব্যয়ের হিসাব রাখা প্রভৃতি দায়িত্ব পরিবারের গৃহিণীকে পালন করতে হত।
  • (২) তিনবেলা গৃহদেবতার পুজো করা, ব্রত উদযাপন, উপবাস প্রভৃতি কাজ বিবাহিতা নারীকেই করতে হত।
  • (৩) নারী তাঁর স্বামীর পরিবারে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নির্দেশ মেনে চলতেন এবং তাঁদের সেবা করতেন।
  • (৪) বিশেষ প্রয়োজনে স্বামী বাড়ির বাইরে থাকলে স্ত্রীকে সংযত জীবনযাপন করতে হত।

পরবর্তী বৈদিক যুগে ভারতে গার্হস্থ্য জীবন

ঋগ্‌বৈদিক যুগে নারীর যেরূপ গার্হস্থ্য-ভূমিকা ছিল তা পরবর্তী বৈদিক যুগেও মোটামুটি অব্যাহত ছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

  • (১) এই যুগে সাধারণভাবে নারীর সামাজিক মর্যাদা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছিল। এর প্রভাব পড়েছিল নারীর পারিবারিক ও গার্হস্থ্য জীবনেও।
  • (২) ঐতরেয় ব্রাক্ষ্মণ-এ কন্যাকে পরিবারে পিতামাতার দুঃখের উৎস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার ‘মৈত্রায়নী সংহিতায় নারী, সুরা ও পাশাকে একই পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে।
  • (৩) বৌধায়ন ধর্মসূত্রে নারীর স্বাধীন সত্তাকে অস্বীকার করে বলা হয়েছে যে, নারী বাল্যে পিতার অধীনে, যৌবনে স্বামীর অধীনে এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকবে।
  • (৪) বৌধায়ন ধর্মসূত্রে আরও বলা হয়েছে যে, বন্ধ্যা স্ত্রীকে বিবাহের দশ বছর পর এবং কেবলমাত্র কন্যাসন্তানের জন্মদাত্রী স্ত্রীকে বিবাহের বারো বছরের মধ্যে পরিত্যাগ করা যাবে।

মহাকাব্যের যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

পরবর্তী মহাকাব্যের যুগ-এও গার্হস্থ্যকর্মে আবদ্ধ নারীর জীবনের উল্লেখ আছে। মহাভারতের বনপর্বে এই বিধান রয়েছে যে, যজ্ঞানুষ্ঠান, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, ব্রত, উপবাস ইত্যাদির দ্বারা নয়, কেবল স্বামী সেবার দ্বারা নারীরা স্বর্ণ লাভ করতে পারে।

মৌর্য যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

মৌর্য যুগে নারী গার্হস্থ্য পরিচালনার পাশাপাশি নৃত্য, সংগীত, হস্তশিল্পকর্ম প্রভৃতির চর্চাও করত। গৃহে আগত অতিথির সেবা-যত্ন করা নারীর প্রধান কর্তব্য ছিল। নারী গৃহকর্ম সম্পন্ন করার সাথে সাথে স্বামীর সঙ্গে যজ্ঞানুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করতেন। তবে পারিবারিক জীবনে নারীর অবস্থান নির্ধারণ করতে গিয়ে শাস্ত্রকার মনু বৌধায়ন ধর্মসূত্রের অনুসরণে নারীকে বাল্যে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীন বলে অভিহিত করেছেন।

মৌর্য-পরবর্তী যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

মৌর্য-পরবর্তী যুগে স্ত্রীকে গৃহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সংসারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়, স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির সেবা-যত্ন, দাসদাসীদের কাজের তদারকি প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করতে হত। মনু বলেছেন যে, স্ত্রীকে রক্ষার একমাত্র উপায় হল সর্বদা গার্হস্থ্য কর্মে নিযুক্ত রাখা।

গুপ্ত যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

  • (১) গুপ্ত যুগে পরিবারের অন্দরে কর্তৃত্বের দায়িত্ব ছিল গৃহকর্ত্রীর। গুপ্ত যুগের লেখক কালিদাস তাঁর অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকে উল্লেখ করেছেন যে, শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রাকালে মহর্ষি কন্ব তাকে গুরুজনদের সেবা করতে, দাসদাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে, স্বামী মেজাজ হারালেও তার প্রতি বাধ্য থাকতে উপদেশ দেন।
  • (২) বাংস্যায়ন উল্লেখ করেছেন যে, এই যুগের গৃহিণীদের পরিবারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, গবাদিপশুর দেখাশোনা, গুরুজনদের সেবা, স্বামীর বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়ন, ভৃত্যদের পরিচালনা, সুতো কাটা, কাপড় বোনা প্রভৃতি কাজ করতে হত। প্রতিদিনের সাংসারিক খরচের হিসেব রাখার জন্য নারীকে গণিতের প্রাথমিক জ্ঞান রাখার কথাও শাস্ত্রে বলা হয়েছে।

গুপ্ত-পরবর্তী যুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

গুপ্ত যুগের পর ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন মোটামুটি একই ধরনের ছিল। বিভিন্ন শাস্ত্রকারদের নানা সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে এই যুগে নারী গৃহের অন্দরে আরও বেশি করে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বহির্জগতের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন থেকে পরিবারের অন্দরমহলে গৃহের যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করা, পরিবারের গুরুজনদের সেবা করা, সন্তানের দেখাশোনা করা, গৃহদেবতার পুজো করা প্রভৃতিতে নিয়োজিত থেকেই নারীকে জীবন অতিবাহিত করতে হত।

পরবর্তী আদি মধ্যযুগে ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন

পরবর্তী আদি-মধ্য যুগে (৬৫০- ১২০০ খ্রি.) হিন্দু নারীদের পরিবারের অন্দরে বন্দি হওয়ার প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাইরের সমাজে তাদের যাতায়াত ও মেলামেশার অধিকার ছিল না। পতিব্রতা হয়ে স্বামীর দেখাশোনা করাই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল।

উপসংহার :- সুকুমারী ভট্টাচার্য লিখেছেন, “খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে একাদশ শতকের ভারতবর্ষ ছিল হিন্দু ভারতবর্ষ, যেখানে শূদ্র ও নারী ছিল একেবারে নীচতলার বাসিন্দা।”

(FAQ) প্রাচীন ভারতে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন যুগে নারীরা গার্হস্থ্য কর্ম পরিচালনায় একাধিক পত্র ভোগ করতেন?

ঋক বৈদিক যুগে।

২. কোন যুগে নারীর সামাজিক মর্যাদা যথেষ্ট হ্রাস পায়?

পরবর্তী বৈদিক যুগে।

৩. বাল্যকালে নারী কার অধীনে থাকতো?

পিতা।

৪. যৌবনে নারী কার অধীনে থাকতো?

স্বামী।

Leave a Comment