পিথাগোরাস

পিথাগোরাস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন বিখ্যাত দার্শনিক ও গণিতবিদ, যিনি পিথাগোরাসের তত্ত্বের (পিথাগোরিয়ান থিওরেম) জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই তত্ত্বটি সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। তিনি পিথাগোরিয়ান ব্রাদারহুড নামে একটি দর্শনশাস্ত্রীয় ও গাণিতিক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা, যেখানে গণিতের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক নিয়েও গবেষণা করা হতো।

গণিতজ্ঞ পিথাগোরাস

ঐতিহাসিক চরিত্রপিথাগোরাস
জন্মআনুমানিক ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, সামোস দ্বীপ, গ্রিস
পরিচিতিগণিতবিদ, দার্শনিক, জ্যোতিষবিদ
প্রধান অবদানপিথাগোরাসের তত্ত্ব (সমকোণী ত্রিভুজে বাহুগুলির সম্পর্ক)
দর্শনপিথাগোরিয়ানিজম
প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়পিথাগোরিয়ান ব্রাদারহুড
বিশেষ দিকগণিত ও দর্শনের আধ্যাত্মিকতা
মৃত্যুআনুমানিক 495 খ্রিস্টপূর্বাব্দ, মেটাপন্টাম, ইতালি
পিথাগোরাস

ভূমিকা :- জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানব সভ্যতার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে গ্রীকরা। গ্রীক সভ্যতার বিজ্ঞানের সুবর্ণকাল বলে ধরা হয় খ্রিস্ট পূর্ব ৭৭৬ অব্দ থেকে ১০০ অব্দ পর্যন্ত। সুদীর্ঘ ৬৭৬ বছরে সেখানে আবির্ভূত হয়েছেন পিথাগোরাস, অলকমন, ডেমোক্রেটিস, হিপোক্রেটিস, থিওফ্রেসটাস, হেরোফিলাস, অ্যারিস্টটল, আর্কিমিডিস, ইউক্লিড ও হিপারকাসের মতো মহান বিজ্ঞান প্রতিভা। এঁদের মধ্যে বহুমুখী প্রতিভা নিয়ে সবার প্রথমে জন্মেছিলেন পিথাগোরাস। প্রকৃতপক্ষে তাঁর সময় থেকেই গ্রীকবিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হয়। পিথাগোরাস ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। গণিতশাস্ত্রের আদিপুরুষ রূপে তিনি ইতিহাসে চিহ্নিত হয়েছেন। পিথাগোরাসের গবেষণা ছিল বিভিন্নমুখী। সন্ত্রসঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি শব্দ বিজ্ঞানের চর্চা করেছেন। তাছাড়া সংখ্যাবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শরীরবিদ্যা, সৌরবিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিল তাঁর অনায়াস বিচরণ।

পিথাগোরাসের জন্ম

খ্রিস্টের জন্মের ৫৮০ শতকে গ্রীসদেশের ক্রোটোনা দ্বীপের সামস নগরে পিথাগোরাসের জন্ম। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষালাভ হয়েছিল বাবা-মায়ের কাছেই। বিদ্যাশিক্ষার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। সেই টানেই সামস শহরে শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি এক গ্রীক বণিকের জাহাজে চড়ে আসেন মিশরে।

দার্শনিক পিথাগোরাসের শিক্ষা

সেই সময়ে প্রাচীন মিশরও ছিল গ্রীসের মতোই বিদ্যাচর্চার অন্যতম পীঠভূমি। দেশ-বিদেশের মনীষীদের সমাগমে মুখর ছিল মিশরের জ্ঞানচর্চা। পিথাগোরাস এখানে বিভিন্ন অধ্যাপকের কাছে বিশেষ করে গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের শিক্ষালাভ করলেন। পিথাগোরাস শিখলেন ব্যাবিলনের ক্যালডিয় ভাষা।

পিথাগোরাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা

শিক্ষা সমাপ্ত হলে তিনি পুনরায় ফিরে এলেন স্বভূমি ক্রোটোনায়। এখানেই করেছেন তিনি নানা বিষয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গণিত বিজ্ঞানের অবদানের জন্যই পিথাগোরাসের প্রসিদ্ধি সর্বাধিক। সেই মূল বিষয়ে যাবার আগে তাঁর অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়েও কিছু বলা প্রয়োজন।

শব্দ বিজ্ঞান সম্পর্কে পিথাগোরাসের গবেষণা

  • (১) শব্দ বিজ্ঞানের গবেষণা তিনি শুরু করেছিলেন অনেকটা আকস্মিকভাবেই। একদিন সামস শহরের পথ ধরে তিনি হাঁটছিলেন। এক কামারশালার পাশ দিয়ে যাবার সময় হাতুড়ির ঘায়ের শব্দ কানে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তিনি খেয়াল করলেন, হাতুড়ির পর পর আটটি ঘায়ের মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম ঘায়ের শব্দ হুবহু একই রকম। কিন্তু চতুর্থ ঘায়ের শব্দটি একটু আলাদা রকমের।
  • (২) কৌতূহলী হয়ে তিনি ঢুকে পড়লেন কামারশালায়। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন শব্দের মিল বা অমিলের কারণ হল নানা ওজনের হাতুড়ি। বিভিন্ন ওজনের হাতুড়ি যখন নেহাইয়ের ওপরে পড়ছে, তা থেকে নির্গত হচ্ছে এক এক ধরনের শব্দ।
  • (৩) ব্যাপারটা লক্ষ্য করে তিনি বাড়ি ফিরে এলেন। তারপর তৈরি করলেন একই ধাতুর সমান দৈর্ঘ্যের চারটি তার। প্রত্যেকটিই আবার সমান পুরু। এরপর চারটি তারকে এমন ভাবে চারটি বিভিন্ন ওজনের ধাতুর সাহায্যে টান টান করে টানলেন যা কামারশালায় দেখে আসা চারটি হাতুড়ির ওজনের সমান। এবারে চারটি তারের গায়ে আঙুল স্পর্শ করতেই শব্দ উঠল নানান রকম। তিনি লক্ষা করলেন তারের শব্দে কামারশালার শব্দেরই অনুরূপ ঝংকার উঠছে।
  • (৪) এরপর নানা ওজনের ধাতুর সাহায্যে নানা ভাবে টান করে তৈরি করে ফেললেন একটি বাদ্যযন্ত্র। তাঁর মৃত্যুর পরে এই যন্ত্র বাজানো হত সামস দ্বীপের জুনোদেবের মন্দিরে। পিথাগোরাস জানিয়েছিলেন, নানা ওজনের হাতুড়ি ইথার তরঙ্গে আঘাত করে তৈরি করে স্বরসঙ্গতি। আঘাতের বেগ বা পরিমাণ ও ইথার তরঙ্গের দৈর্ঘ্যের ওপরেই নির্ভর করে স্বরটি কেমন হবে। পিথাগোরাসের এই ধারণার ওপরেই গড়ে ওঠে গোলকপুঞ্জের স্বরসঙ্গতির সূত্র বা হারমনি অব দ্য স্ফিয়াবস।

ম্যালেরিয়া সম্পর্কে পিথাগোরাসের গবেষণা

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণের সূত্রে পিথাগোরাস ম্যালেরিয়া সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্ধানটি জানিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, জলা জংলাই হলো ম্যালেরিয়ার উৎস। এই সব পরিষ্কার করলে ম্যালেরিয়াও নির্মূল হবে।

