ভারতের রাজ্যসভা -র সদস্য, সদস্যদের নির্বাচনী যোগ্যতা, নির্বাচন পদ্ধতি, কার্যকালের মেয়াদ, সভার কার্য পরিচালনা, সভাপতির বেতন ও ভাতা, চেয়ারম্যান, সদস্যপদ, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ও রাজ্য অনুসারে সদস্যপদ, রাজ্যসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে জানবো।
ভারতের রাজ্যসভা প্রসঙ্গে রাজ্যসভার গঠন সম্পর্কে উল্লেখ, রাজ্যসভার সর্বাধিক সদস্য সংখ্যা, রাজ্যসভার বর্তমান সদস্য সংখ্যা, রাজ্যসভার সদস্যের নির্বাচনী যোগ্যতা, রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি, রাজ্যসভার কার্যকালের মেয়াদ, রাজ্যসভার সদস্যদের মেয়াদ, রাজ্যসভার সদস্যদের কার্য পরিচালনা, রাজ্যসভার বর্তমান স্পীকার, রাজ্যসভার সভাপতির বেতন ও ভাতা, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান, রাজ্যসভার প্রথম অধিবেশন, রাজ্যসভার সদস্যপদ, রাজ্যসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী।
ভারতের রাজ্যসভা
ধরণ | উচ্চকক্ষ |
কার্যকালের মেয়াদ | ৬ বছর |
আসন | ২৫০ (২৩৮ নির্বাচিত + ১২ জন মনোনীত) |
চেয়ারম্যান | বেঙ্কাইয়া নাইডু, এনডিএ (১১ আগস্ট ২০১৭ থেকে) |
বিরোধী নেতা | মল্লিকার্জুন খারগে, কংগ্রেস (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে) |
ভূমিকা :- ভারতীয় সংসদ -এর উচ্চকক্ষ হল রাজ্যসভা। এটি চিরস্থায়ী ও অধিকতর স্থায়ী কক্ষ। নির্দিষ্ট সময় অন্তর লোকসভার বিলুপ্তি ও পুনঃনির্বাচন ঘটে। কিন্তু রাজ্যসভা ভেঙে দেওয়া প্রায় অসম্ভব এবং অসাংবিধানিক।
রাজ্যসভার গঠন বিষয়ে উল্লেখ
ভারতের সংবিধান -এর ৮০ নং ধারায় রাজ্যসভার গঠন সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে।
রাজ্যসভার সর্বাধিক সদস্য সংখ্যা
রাজ্যসভার সর্বোচ্চ সদস্য বা কোরাম সংখ্যা ২৪৫। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সমাজসেবার ক্ষেত্র থেকে ১২ জন সদস্যকে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় নির্বাচিত করেন। এঁরা মনোনীত সদস্য বা কোরাম নামে পরিচিত। অন্যান্য সদস্যরা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা, বিধান পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হন।
রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচনী যােগ্যতা
রাজ্যসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে গেলে নির্বাচন প্রার্থীকে অবশ্যই –
- (১) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
- (২) অন্তত ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে।
- (৩) কোন কেন্দ্রের ভােটার হতে হবে।
- (৪) সরকারের কোনাে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা চলবে না।
- (৫) আদালত কর্তৃক উন্মাদ, দেউলিয়া এবং ভবঘুরে বলে ঘােষিত কোনাে ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না।
রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি
সংবিধানের ৮০ (৪) নং ধারা অনুসারে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য বা এম এল এ -দের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী দ্বারা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের একক হস্তান্তর যােগ্য ভোটে পরােক্ষভাবে রাজ্যসভার সদস্যগণ নির্বাচিত হন।
রাজ্যসভার কার্যকালের মেয়াদ
রাজ্যসভার সদস্য বা সাংসদদের কার্যকালের মেয়াদ ছয় বছর। প্রতি দুই বছর অন্তর সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ অবসর নেন।
রাজ্যসভার কার্য পরিচালনা
- (১) উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার সভা পরিচালনা করেন। পদাধিকারবলে তিনি হলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।
