ভারত বিভাগের কারণ প্রসঙ্গে মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক স্বাতন্ত্র্যের মনোভাব, ব্রিটিশ সরকারের বিভেদমূলক নীতি, জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে কংগ্রেসের পদত্যাগ, ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব গ্ৰহণ ও ভারত বিভাগ সম্পর্কে জানবো।
ভারত বিভাগের কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | ভারত বিভাগের কারণ |
সময়কাল | ১৯৪৭ খ্রি: |
নতুন রাষ্ট্র | ভারত ও পাকিস্তান |
দ্বিজাতি তত্ত্ব | সৈয়দ আহমেদ খান |
মুসলিম লীগ | মহম্মদ আলি জিন্না |
ভূমিকা :- ১৯৪৭ সালে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ খণ্ডিত হয়। অখণ্ড ভারতবর্ষ বিভাজিত হয়ে সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র। এই বিভাগের পিছনে বিভিন্ন কারণ ছিল।
মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক স্বাতন্ত্র্যের মনোভাব
- (১) বহুদিন ধরেই ধীরে ধীরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক স্বাতন্ত্র্যের মনোভাব গড়ে ওঠে ভারত বিভাগ ও পাকিস্তানের সৃষ্টিই তার শেষ পরিণতি।
- (২) ওয়াহাবি আন্দোলন-এর সময় থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উপাদানে গঠিত মুসলিম লীগ ভারতের জাতীয় ঐক্যের উপর আঘাত দিতে শুরু করে। আলীগড় আন্দোলন-এর সময় সর্বপ্রথম দ্বিজাতি তত্ত্বের মতবাদ শক্তি সঞ্চয় করে। মুসলিম লীগ গঠনের পর এই মতবাদ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ব্রিটিশ সরকারের বিভেদমূলক নীতি
- (১) শাসকদের অনুসৃত বিভেদমূলক নীতি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে কাল্পনিক পার্থক্যকে বাস্তব পার্থক্যে পরিণত করে। ব্রিটিশ শাসকগণ প্রথম থেকে ভারতকে বহু জাতির দেশ ও বহু ধর্মের দেশরূপে ঘোষণা করে।
- (২) সমগ্র ভারতের প্রতিনিধিরূপে জাতীয় কংগ্রেসের দাবিকেও তারা কখনও স্বীকার করে নি। আলীগড় আন্দোলনের সময় থেকেই তারা মুসলিমদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করতে শুরু করে। সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা পদ্ধতি এই নীতির সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা
- (১) ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার ফলে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চল্লিশের দশকে মুসলিম লীগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সুযোগ লাভ করে।
- (২) জাতীয় কংগ্রেসের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাংলাদেশের কংগ্রেস শক্তিশালী মুসলিম রাজনৈতিক দল কৃষক প্রজা দলের সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে। ফলে কৃষক প্রজা দল মুসলিম লীগের সাথে যোগ দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালে পাঞ্জাবেও কংগ্রেস অনুরূপ ভুল করে।
- (৩) প্রকৃতপক্ষে জাতীয় কংগ্রেস কখনই খুব সক্রিয়ভাবে সাধারণ মুসলমানদের নিজেদের দলে আনার বা জাতীয় চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে নি। তাদের এই নীতির জন্য উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ মুসলিম লীগের হস্তগত হয়। মুষ্টিমেয় জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতার উপর আস্থা স্থাপন করা কংগ্রেসের অন্যতম মারাত্মক ভুল।
প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে কংগ্রেসের পদত্যাগ
- (১) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করাও জাতীয় কংগ্রেসের আর একটি ভুল সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জিন্নাহ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বিস্তারের সুযোগ লাভ করেন।
- (২) পাকিস্তানের দাবি উত্থাপনের জন্যও তিনি এই সময় বিশেষ সুযোগ লাভ করেন। ফলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আরও বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও বিদ্বেষের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশ ও পাঞ্জাবের হিন্দুগণও দেশ বিভাগের পক্ষপাতী হয়ে ওঠে।
ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব গ্ৰহণ
মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী দুর্বল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠন করে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয় দলই অত্যন্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে সম্মত হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের শাসনে মুসলিমদের রাজনৈতিক অধিকারের নিরাপত্তা একেবারেই অসম্ভব।
ভারত বিভাগ
সুতরাং এইরূপ পরিস্থিতির হাত থেকে পরিত্রাণ লাভের একমাত্র উপায় ভারত বিভাগ এবং মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন। ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দে এই বাস্তব সত্যকে স্বীকার করেই ভারত বিভাগের ব্যবস্থা করে।
উপসংহার :- Professor Percival Spear-এর মতে, “partition may be regarded in principle, it was perhaps necessary in the larger interest of the country.”
(FAQ) ভারত বিভাগের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
স্যার সৈয়দ আহমেদ খান।
বিংশ শতকের চল্লিশের দশকে।
মহম্মদ আলি জিন্না।
ভারত ও পাকিস্তান।