ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসন সংস্কার প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক উপাদান, ফিরোজ শাহের শাসন নীতি, নমনীয় নীতি, উদার ও সহনশীল নীতি, উজিরের সহায়তা, জনহিতৈষী রাজতন্ত্র, উদার নীতি প্রবর্তন, কঠোর দণ্ড প্রথা রদ ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উদ্যোগ সম্পর্কে জানবো।
ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসন সংস্কার
ঐতিহাসিক ঘটনা | ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসন সংস্কার |
সুলতান | ফিরোজ শাহ তুঘলক |
উজীর | মালিক মকবুল |
রাজতন্ত্র | জনহিতৈষী |
শাসন নীতি | উদার ও সহনশীল |
ভূমিকা :- ফিরোজ শাহের শাসনকাল আলাউদ্দিন খলজি ও মহম্মদ বিন তুঘলক অপেক্ষা একদিক থেকে স্বতন্ত্র চরিত্রের ছিল। এই দুই সুলতানের রাজত্বকালে বৈদেশিক নীতি ছিল বিশেষ বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল।
ফিরোজ শাহের রাজত্বকাল সম্পর্কে ঐতিহাসিক উপাদান
শামস-ই-সিরাজ আফিফের রচনা তারিখ-ই-ফিরোজ শাহী ফিরোজ শাহের রাজত্বকাল সম্পর্কে মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদান। এছাড়া আইন-ই-মহরু, সিরাত-ই-ফিরোজ শাহী নামে সুলতানের স্মৃতিলিপি থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
সুলতান ফিরোজ শাহের শাসন নীতি
ফিরোজ তুঘলকের কোনো বৈদেশিক নীতি ছিল না বলা চলে। ফিরোজ কোনোরূপ রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করেন নি। তিনি সাম্রাজ্য-এর সীমান্তে স্থিতাবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। তাঁর শাসনকালের বৈশিষ্ট্য তাঁর আভ্যন্তরীণ নীতির মধ্যেই দেখা যায়।
ফিরোজ শাহ কর্তৃক নমনীয় নীতি অবলম্বন
মহম্মদের রাজত্বের শেষ দিকে যে বিদ্রোহ, মুসলিম কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ এবং উলেমাশ্রেণীর বিরোধিতা দেখা যায়, ফিরোজ তা প্রশমনের জন্য তাঁর সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। দমন নীতির পরিবর্তে নমনীয় নীতির দ্বারা তিনি এই শক্তিশালী গোষ্ঠীর আনুগত্য লাভের চেষ্টা করেন।
ফিরোজ শাহের উদার ও সহনশীল নীতি
মহম্মদের রাজত্বের শেষ দিকে তাঁর বিরুদ্ধে অভিজাত বিদ্রোহ এবং প্রজাবর্গের দুর্দশা ফিরোজ প্রত্যক্ষ করেন। তিনি তার উদার ও সহনশীল শাসন নীতির দ্বারা বিভিন্ন শ্রেণীর ক্ষোভ দূর করেন। প্রজাদের মঙ্গল তিনি প্রকৃতই কামনা করতেন।
সুলতান ফিরোজ শাহকে উজিরের সহায়তা
ফিরোজ নিজে দক্ষ শাসক না হলেও, তার উজীর খান-ই-জাহান-মকবুলের সহায়তায় দীর্ঘকাল ভালভাবে শাসনের কাজ চালান।
ফিরোজ শাহের জনহিতৈষী রাজতন্ত্র
জনকল্যাণ ও প্রজাহিতৈষণাকেই তিনি তার শাসন নীতির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। মহম্মদের যুগের প্রসারণশীল, সংস্কারবাদী স্বৈরতন্ত্রকে তিনি welfare monarchy বা জনহিতৈষী রাজতন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা করেন।
ফিরোজ শাহ কর্তৃক উদার নীতি প্রবর্তন
- (১) ফিরোজ সিংহাসনে বসার পর জানতে পারেন যে, ভূতপূর্ব সুলতানের আমলে বহু মালিক ও আমীর সরকারী অর্থ ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি। এই খাতে সরকারের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ছিল ২ কোটি টঙ্কা। তাছাড়া খাজা-ই-জাহান বহু অভিজাতকে সোনা, রূপা ও জহরত রাজকোষ থেকে দেন।
- (২) ফিরোজ উপলব্ধি করেন যে, এই সকল ঋণের অর্থ পুনরায় আদায় করা দুস্কর। মন্ত্রীদের পরামর্শে তিনি এই খাতে প্রাপ্য অর্থ দরবারে বিশেষ অনুষ্ঠানে মকুব করে দেন এবং ঋণের দলিলপত্র জলে ধুয়ে ফেলেন।
- (৪) ভূতপূর্ব সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের হাতে যে সকল ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হন, ফিরোজ তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেন। এজন্য তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।
সুলতান ফিরোজ শাহের উজীর মালিক মকবুল
- (১) খাজা-ই-জাহানের পতনের পর, ফিরোজ শাহ মালিক মকবুলকে খান-ই-জাহান বা উজীরের পদে বসিয়ে দেন। আফিফের মতে, এই উজীর ফিরোজের ঢিলেঢালা প্রশাসনকে দক্ষ হাতে ধরে রাখেন।
- (২) তিনি সরকারের আয় ও ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ১৩৬৯ খ্রীঃ এই উজীরের মৃত্যু হয়। যতদিন মালিক মকবুল জীবিত ছিলেন ফিরোজ তার ওপর একান্ত নির্ভর করতেন। মালিক মকবুলের মৃত্যুর পর তার অর্থদপ্তর ও প্রশাসন ভেঙে পড়তে থাকে।
ফিরোজ শাহ তুঘলক কর্তৃক কঠোর দণ্ড প্রথা রদ
মহম্মদ তুঘলকের আমলে অপরাধীদের অঙ্গচ্ছেদ প্রভৃতি দ্বারা যে সকল কঠোর দণ্ড দেওয়ার প্রথা চালু ছিল, ফিরোজ শাহ তা রহিত করেন। আফিফের মতে, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি অপরাধকে ফিরোজ ক্ষমা করতেন না। রাজনৈতিক কারণে অপরাধীদের তিনি দৈহিক শাস্তি নিষিদ্ধ করেন।
ফিরোজ শাহ কর্তৃক জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উদ্যোগ
সুলতান ফিরোজ শাহ জনপ্রিয়তা লাভের জন্য আরও কয়েকটি ব্যবস্থা নেন। তিনি কর্মচারী ও সেনাদের বেতন ও ভাতা বাড়ান। আলাউদ্দিনের আমল থেকে অভিজাতদের ওপর নজরদারী করার জন্য যে সকল গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়, তিনি তা রহিত করেন।
উপসংহার :- মহম্মদ উলেমা ও মৌলভীদের জন্য ধর্মীয় ভাতা রদ করেন। ফিরোজ এই সকল ভাতা পুনরায় চালু করেন। মসজিদ, মাদ্রাসা ও মক্তবে তিনি বহু নিষ্কর জমি দেন। এজন্য তাঁর খলিসা জমির পরিমাণ কমে যায়।
(FAQ) ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসন সংস্কার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মালিক মকবুল।
ফিরোজ শাহ তুঘলক।
ফিরোজ শাহ তুঘলক।
ফিরোজ শাহ তুঘলক।