মহাত্মা গান্ধীর এগারো দফা দাবি পেশ, সময়কাল, এগারো দফা দাবির প্রস্তাব সমূহ, গান্ধীজির উক্তি, অহিংস আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আইন অমান্য আন্দোলনের হুমকি, বড়লাটের প্রত্যুত্তর, গান্ধীজির ক্ষোভ, গান্ধীজির সমালোচনা হিসেবে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি নেই, জওহরলাল নেহেরুর মন্তব্য, রমেশচন্দ্র মজুমদারের অভিমত ও গান্ধীজির প্রশংসা সম্পর্কে জানবো।
মহাত্মা গান্ধীজির এগারো দফা দাবি
ঐতিহাসিক ঘটনা | গান্ধীজির এগারো দফা দাবি |
সময়কাল | ৩০ জানুয়ারি, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ |
পেশ করেন | মহাত্মা গান্ধী |
পত্রিকা | ইয়ং ইন্ডিয়া |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্ৰহণ করে। এরপর আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার পূর্বে গান্ধীজি ব্রিটিশ সরকারের কাছে কিছু আবেদন রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
মহাত্মা গান্ধীর এগারো দফা দাবি পেশ
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি ইয়ং ইণ্ডিয়া পত্রিকা মারফৎ গান্ধীজি সরকারের কাছে এগারো দফা সংস্কারের প্রস্তাব পেশ করেন।
এগারো দফা দাবির প্রস্তাব সমূহ
মহাত্মা গান্ধীর এগারো দফা দাবির প্রস্তাব গুলি হল –
- (১) সামগ্রিকভাবে মাদক বর্জন।
- (২) টাকার সঙ্গে পাউণ্ডের বিনিময় হারকে ১ শিলিং ৪ পেন্সে কমিয়ে আনা।
- (৩) ভূমি-রাজস্ব অন্তত ৫০ শতাংশ কমানো।
- (৪) লবণ কর বিলোপকরা।
- (৫) সামরিক ব্যয় অন্তত ৫০ শতাংশকমানো।
- (৬) উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বেতন ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হ্রাসকরা।
- (৭) বস্ত্রশিল্প রক্ষার জন্য বিদেশী বস্ত্রের ওপর শুল্ক আরোপকরা।
- (৮) উপকূল বাণিজ্য সংরক্ষণের জন্যআইন প্রবর্তনকরা।
- (৯) রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, মামলা ও দমনমূলক আইন প্রত্যাহার করা।
- (১০) গোয়েন্দা বিভাগ বিলোপ এবং
- (১১) আত্মরক্ষার্থে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার প্রদান প্রভৃতি।
মহাত্মা গান্ধীর উক্তি
গান্ধীজি বলেন যে, এই প্রস্তাবগুলি মানা হলে তিনি আইন অমান্য আন্দোলনের পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে নেবেন।
অহিংস আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
সরকার তাঁর কথায় কোন কর্ণপাত করলেন না। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই থেকে ১৬ই ফেব্রুয়ারি সবরমতী আশ্রমে কংগ্রেস কার্যনির্বাহক সমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন -এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনের হুমকি
২রা মার্চ পুনরায় গান্ধীজি বড়লাটকে জানান যে, গুজরাটের সমুদ্র উপকূলে ডাণ্ডি নামক স্থানে তিনি প্রকাশ্যে লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করবেন।
বড়লাটের প্রত্যুত্তর
সরকার যদি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত এগারো দফা সংস্কারের প্রস্তাব মেনে নেয়, তাহলে আন্দোলন স্থগিত থাকবে। প্রত্যুত্তরে বড়লাট গান্ধীজিকে কোন প্রকার আন্দোলন করা সম্পর্কে সতর্ক করে দেন।
গান্ধীজির ক্ষোভ
ক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত গান্ধীজি বড়লাটকে লেখেন যে, নতজানু হয়ে তিনি কেবলমাত্র এক টুকরো রুটি চেয়েছিলেন। তার বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন পাথর (“On bended knees, I asked for bread and received a stone instead.”)।
গান্ধীর সমালোচনা
বিভিন্ন ভাবে গান্ধীজি ও তার এগারো দফা দাবির সমালোচনা করা হয়।যেমন–
(১) পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি নেই
পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণের পর কেবলমাত্র কয়েকটি নামমাত্র শাসন সংস্কারের বিনিময়ে পূর্ণ স্বাধীনতার আদর্শ বিসর্জন দেওয়ার কোন সদুত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি এবং শাসন সংস্কারের প্রস্তাব চরমভাবে পরস্পর-বিরোধী।
(২) নেহরুর মন্তব্য
এই ব্যাপারে স্বয়ং জওহরলাল নেহরু বলেন, “যখন আমরা স্বাধীনতাই দাবি করছিলাম তখন এইভাবে সামাজিক ও আইনগত সংস্কারের তালিকা তৈরির কি দরকার ছিল বুঝি না। স্বাধীনতা বলতে আমরা যা বুঝি গান্ধীজি কি সত্যি তাই বুঝতেন, না আমরা স্বাধীনতার ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করেছি?”
(৩) রমেশচন্দ্র মজুমদারের অভিমত
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার ও গান্ধীজির সমালোচনা করে বলেন যে, ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে না নিলে যে গান্ধী গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করতে অস্বীকার করেন, তিনি কিভাবে কয়েকটি প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি মেনে নিলে আন্দোলন না করার কথা বলেন।
গান্ধীজির প্রশংসা
ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী অবশ্য এই ব্যাপারে গান্ধীজির ভূমিকার যথেষ্ট প্রশংসা করে বলেন যে, এগারো দফা চরমপত্র মারফৎ তিনি ধনী-বুর্জোয়া, কৃষক, বিপ্লবী, কমিউনিস্ট সর্বশ্রেণীর স্বার্থরক্ষা করে সর্বশ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
উপসংহার :- বড়লাটের নেতিবাচক উত্তর পাওয়ার পর আন্দোলন শুরু করা ভিন্ন গত্যন্তর ছিল না। এইভাবে সরকারি হটকারিতা গান্ধীজিকে আন্দোলনের পথে ঠেলে দিল।
(FAQ) মহাত্মা গান্ধীর এগারো দফা দাবি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মহাত্মা গান্ধী, ৩০ জানুয়ারি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে।
ইয়ং ইন্ডিয়া।
আইন অমান্য আন্দোলন।
মহাত্মা গান্ধী।