সংখ্যাবিজ্ঞান সম্পর্কে পিথাগোরাসের গবেষণা

  • (১) পিথাগোরাসের সংখ্যাবিজ্ঞানের গবেষণাটিও ছিল মূল্যবান। মিশরে অবস্থান কালে তিনি ক্যালডিয় বা ব্যাবিলনের ভাষা শিক্ষা করেছিলেন। এই ক্যালডিয় সংখ্যা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি প্রচার করেছিলেন, বিশ্বের সকল বস্তুকেই সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সংখ্যা দিয়ে তিনি রোগবিশেষের সংকটকাল পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারতেন।
  • (২) এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যাগুলিকে পিথাগোরাস ব্যাখ্যা করতেন এই ভাবে – সমস্ত সংখ্যার আদি ১। তাই এই সংখ্যাটি অনাদি ঈশ্বরের প্রতীক এবং তাই পবিত্র সংখ্যা। ২ সংখ্যা নারীর প্রতীক। পুরুষের প্রতীক ৩ সংখ্যাটি। নারী ও পুরুষের মিলিত সংখ্য ২+৩ = ৫ হল বিবাহের সংখ্যা। ৪ কে তিনি ধরতেন ন্যায়ের প্রতীক বলে এবং ১০ ছিল যাদু সংখ্যা। এই সব সংখ্যার গণনার সাহায্যে তিনি নানা বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে পারতেন।

পৃথিবীর আকার সম্পর্কে পিথাগোরাসের ঘোষণা

পৃথিবীর আকার সম্পর্কে পিথাগোরাসই প্রথম ঘোষণা করেছিলেন চরম সত্য কথা। তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীর আকার গোল আর এই পৃথিবী, গ্রহ- নক্ষত্র সবকিছুই আবর্তিত হচ্ছে। পরবর্তীকালে কোপার্নিকাস তাঁর রচনায় পিথাগোরাসের কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন।

জ্যামিতির চর্চায় পিথাগোরাস

ইউক্লিডকে জ্যামিতির জনক বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে পিথাগোরাসই জ্যামিতির চর্চা শুরু করেছিলেন এবং এ বিষয়ে তাঁর মনে প্রথম চিন্তার উদয় হয়েছিল মিশরে বসবাসকালে। পিরামিডের গঠনকৌশল দেখে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন। সম্পূর্ণ জ্যামিতিক নিয়ম মেনে পাথরের পর পাথর সাজিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল পিরামিডগুলি। পিরামিডের গঠনকৌশল দেখেই পিথাগোরাসের মনে জ্যামিতি বিষয়ে চিন্তা ভাবনার উদয় হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে তিনি জ্যামিতির জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। জ্যামিতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান না থাকলেও পিথাগোরাসই আধুনিক জ্যামিতিবিদ্যার পথটি প্রদর্শন করেছিলেন।

পিথাগোরাসের উপপাদ্য

  • (১) ইউক্লিডের জন্মের দুশ বছর আগেই প্রচারিত হয়েছে পিথাগোরাসের বিখ্যাত উপপাদ্যটি – সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গ ওই ত্রিভুজের অপর দুই বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গের যোগফলের সমান। এ বিষয়ে অবশ্য পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদও রয়েছে। অনেকের মতে পিথাগোরাস এই উপপাদ্যটি রচনার প্রেরণা পেয়েছিলেন ভারতবর্ষ থেকে।
  • (২) দেশভ্রমণে বেরিয়ে ভারতবর্ষে এসেছিলেন পিথাগোরাস। প্রাচীন ভারতবর্ষও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় যে কোনও প্রাচীন সভ্যতার মতোই অগ্রসর ছিল। পিথাগোরাসের জন্মের অন্ততঃ একশ বছর আগেই ভারতবর্ষে পন্ডিত বৌধায়ন জ্যামিতি সম্বন্ধে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিলেন। পন্ডিতদের ধারণা, বৌধায়নের কোন সূত্র থেকেই পিথাগোরাস তাঁর উপপাদ্যটির সূত্র লাভ করেছিলেন। তবে সূত্র যাই হোক না কেন উপপাদ্যটি ছিল পিথাগোরাসের সম্পূর্ণ মৌলিক রচনা।

ক্রোটোনায় পিথাগোরাস

মিশর থেকে সামসে ফিরে এলেও পিথাগোরাস বেশিদিন এখানে বাস করতে পারেন নি। সেই সময়ে সামসের রাজা ছিলেন অত্যাচারী পলিক্রেটিস। এই স্বেচ্ছাচারী রাজার রাজত্ব ছেড়ে তিনি পাকাপাকি ভাবে ক্রোটোনায় গিয়ে বাস করতে থাকেন।

পিথাগোরাসের শিষ্য নির্বাচন পদ্ধতি

বিভিন্ন বিষয়েই বিশেষ করে ধর্ম, দর্শন, সঙ্গীত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পিথাগোরাসের পান্ডিত্য ছিল অসাধারণ। তাই অল্পসময়ের মধ্যেই তাঁর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। ফলে শিক্ষালাভের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্ররা এসে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে লাগল। পিথাগোরাস বিশেষ কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর শিষ্যদের নির্বাচন করতেন। তাঁর কাছে শিক্ষা গ্রহণের অধিকার যারা পেত তাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হত। নিয়মগুলি পিথাগোরাস নিজেও মেনে চলতেন। তিনি এবং তাঁর শিষ্যবর্গ সম্পূর্ণ নিরামিষাশী না হলেও পশুমাংস ও ডিম খেতেন না। কেবল দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা মাংস খেতেন। তাঁরা মনে করতেন মানুষের মতোই সমস্ত পশুপাখিও পৃথিবীর সন্তান। তাই তাদের মাংস খাওয়া অন্যায়।

জ্ঞানভিক্ষু পিথাগোরাস

দার্শনিক পিথাগোরাস অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। সর্বদা সাদা পোশাক তিনি পরতেন। নিজেকে তিনি জ্ঞানভিক্ষু বলেই মনে করতেন। তিনি বলতেন, জ্ঞানই মানুষকে প্রকৃত আনন্দ দিতে পারে। তাই অর্থের জন্য না, জ্ঞান অর্জনের জন্যই জীবন উৎসর্গ করা কর্তব্য।

পিথাগোরাসের কাছে শিষ্যদের শিক্ষা

গণিতবিদ পিথাগোরাস শিষ্যদের শিক্ষা দিতেন অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতি, সঙ্গীত, দর্শন, ও জ্যোর্তিবিদ্যা। পাঁচ বছর তাঁর কাছে শিক্ষালাভের পর শিষ্যরা অঙ্কশাস্ত্র শিক্ষার অধিকার লাভ করত। তাঁর জীবনকালের মধ্যেই পিথাগোরাসের শিষ্যদের নিয়ে একটি সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। তারা প্রত্যেকে জ্ঞানচর্চা ও ধর্মীয় জীবনের মধ্যেই নিজেদের নিয়োজিত রাখত।

আত্মা সম্পর্কে পিথাগোরাসের ধারণা

প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের মতোই পিথাগোরাস বিশ্বাস করতেন আত্মা অমর। মৃত্যুর পর আত্মা নতুন দেহ ধারণ করে পুনরায় জন্ম নেয়।

দেশের লোকের মধ্যে পিথাগোরাসের প্রভাব

গ্রীসের মানুষ তাঁর জীবিতকালেই পিথাগোরাসকে দেবতার আসনে বসিয়েছিল। পিথাগোরাসের শিষ্য ও অনুগামীরা প্রধানত জ্ঞানচর্চারই অনুরক্ত ছিল। কিন্তু এক সময় দেখা গেল তাদের মধ্যে অনেকেরই চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে রাজনীতি। এদিকে দেশের লোকের মধ্যে পিথাগোরাসের প্রভাবও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে দেশের রাজশক্তি বিচলিত বোধ করল।

পিথাগোরাসের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার

  • (১) ইতিমধ্যে কিছু ঈর্ষাকাতর বুদ্ধিজীবীও পিথাগোরাসের জনপ্রিয়তা ও সম্মানহানির উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার শুরু করেছিল। তারা সুযোগ বুঝে রাজশক্তির সঙ্গে যোগ দিল। অল্পবুদ্ধি কিছু লোক মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। রাজার অনুচরদের উসকানিতে তারা উত্তেজিত হয়ে একদিন সদলবলে পিথাগোরাসের আবাসে চড়াও হল। ক্ষিপ্ত জনতাকে বাধা দিতে গিয়ে পিথাগোরাসের অনেক শিষ্যই জখম হল, অনেকে মারা পড়ল।
  • (২) আহত শিষ্যদের অনুরোধে পিথাগোরাস তাঁর শিক্ষালয় ছেড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না। বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করেছিল। তিনি চেষ্টা করলে অনায়াসেই তাদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু হঠাৎ সামনে এক কলাই ক্ষেত পড়ায় দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য হলেন।

দার্শনিক পিথাগোরাসের হত্যা

জীবনবাদী পিথাগোরাস বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতির রাজ্যে বৃক্ষ, লতা, গুল্ম, সকলেই জীবন্ত প্রাণী। ক্ষেত পার হতে গেলে তাঁর পায়ের চাপে জীবন্ত কলাই গাছ প্রাণ হারাবে। এমন কাজ তিনি কী করে করবেন? তাই চিন্তা করে তিনি আর কলাইয়ের ক্ষেতে পা দিলেন না, নিজের জীবন বিপন্ন করে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। এই সুযোগে রাজার অনুচররা এসে তাঁকে হত্যা করল।

পিথাগোরাসের মৃত্যু

তার মৃত্যু সম্পর্কে আরও একটি বিবরণ কোন কোন পন্ডিতের রচনা থেকে জানা যায়। শেষ বয়সে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। সেই অবস্থায় একদিন সকালবেলা এক পাহাড়ে উঠে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং এই ভাবেই পিথাগোরাসের জীবনাবসান হয়।

উপসংহার :- পিথাগোরাস ছিলেন প্রাচীন যুগের অন্যতম প্রভাবশালী দার্শনিক ও গণিতবিদ, যিনি আধুনিক গণিতের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর পিথাগোরিয়ান তত্ত্ব এবং সংখ্যার আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা বিশ্ববীক্ষার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। তিনি শুধু গণিতেই নয়, দর্শন, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতায়ও বিশেষ অবদান রেখেছেন। পিথাগোরাসের কাজ আজও গণিত এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাঁর চিন্তাধারা প্রাচীন ও আধুনিক দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

(FAQ) পিথাগোরাস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পিথাগোরাসের তত্ত্ব কী?

পিথাগোরাসের তত্ত্ব হলো একটি সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে, তার কৌণিক বাহুর দৈর্ঘ্যের বর্গফলের সমষ্টি সমকোণের বিপরীত বাহুর দৈর্ঘ্যের বর্গফলের সমান হয়। এটি (a^2 + b^2 = c^2) হিসেবে প্রকাশিত হয়, যেখানে (c) হলো সমকোণের বিপরীত বাহু।

২. পিথাগোরাস কীভাবে গণিত ও দর্শনের সাথে যুক্ত ছিলেন?

পিথাগোরাস মনে করতেন যে সংখ্যা এবং গণিতের আধ্যাত্মিকতা রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বিশ্বকে বোঝা যায়। তাঁর মতে, সংখ্যা বিশ্বজগতের মূল গঠনশীল উপাদান।

৩. পিথাগোরিয়ান ব্রাদারহুড কী?

এটি ছিল পিথাগোরাসের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি গাণিতিক ও দার্শনিক সম্প্রদায়, যেখানে গণিত, আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার ওপর গবেষণা করা হতো।

৪. পিথাগোরাসের কোন বিখ্যাত উক্তি আছে?

পিথাগোরাসের একটি বিখ্যাত উক্তি হলো, “সংখ্যা বিশ্বজগতের প্রকৃত ভাষা।”

৫. পিথাগোরাসের দর্শনের মূল ভিত্তি কী?

পিথাগোরাসের দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল যে বাস্তব জগতের সবকিছু সংখ্যা ও গাণিতিক সম্পর্কের মাধ্যমে বোঝা যায়।

Leave a Comment