- (২) রাজ্যসভার সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
- (৩) রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করলে ডেপুটি চেয়ারম্যান সভার কাজ পরিচালনা করেন।
- (৪) রাজ্যসভা পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য (যাকে বলা হয় কোরাম) উপস্থিত থাকলে সভা পরিচালনা করা যায়। এই সংখ্যা হল রাজ্যসভার মােট সদস্য (২৫০) সংখ্যার এক দশমাংশ (১/১০ অংশ) সদস্যের উপস্থিতি।
- (৫) কোনাে কারণে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ ওই সময় শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার অন্য কোনাে সদস্যকে সভা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন।
রাজ্যসভার সভাপতির বেতন ও ভাতা
বর্তমানে রাজ্যসভার সভাপতি লোকসভার স্পিকারের মতােই মাসিক ১,২৫,০০০ টাকা বেতন ও অন্যান্য সুযােগসুবিধা এবং অবসরকালীন পেনশন পেয়ে থাকেন।
রাজ্যসভা ও লোকসভার সমান মর্যাদা
সংগ্ৰহ সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাজ্যসভা লোকসভার সমান মর্যাদা অধিকারী। সংগ্ৰহ সংক্রান্ত বিষয়ে লোকসভার ক্ষমতা রাজ্যসভার চেয়ে অধিকতর বেশি।
রাজ্যসভা ও লোকসভার বিরোধ সমাধান
কোনো বিষয় নিয়ে দুই কক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনের মাধ্যমে তা সমাধান করা হয়।
যৌথ অধিবেশনে লোকসভার গুরুত্ব
যৌথ অধিবেশনে লোকসভারই শক্তি বেশি থাকে। কারণ, লোকসভার আকার রাজ্যসভার প্রায় দশগুণ।
ভারতীয় সংসদে যৌথ অধিবেশনের সংখ্যা
এখনও পর্যন্ত সংসদে মাত্র তিনটি যৌথ অধিবেশন হয়েছে। শেষ যৌথ অধিবেশনটি বসেছিল ২০০২ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন পোটা পাস করানোর জন্য।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান
পদাধিকার বলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। তাঁর অনুপস্থিতিতে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান সভার দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করেন। ডেপুটি চেয়ারম্যান সদস্যদের মধ্যে থেকেই নির্বাচিত হন।
ভারতে রাজ্যসভার প্রথম অধিবেশন
ভারতবর্ষ -এ রাজ্যসভার প্রথম অধিবেশন বসেছিল ১৯৫২ সালের ১৩ মে।
রাজ্যসভার সদস্যপদ
রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা সর্বাধিক ২৫০ হতে পারে।
- (১) ২৩৮ জন রাজ্য বিধানসভা এবং যে সব কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা রয়েছে (শুধুমাত্র জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লি এবং পুদুচেরির বিধানসভা আছে) সেখানকার বিধানসভার সদস্যদের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।
- (২) রাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাতে রাজ্যসভার আসন বণ্টিত হয়। অন্য বারো জন সদস্যকে ভারতের রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অনুসারে রাজ্যসভার সদস্যপদ
ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অনুসারে রাজ্যসভার সদস্যপদ গুলি হল নিম্নরূপ –
- (১) দিল্লি – ৩
- (২) পুদুচেরী – ১
রাজ্য অনুসারে রাজ্যসভার সদস্যপদ
ভারতের রাজ্যগুলির রাজ্যসভার সদস্যপদ গুলি হল নিম্নরূপ –
- (১) অন্ধ্র প্রদেশ – ১১
- (২) অরুণাচল প্রদেশ – ১
- (৩) আসাম – ৭
- (৪) বিহার – ১৬
- (৫) ছত্তিশগড় – ৫
- (৬) গোয়া – ১
- (৭) গুজরাট – ১১
- (৮) হরিয়ানা – ৫
- (৯) হিমাচল প্রদেশ – ৩
- (১০) জম্মু ও কাশ্মীর – ৪
- (১১) ঝাড়খণ্ড – ৬
- (১২) কর্ণাটক – ১২
- (১৩) কেরালা – ৯
- (১৪) মধ্য প্রদেশ – ১১
- (১৫) মহারাষ্ট্র – ১৯
- (১৬) মণিপুর – ১
- (১৭) মেঘালয় – ১
- (১৮) মিজোরাম – ১
- (১৯) নাগাল্যান্ড – ১
- (২০) ওড়িশা – ১০
- (২১) পাঞ্জাব – ১
- (২২) রাজস্থান – ১০
- (২৩) সিকিম – ১
- (২৪) তামিল নাড়ু – ১৮
- (২৫) তেলেঙ্গানা – ৭
- (২৬) ত্রিপুরা – ১
- (২৭) উত্তর প্রদেশ – ৩১
- (২৮) উত্তরাখণ্ড – ৩
- (২৯) পশ্চিমবঙ্গ – ১৬
রাজ্যসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি
নিম্নলিখিত ভাবে ভারতের রাজ্যসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী পর্যালোচনা করা যেতে পারে। –
(১) সাধারণ বিল পাসের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা
রাজ্যসভা সাধারণ বিল অনুমােদনের ক্ষেত্রে লোকসভার সমান ক্ষমতা ভােগ করে। সাধারণ বিল লোকসভা এবং রাজ্যসভা যে-কোনাে কক্ষেই উত্থাপন করা যায়।
(২) অর্থ বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা
অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যসভার সংবিধানে বিশেষ কোনাে ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। রাজ্যসভায় বাজেট ও অর্থ বিল উত্থাপন করা যায় না। রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী লোকসভায় অর্থ বিল উত্থাপন করেন।
(৩) সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা
সংসদীয় শাসনব্যবস্থার রীতি অনুসারে সরকার গঠন, সরকারের কার্যকাল নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণে রাজ্যসভার প্রকৃত কোনাে ক্ষমতা নেই। তবুও রাজ্যসভা নানাভাবে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
(৪) সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা
রাজ্যসভা লোকসভার সঙ্গে সমানভাবে সংবিধান সংশােধনের ক্ষমতা ভােগ করে থাকে। উভয় কক্ষের সম্মতি ছাড়া সংবিধানের কোনাে অংশের সংশােধন করা সম্ভব নয়।
(৫) জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা
জরুরি অবস্থা ঘােষণার প্রস্তাব অনুমােদনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষই সমান ক্ষমতা ভােগ করে থাকে।
(৬) পার্লামেন্টের স্থায়ী কক্ষ হিসেবে রাজ্যসভার ভূমিকা
পার্লামেন্টের স্থায়ী কক্ষ হিসেবে পরিচিত রাজ্যসভা কখনােই ভেঙে দেওয়া যায় না। এদিক থেকে বিচার করলে রাজ্যসভার গুরুত্ব ও মর্যাদাকে কখনােই অস্বীকার করা যায় না।
(৭) রাজ্যসভার নির্বাচনমূলক ক্ষমতা
রাজ্যসভা এবং লোকসভা কতকগুলি ক্ষেত্রে সমান ক্ষমতা ভােগ করে। যেমন- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন।
(৮) রাজ্যসভার অপসারণের ক্ষমতা
রাজ্যসভার হাতে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর অপসারণের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে। যেমন – রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট -এর প্রধান বিচারপতি সহ অন্যান্য বিচারপতি, ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক প্রমুখ পদাধিকারীদের পদচ্যুতির ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা ভােগ করে থাকে।
উপসংহার :- ইংল্যান্ড -এর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডসভার মতাে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা একেবারেই ক্ষমতাহীন নয়, আবার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষ সিনেটের মতাে শক্তিশালীও নয়। ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ (রাজ্যসভা) উভয় দেশের উচ্চকক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত রয়েছে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভারতের রাজ্যসভা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) ভারতের রাজ্যসভা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
২৫০ টি।
উপরাষ্ট্রপতি।
ছয় বছর।
১৬ টি।
উপরাষ্ট্রপতি।
ছয় বছর।
২৫০ টি।