ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর বৈপ্লবিক ভূমিকা প্রসঙ্গে ভারতে পাঞ্জাবি সৈন্যদের অভ্যউত্থআন, বোম্বাইয়ে ব্রিটিশ সেনা নিয়োগ, সিঙ্গাপুরে শিখ সৈন্যদের সংগ্ৰাম, হাসিমুখে সৈন্যদের প্রাণ বিসর্জন, ভারতের গাড়োয়ালি সৈন্যদের সংগ্ৰাম, বিদ্রোহীদের প্রতি দেশীয় সৈন্যবাহিনীর সহানুভূতি, দেশীয় সৈন্যবাহিনীর নৌ বিদ্রোহ ও ব্রিটিশদের ভারত শাসনের ভার ত্যাগ সম্পর্কে জানবো।
ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর বৈপ্লবিক ভূমিকা
ঐতিহাসিক ঘটনা | ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর বৈপ্লবিক ভূমিকা |
মহাবিদ্রোহ | ১৮৫৭ খ্রি: |
পাঞ্জাবি সৈন্যদের সংগ্ৰাম | ১৯০৭ খ্রি: |
শিখ সৈন্যদের বিদ্রোহ | ১৯১৫ খ্রি: |
নৌ বিদ্রোহ | ১৯৪৬ খ্রি: |
ভূমিকা :- ভারত-এর বৈপ্লবিক সংগ্রামে দেশীয় নৌ বাহিনী এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। ১৮৫৭-৫৮ সালে মহাবিদ্রোহে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর বৈপ্লবিক ভূমিকা স্মরণ করে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীরা প্রথম থেকেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে দেশীয় সৈন্যবাহিনীকে বৈপ্লবিক সংগ্রামে যোগদানের জন্য অনুপ্রাণিত ও সংগঠিত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
ভারতে পাঞ্জাবি সৈন্যদের অভ্যুত্থান
পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯০৭ সালে পাঞ্জাবী সৈন্যগণ পাঞ্জাবের শ্রমিক-কৃষকের সাথে একযোগে অভ্যূত্থানের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।
বোম্বাইয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী নিয়োগ
বিপ্লবীদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ দেশীয় সৈন্যদের মনোভাব জেনেই ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী বোম্বাইয়ের শ্রমিকশ্রেণীর ১৯০৮ সালের ঐতিহাসিক রাজপথের যুদ্ধে দেশীয় সৈন্যদের নিয়োগ না করে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীকে নিয়োগ করেছিল।
সিঙ্গাপুরে শিখ সৈন্যদের সংগ্ৰাম
গদর-বিপ্লবীদের প্রচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯১৫ সালে সিঙ্গাপুরে অবস্থিত শিখসৈন্য বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করে সিঙ্গাপুর শহর অধিকার করেছিল এবং সাতদিন পর্যন্ত দখলে রেখেছিল।
হাসিমুখে সৈন্যদের প্রাণ বিসর্জন
ব্রহ্মদেশে অবস্থিত বালুচ ও অন্যান্য সৈন্যদলগুলিও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের আয়োজন করেছিল। ১৯১৫ সালে বিপ্লবীদের প্রচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঢাকায় অবস্থিত পাঞ্জাবী সৈন্যবাহিনী এবং বেনারস ক্যান্টনমেন্ট, পাঞ্জাব, দিল্লী প্রভৃতি স্থানে অবস্থিত দেশীয় সৈন্যদলগুলি অভ্যুত্থানের আয়োজন করেছিল এবং অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ায় বহু সৈন্য ফাঁসিকাষ্ঠে ও কামানের মুখে হাসিমুখে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল।
ভারতের গাড়োয়ালী সৈন্যদের ভূমিকা
১৯৩০ সালে পেশোয়ারে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রদের অভ্যুত্থান দমনের জন্ প্রেরিত গাড়োয়ালী সৈন্যগণ বিদ্রোহী শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণের আদেশ অগ্রাহ্য করে নিজেদের রাইফেলগুলি বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দিয়েছিল এবং হাসিমুখে কঠোর শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছিল।
বিদ্রোহীদের প্রতি দেশীয় সৈন্যবাহিনীর সহানুভূতি
সামন্তরাজ্যসমূহের শ্রমিক-কৃষক-জনসাধারণের প্রত্যেকটি বিদ্রোহে দেশীয় সৈন্যবাহিনী বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল বলেই এই সকল বিদ্রোহ দমনের জন্য ব্রিটিশ সৈন্য নিয়োগ করা হয়েছিল।
দেশীয় সৈন্যবাহিনীর নৌ বিদ্রোহ
- (১) সর্বশেষে ১৯৪৬ সালে দেশীয় সৈন্যবাহিনী বিশেষত ব্রিটিশ নৌ-বাহিনীর দেশীয় সৈন্যগণ শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের পন্থা অনুসরণ করে ভারতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছে।
- (২) ১৯৪৬ সালের নৌ-বিদ্রোহ ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সম্মুখে সংগ্রামের এক নূতন আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ভারতীয় সৈন্যবাহিনীও ভারতের বিপ্লবী জনসাধারণেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, ভারতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের এক যোগ্য অংশীদার।
ব্রিটিশদের ভারত শাসনের ভার ত্যাগ
প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৬ সালে শ্রমিক-কৃষকের বৈপ্লবিক সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় নৌ-বাহিনীর বিদ্রোহে, স্থল বাহিনীর বিদ্রোহে ও বিমান বাহিনীর বিদ্রোহে ভীত হয়েই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ আপদে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ-এর হাতে ভারত-শাসনের ভার ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ায়।
উপসংহার :- ভারতীয় সৈন্যবাহিনী প্রধানত কৃষক-সন্তানদের নিয়েই গঠিত। ভারতীয় সৈন্যবাহিনী তাই ভারতের শ্রমিক-কৃষকের বৈপ্লবিক সংগ্রামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশীদারের ভূমিকাই পালন করেছে।
(FAQ) ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর বৈপ্লবিক ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে।
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।