১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী পরিচালিত ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, পরিকল্পনা হীন আন্দোলন, সমন্বয়ের অভাব, কংগ্রেসের দায়িত্ব অস্বীকার, বিভিন্ন দলের অনৈক্য, কৌশলগত মতপার্থক্য, নিষ্ঠুর দমননীতি, গান্ধীজির অনুপস্থিতি, ভুল সময়ে আন্দোলন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রসঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা সম্পর্কে জানবো।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ |
সূচনা কাল | ৯ আগস্ট, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ |
প্রধান নেতা | মহাত্মা গান্ধী |
নেতাদের বন্দী | ৮ আগস্ট, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন বা আগস্ট আন্দোলন জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অতি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
জনগণের প্রবল উন্মাদনা এবং আন্দোলনের প্রবল ব্যাপকতা ও গভীরতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। আন্দোলনের ব্যর্থতার পশ্চাতে নানা কারণ ছিল। যেমন –
(১) নেতৃত্বের অভাব
জনসাধারণ ছিল সম্পূর্ণ নেতৃত্বহীন, তাদের কোন সংগঠন, পরিকল্পনা বা কর্মসূচি কিছুই ছিল না। আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ কারারুদ্ধ হন। জনসাধারণকে পরিচালিত করার জন্য কোনো নেতাই বাইরে ছিলেন না।
(২) পরিকল্পনাহীন আন্দোলন
গান্ধীজি আন্দোলনের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও দেন নি। মৌলানা আজাদ বলেন যে, আন্দোলনের পরিকল্পনা সম্পর্কে গান্ধীর কোন সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না।
(৩) সমন্বয়ের অভাব
বিদ্রোহী জনগণের মধ্যে কোনো প্রকার সমন্বয় ছিল না। তাই এক এক অঞ্চলে আন্দোলনের চেহারা ছিল এক এক রকম। জয়প্রকাশ নারায়ণ বলেন যে সমন্বয় ও সংগঠনের অভাবেই এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
(৪) কংগ্রেসের দায়িত্ব অস্বীকার
এক সময় কংগ্রেসও এই আন্দোলনের দায়িত্ব অস্বীকার করে। জওহরলাল নেহরু, প্যাটেল ও গোবিন্দবল্লভ পন্থ যৌথ বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করেন যে, কংগ্রেস বা গান্ধীজি সরকারিভাবে কোনো আন্দোলন শুরু করেন নি।
(৫) বিভিন্ন দলের মধ্যে অনৈক্য
ভারত -এর সব রাজনৈতিক দল ও মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলনে নামে নি। মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, হিন্দু মহাসভা, অনুন্নত সম্প্রদায়, লিবারাল ফেডারেশন, মানবেন্দ্র রায়ের রেডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রভৃতি দল ও গোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকায় এর ব্যর্থতা অনিবার্য ছিল।
(৬) কৌশলগত মত পার্থক্য
তেজ বাহাদুর সপ্রু ও আম্বেদকর -এর মতে এই আন্দোলন ছিল ‘অযৌক্তিক’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। জাতীয় কংগ্রেসও তখন ঐক্যবদ্ধ ছিল না। কৌশলগত প্রশ্নে মতপার্থক্য থাকায় কংগ্রেস তখন গান্ধীবাদী ও গান্ধী-বিরোধী গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
(৭) নিষ্ঠুর দমননীতি
সরকারের নিষ্ঠুর দমননীতি আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। বল্গাহীন অত্যাচার ও নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের মাধ্যমে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সরকার এই আন্দোলন দমন করে। ডঃ বিপান চন্দ্র বলেন যে, ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ -এর পর সরকারি দমননীতির এমন নিষ্ঠুর প্রকাশ আর কখনো দেখা যায় নি।
(৮) গান্ধীজির অনুপস্থিতি
অনেকের মতে গান্ধীজির অনুপস্থিতির জন্যই এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার অবশ্য মনে করেন যে, গান্ধীজি উপস্থিত থাকলেও এই আন্দোলন ব্যর্থ হত।
(৯) ভুল সময়ে আন্দোলন
ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী-র মতে আন্দোলনের ব্যর্থতার প্রধান কারণ আন্দোলনের কালানৌচিত্য (wrong timing)। তিনি বলেন যে, সুভাষচন্দ্র ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলন শুরু করতে বলেন, কিন্তু গান্ধীজি রাজি হন নি। যুদ্ধের সূচনায় ইংরেজদের অবস্থা ভাল ছিল না। তখন আন্দোলন শুরু করলে ফল অন্য রকম হত। কিন্তু ১৯৪২-এ ইংল্যান্ড -এর যুদ্ধ প্রচেষ্টা যখন সুসংহত, ভারতে দলে দলে মার্কিন সৈন্য যখন তার বল বৃদ্ধি করছে এবং যুদ্ধের গতি যখন পুরোপুরি ইংরেজদের অনুকূলে, তখন এক ভুল সময়ে গান্ধীজি আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিলেন। এর ফলে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(১০) ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা
আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য ১৯৪২-এর অক্টোবরে মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী অঞ্চলের প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা এবং ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের মনুষ্য সৃষ্ট মন্বন্তরকে (পঞ্চাশের মন্বন্তর) দায়ী করা হয়। এ সময় কেবলমাত্র তমলুক মহকুমায় ৫০% শস্যহানি হয় ৪০০০ মানুষ এবং ৭০,০০০ গবাদি পশু মারা যায়। এর পরে আসে দুর্ভিক্ষের আক্রমণ। বাংলায় বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর ফলে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
উপসংহার:- ব্যর্থতা সত্ত্বেও বলতে হয় গান্ধীজি পরিচালিত সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন গুলির মধ্যে ব্যাপকতা, বীরত্ব, সংগ্রামী মনোভাব এবং ত্যাগ ও তিতিক্ষার দিক থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল স্বীয় বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর।
(FAQ) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৯ আগস্ট, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে।
৮ আগস্ট, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে।
করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে।