থিওসফিক্যাল সোসাইটি -র প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠা কাল, থিওসফি কথার অর্থ, ভারতে আগমন, ভারতে প্রধান কার্যালয়, উদ্দেশ্য, নিয়ম, অ্যানি বেসান্তের ভূমিকা, পত্রিকা প্রকাশ, শিক্ষাক্ষেত্রে উদ্দোগ, সীমাবদ্ধতা, অবদান ও ব্যর্থতা সম্পর্কে জানবো।
ধর্মীয় সংগঠন থিওসফিক্যাল সোসাইটি
বিষয় | থিওসফিক্যাল সোসাইটি |
প্রতিষ্ঠা কাল | ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ |
প্রতিষ্ঠাতা | হেলেনা ব্লাভাটস্কি ও কর্নেল এইচ. এস. ওলকট |
প্রধান কার্যালয় | মাদ্রাজের আদিয়ার |
ভূমিকা :- উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে আলাপ আলোচনার উদ্দেশ্যে যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছিল সেগুলির মধ্যে থিওসফিক্যাল সোসাইটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠা
হেলেনা ব্লাভাটস্কি ও কর্নেল এইচ. এস. ওলকট ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
থিওসফিক্যাল সোসাইটি কথার অর্থ
‘থিওসফি’ শব্দটি গ্রীক থিওসোফিয়া থেকে এসেছে। এই কথাটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত থিওস, যার অর্থ ঈশ্বর, দেবতা বা ঐশ্বরিক এবং সোফিয়া, যার অর্থ প্রজ্ঞা। তাই থিওসোফিয়াকে “দেবতাদের জ্ঞান” বা “ঐশ্বরিক জ্ঞান” হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির সদস্যদের ভারতে আগমন
১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে আর্য সমাজ -এর আমন্ত্রণে হেলেনা ব্লাভাটস্কি ও কর্নেল এইচ. এস. ওলকট ভারত -এ আসেন এবং ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের আদিয়ারে থিওসফিক্যাল সোসাইটির শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির প্রধান কার্যালয়
পরবর্তীতে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা মাদ্রাজের আদিয়ার-এ এই সোসাইটির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির উদ্দেশ্য
থিওসফিক্যাল সোসাইটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করা এবং প্রাচীন হিন্দুধর্ম ও ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরিত করে ভারতের সামাজিক সমস্যা ও রাজনৈতিক পরাধীনতার অবসান ঘটানো।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির নিয়ম
থিওসফিক্যাল সোসাইটির তিনটি নিয়ম হল –
- (১) জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ বা বর্ণের ভেদাভেদ ছাড়াই মানবতার সর্বজনীন ভ্রাতৃত্বের একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা।
- (২) তুলনামূলক ধর্ম, দর্শন এবং বিজ্ঞানের চর্চাকে উৎসাহিত করা।
- (৩) প্রকৃতির অব্যক্ত নিয়ম এবং মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতাগুলি অনুসন্ধান করা।
থিওসফিক্যাল সোসাইটিতে অ্যানি বেসান্তের ভূমিকা
- (১) ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমতী অ্যানি বেসান্ত থিওসফিক্যাল সোসাইটিতে যোগদান করলে এই প্রতিষ্ঠান খুবই জনপ্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
- (২) তাঁর উদ্যোগে থিওসফিক্যাল সোসাইটির ভারতীয়করণ ঘটে। এই সময় থেকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে এর শাখাপ্রশাখা স্থাপিত হয়।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির পত্রিকা প্রকাশ
এই সোসাইটির সদস্যরা ‘থিওসফি’ নামে একটি ইংরেজি পত্রিকাও প্রকাশ করতেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে থিওসফিক্যাল সোসাইটির উদ্দোগ
শ্রীমতী বেসান্ত বারাণসীতে ‘কেন্দ্রীয় হিন্দু বিদ্যালয়’ স্থাপন করেন। পরে মদনমোহন মালব্যের প্রচেষ্টায় তা ‘বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়’-এ রূপান্তরিত হয়। বেসান্ত স্ত্রীশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির সীমাবদ্ধতা
অবশ্য থিওসফিক্যাল সোসাইটির কার্যকলাপ সমাজের এলিট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সোসাইটির বিশেষ প্রভাব পড়েনি।
আধুনিক ভারতের বিকাশে থিওসফিক্যাল সোসাইটির গুরুত্ব
ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য না এলেও আধুনিক ভারতের বিকাশে এই প্রতিষ্ঠানের অবদান উল্লেখ্য। যেমন –
- (১) এতদিন খ্রিস্টান মিশনারি সম্প্রদায় ভারতীয় ধর্ম ও সভ্যতার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাচ্ছিল।
- (২) হিন্দুধর্ম ও ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী পাশ্চাত্য থিওসফিস্টরা হিন্দু ঐতিহ্যের পক্ষে প্রচারে নামলে ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।
- (৩) কর্নেল ওলকটের উদ্যোগে ভারতীয় সভ্যতার সুপ্রাচীন ও গৌরবময় ঐতিহ্য চারিদিকে প্রচারিত হয়।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির অবদান
এই সোসাইটিরউল্লেখযোগ্য অবদান হল –
(১) হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থান
থিওসফিক্যাল সোসাইটির উদ্যোগে গড়ে ওঠা আন্দোলন হিন্দু ধর্মের নব উত্থানে সাহায্য করেছিল।
(২) ধর্মীয় বিশ্বাস
থিওসফিক্যাল আন্দোলন স্বদেশবাসীকে নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখতে সাহায্য করেছিল।
(৩) বিদেশি বিদ্বেষ হ্রাস
বেসান্ত বিদেশি সংস্কার (বন্দিশালার সংস্কার, হাসপাতালের রুগিদের সঙ্গ দান) – এর আদর্শ এদেশে প্রচলন করলে বিদেশিদের প্রতি ভারতীয়দের বিদ্বেষের ধারণা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়।
থিওসফিক্যাল সোসাইটির ব্যর্থতা
থিওসফিক্যাল সোসাইটির কার্যকলাপ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণগুলি হল –
(১) জনপ্রিয়তা হ্রাস
হিন্দু ধর্মের মূর্তি পূজা ও আচার অনুষ্ঠানকে সমর্থন করে থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রথম দিকে জনপ্রিয়তা পেলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
(২) নগর কেন্দ্রিক
থিওসফিক্যাল আন্দোলন মূলত পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মুষ্টিমেয় শহুরে ভারতীয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামীণ সাধারণ দরিদ্র ভারতীয়দের সঙ্গে এই আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।
(৩) হিন্দু ধর্ম কেন্দ্রিক
থিওসফিক্যাল আন্দোলন হিন্দু জাতীয়তাবাদ কেন্দ্রিক হওয়ায় ভারতের অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায় এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকে।
উপসংহার :- থিওসফিস্টরা হিন্দু ধর্ম ও ঐতিহ্যের পক্ষে প্রচারে নামলে ভারতীয়দের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। জওহরলাল নেহরু এই সংস্থাটির প্রশংসা করে তাঁর ‘ ডিসকভারি অবইন্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন, “থিওসফিক্যাল সোসাইটি ভারতীয় মধ্যবিত্ত হিন্দুদের মনে প্ৰবল আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে”।
(FAQ) থিওসফিক্যাল সোসাইটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
হেলেনা ব্লাভাটস্কি ও কর্নেল এইচ. এস. ওলকট।
১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে।
থিওসফি।