শাহজাহানের সিংহাসন লাভ

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সিংহাসন লাভ প্রসঙ্গে জন্ম ও শিক্ষা, মনসবে নিযুক্ত, বিবাহ, শাহজাহানের বিদ্রোহ, আসফ খানের চেষ্টা, ভ্রাতাদের হত্যা, জাহাঙ্গীরের মৃত্যু, শাহরিয়ার কে বন্দি, শাহজাহানের নামে খুতবা পাঠ ও শাহজাহানের সিংহাসনে আরোহন সম্পর্কে জানবো।

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সিংহাসন লাভ

ঐতিহাসিক ঘটনাশাহজাহানের সিংহাসন লাভ
সময়কাল১৬২৮ খ্রি
প্রকৃত নামখুররম
পূর্বসূরিজাহাঙ্গীর
উত্তরসূরিঔরঙ্গজেব
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সিংহাসন লাভ

ভূমিকা :- শাহজাহান ছিলেন জাহাঙ্গীরের রাজপুত পত্নী জগৎ গোসাই-এর গর্ভজাত পুত্র। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের তৃতীয় পুত্র এবং যোগ্যতার দিক থেকে ভ্রাতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

শাহজাহানের জন্ম ও শিক্ষা

১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। তার আদি নাম ছিল খুররম। বাল্যকালে তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। তিনি তার সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও মদ্যপানে অনাশক্তির জন্য প্রশংসা পান।

মনসবে নিযুক্ত শাহজাহান

তিনি ৮ হাজারী মনসবে নিযুক্ত হন এবং সাম্রাজ্য-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে হিসার-ফিরোজার জায়গীর লাভ করেন। জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের প্রধান যুদ্ধ-বিগ্রহগুলির অধিকাংশ তিনি পরিচালনা করেন।

শাহজাহানের বিবাহ

১৬১২ খ্রিস্টাব্দে আসফ খাঁর কন্যা আর্জুমান্দ বানু বেগমের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।

শাহজাহানের বিদ্রোহ

জাহাঙ্গীরের কনিষ্ঠ পুত্র শাহরিয়ারকে বেগম নূরজাহান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী রূপে নির্বাচিত করার চেষ্টা করায়, খুররমের সঙ্গে বিমাতা নূরজাহান ও পিতা জাহাঙ্গীরের বিরোধ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে খুররম বিদ্রোহ করেন এবং যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে দক্ষিণে পালিয়ে যান।

আসফ খাঁ কর্তৃক শাহজাহানের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা

জাহাঙ্গীরের দরবারের প্রভাবশালী অভিজাত এবং খুররমের শ্বশুর আসফ খাঁ এই সময় বুদ্ধিবলে খুররমের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করেন।

শাহজাহান কর্তৃক ভ্রাতাদের হত্যা

তাঁর সিংহাসন লাভকে নিস্কন্টক করার জন্য খুররম তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বন্দী খসরুর প্রাণনাশের চক্রান্তে জড়িত ছিলেন বলে লোকে সন্দেহ করত। এমনকি খুররম তাঁর ভ্রাতা পারভেজের হত্যার ব্যাপারেও জড়িত ছিলেন বলে লোকে মনে করত।

জাহাঙ্গীরের মৃত্যু

  • (১) ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হলে সিংহাসন লাভের জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর চক্রান্ত আরম্ভ হয়। এই সময় জাহাঙ্গীরের দুই পুত্র খুররম ও শাহরিয়ার জীবিত ছিলেন। খুররম ছিলেন সর্বাপেক্ষা যোগ্য। কিন্তু পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পর তিনি আগ্রা থেকে বহু দূরে দক্ষিণে থাকতেন।
  • (২) জাহাঙ্গীরের মৃত্যুকালে তিনি রাজধানীতে ছিলেন না। শাহরিয়ার অযোগ্য ও অপদার্থ হলেও তিনি ছিলেন নূরজাহানের জামাতা এবং বেগম তাঁর দাবী সমর্থন করেন। এমতাবস্থায় সিংহাসন লাভ করা সম্পর্কে খুররমের ভাগ্য অনিশ্চিত ছিল।

শাহজাহানের ভ্রাতা শাহরিয়ার

জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর নূরজাহানের সমর্থনে লাহোর দুর্গে শাহরিয়ার নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। এই সময় শাহরিয়ার এক প্রকার কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন। তিনি অভিজাতদের সমর্থন লাভের আশায় লাহোর দুর্গে রক্ষিত ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন।

শাহজাহান কর্তৃক বন্দী শাহরিয়ার

আসফ খাঁ শাহরিয়ারকে লাহোরের যুদ্ধে পরাস্ত করেন। তিনি সম্রাজ্ঞী নূরজাহান ও শাহরিয়ারকে লাহোর দুর্গে নজরবন্দী করেন।

মোঘল সিংহাসনে খসরুর পুত্র দাওয়ার বকস

আসফ খাঁ উপলব্ধি করেন যে, শাহজাহানের অনুপস্থিতির সময় রাজধানীতে সিংহাসন শূন্য রাখা ঠিক কাজ হবে না। সুতরাং তিনি মৃত খসরুর পুত্র দাওয়ার বকসকে সাময়িকভাবে সম্রাটের পদে বসিয়ে দেন।

শাহজাহানের নামে খুৎবা পাঠ

তিনি বাণারসী দাস নামে এক বিশ্বস্ত দূতকে দক্ষিণে পাঠিয়ে খুররমকে সত্বর রাজধানীতে আসতে পরামর্শ দেন। মহাবত খাঁ ও দেওয়ান আবুল হাসান আসফ খাঁর গোষ্ঠীতে যোগ দেন। আসফ খাঁ শাহজাহানের নামে খুৎবা পাঠ করেন।

শাহজাহানের দাবি নিষ্কণ্টক করা

আসফ খাঁ তাঁর জামাতা শাহজাহানের দাবী নিস্কন্টক করার জন্য শাহরিয়ার, দাওয়ার বক্‌স ও তাঁর ভ্রাতা এবং দানিয়ালের পুত্রদের নিহত করেন। কারও কারও মতে দাওয়ার বকস পারস্যে পালান।

শাহজাহানের সিংহাসন লাভ

১৬২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে জানুয়ারি আত্মীয় পরিজনের রক্তে স্নান করে খুররম, শাহজাহান উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। অবশ্য সম্রাট জাহাঙ্গীর, খুররমের দাক্ষিণাত্য বিজয়ে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে শাহজাহান উপাধি দেন। খুররম সম্রাট হয়ে সেই উপাধিকেই গ্রহণ করেন।

উপসংহার :- শাহজাহান সিংহাসন লাভ করার জন্য যে হত্যাকাণ্ড করেন তা খুব খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে। তাঁর জীবিতকালেই তার পুত্ররা সিংহাসন নিয়ে কলহবিবাদ ও হত্যাকাণ্ড চালায়। এজন্য তিনি নৈতিক দায়িত্ব এড়াতে পারেন নি।

(FAQ) মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সিংহাসন লাভ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শাহজাহানের নামে খুৎবা পাঠ করান কে?

আসফ খাঁ।

২. শাহজাহানের প্রকৃত নাম কি?

খুররম।

৩. খুররমকে শাহজাহান উপাধি প্রদান করেন কে?

জাহাঙ্গীর।

৪. শাহজাহান কবে সিংহাসনে আরোহণ করেন?

১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment