রাজাজি সূত্র বা সি. আর. ফর্মুলা -র পটভূমি হিসেবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্র প্রস্তুত, পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি, রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলা পেশ, রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলার প্রস্তাব সমূহ, রাজাজি সূত্রের ব্যর্থতা হিসেবে গান্ধী-জিন্না বৈঠক ব্যর্থ, বিকলাঙ্গ, কীটদগ্ধ পাকিস্তান, গণভোটে জিন্নার অসম্মতি ও আজাদের অভিমত সম্পর্কে জানবো।
রাজাজি সূত্র বা সি. আর. ফর্মুলা
ঐতিহাসিক ঘটনা | সি. আর. ফর্মুলা |
সময়কাল | মার্চ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ |
ঘোষণা | চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী |
উদ্দেশ্য | ভারত-এর অখণ্ডতা রক্ষা |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা:- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন -এর পর থেকে ঘটনা পরম্পরা অতি দ্রুত ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দেয় যে ভারতবাসীর হাতে শাসনক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এগিয়ে এসেছে।
সি. আর. ফর্মুলার প্রেক্ষাপট
রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলা বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ–
(১) ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্র প্রস্তুত
সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌবিদ্রোহ, মুসলিম লিগ -এর উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর পর ব্রিটেনের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে ব্রিটেনকে আমেরিকার চাপ প্রভৃতি ঘটনা ভারতীয়দের হাতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
(২) পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ও মুসলিম লিগের একমাত্র দাবি ছিল পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন। এই লক্ষ্যের বাস্তবায়নেই তাদের যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে থাকে।
রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলা
এই পরিস্থিতিতে ভারতকে দ্বিখণ্ডিত না করে, অথচ জিন্নার দাবি মোটামুটি মেনে নিয়ে গান্ধি-অনুগামী মাদ্রাজের চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এক সমাধানসূত্র প্রকাশ করেন (মার্চ, ১৯৪৪ খ্রি.) | তাঁর এই সমাধানসূত্র ‘রাজাজি সূত্র’ বা ‘সি. আর. ফর্মুলা’ নামে পরিচিত।
রাজাজি সূত্রের প্রস্তাবসমূহ
রাজাজি সূত্রে প্রধানত বলা হয়েছিল যে,
- (১) কংগ্রেসের স্বাধীনতার দাবিকে মুসলিম লিগ পূর্ণভাবে সমর্থন করবে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবে।
- (২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের অধিবাসীদের গণভোট গ্রহণ করে দেখা হবে যে তারা পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষপাতী কি না।
- (৩) গণভোট গ্রহণের আগে সব দলকে তাদের বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেওয়া হবে।
- (৪) মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মত দিলে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হবে। দেশভাগ হলেও প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য যেসব বিষয়ে উভয় অংশই সমানভাবে জড়িত, সেসব বিষয় যৌথভাবে পরিচালিত হবে।
- (৫) ব্রিটিশ সরকার ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে তবেই এইসব প্রস্তাব কার্যকরী হবে।
রাজাজি সূত্রের ব্যর্থতা
বিভিন্ন কারণে রাজাজি সূত্র ব্যর্থ হয়।যেমন –
(১) জিন্না-গান্ধী বৈঠক ব্যর্থ
গান্ধিজি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে জেল থেকে ছাড়া পান। এরপর তিনি রাজাজির প্রস্তাব অনুসারে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোম্বাইয়ে জিন্নার বাসগৃহে একুশবার বৈঠক করেন। কিন্তু এসব বৈঠক ব্যর্থ হয় এবং জিন্না রাজাজি সূত্র প্রত্যাখ্যান করেন।
(২) বিকলাঙ্গ, কীটদগ্ধ পাকিস্তান
জিন্নার মতে রাজাজি প্রস্তাবিত পাকিস্তান ছিল ‘পঙ্গু, বিকলাঙ্গ ও কীটদগ্ধ।
(৩) জিন্নার গণভোটে অসম্মতি
অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে গণভোট মানতে রাজি ছিলেন না, কারণ তাঁর কাছে গণভোটের অর্থ ছিল অমুসলিমদের হাতে মুসলিমদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য সমর্পণ করা।
আজাদের অভিমত
রাজাজির প্রস্তাবিত সূত্র নিয়ে জিন্নার সঙ্গে গান্ধিজি যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাকে মৌলানা আজাদ ‘মারাত্মক ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন।
উপসংহার:- জিন্না-গান্ধি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার ফলে জিন্না ও লিগের গুরুত্ব প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে, ভারতের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য সম্ভব নয়। ভারতের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ব্রিটিশ সরকারকেই করতে হবে।
(FAQ) সি. আর. ফর্মুলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী।
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে।
মহম্মদ আলি জিন্না।