রুশ ঔপন্যাসিক, ইতিহাসবিদ ও সমালোচক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন (Alexander Solzhenitsyn) সোভিয়েত ইউনিয়নের দমনমূলক শাসনব্যবস্থা এবং গুলাগ (শ্রম শিবির) এর উপর ভিত্তি করে তার রচনা তৈরি করেছিলেন। তার বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে “One Day in the Life of Ivan Denisovich” এবং “The Gulag Archipelago” উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৭০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার সাহসী সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে সোভিয়েত সরকার বারবার নিপীড়িত করে এবং তাকে নির্বাসিতও করা হয়।
প্রতিবাদী লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
ঐতিহাসিক চরিত্র | আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন |
পুরো নাম | আলেকজান্ডার ইসায়েভিচ সলঝেনিৎসিন |
জন্ম | ১১ ডিসেম্বর, ১৯১৮ খ্রি |
জন্মস্থান | কিসলোভোডস্ক, রাশিয়া |
পেশা | ঔপন্যাসিক, ইতিহাসবিদ ও সমালোচক |
বিখ্যাত কাজ | “One Day in the Life of Ivan Denisovich”, “The Gulag Archipelago” |
পুরস্কার | সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯৭০) |
নির্বাসন | ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে |
নির্বাসন মুক্তি | ১৯৯৪ খ্রি |
প্রভাব | সোভিয়েত এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার আন্দোলনের উপর প্রভাব ফেলেছেন |
মৃত্যু | ৩ আগস্ট, ২০০৮ খ্রি |
ভূমিকা :- বিগত শতাব্দীর অন্যতম স্বাধীনচেতা নির্ভীক প্রতিবাদী লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন। রাশিয়ায় কমিউনিস্ট অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী তীব্র প্রতিবাদে ঝলসে উঠেছিল। লৌহমানব যোসেফ স্তালিন-এর কাজকর্মের তীব্র বিরোধিতা করে তিনি রাষ্ট্রনায়কের বিষনজরে পড়েছিলেন। স্বদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল তাঁর লেখা। এমনকি পরোক্ষভাবে তাঁর মৃত্যুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল তাঁকে তথাকথিত শ্রমশিবিরে পাঠিয়ে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের নোবেল পুরস্কার লাভ
রাশিয়ার অন্য এক প্রতিবাদী লেখক পাস্তারনাককে তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য সুইডিশ একাদেমি ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। এই সংবাদ জানতে পেরে লেখক মন্তব্য করেছিলেন, আমি অভিভূত এবং গর্বিত। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চাপে পড়ে কিছুদিন পরেই তাঁকে বলতে হয়েছিল উল্টো কথা। তিনি বাধ্য হয়েছিলেন বলতে, নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। মাত্র বারো বছর পরেই, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হল, অন্য এক রুশ লেখক সলঝেনিৎসিনের নামে। কিন্তু এবারে আর পাস্তেরনাকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল না। বিশ্ববাসী সবিস্ময়ে লক্ষ্য করল রাষ্ট্রীয় শাসক গোষ্ঠীর সকল প্রকার প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করলেন।
লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের জন্ম
ককেসাসের ফিসলোভদক্স অঞ্চলে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল সলঝেনিৎসিনের। বিশ্ব ইতিহাসের পট পরিবর্তনের সন্ধিলগ্ন তখন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে চলেছে। আর আগের বছরেই ঘটেছে মহান অক্টোবর বিপ্লবের অভ্যুদয়।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের শিক্ষা ও বাল্য জীবন
সলঝেনিৎসিনের বাবা ছিলেন সামরিক অফিসার। তাঁর জন্মের মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। তাই মায়ের স্নেহছায়াতেই তিনি বড় হয়ে ওঠেন। প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছিলেন মায়ের কাছেই। বাল্য বয়সেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ প্রকাশ পায়। সুযোগ পেলেই পছন্দমতো বই নিয়ে বসে পড়তেন। সলঝেনিৎসিনের পাঠে আগ্রহ বৃদ্ধির সহায়তা করেছিলেন তাঁর এক পিসিমা ইরিনা শেচারবাক। তিনি স্নেহ ও মমতার সঙ্গে পিতৃহারা ভাইপোটির সবরকম কৌতূহল মেটাবার চেষ্টা করতেন। বস্তুতঃ ইরিনা হয়ে উঠেছিলেন শিশু সলঝেনিৎসিনের একান্ত সঙ্গী। তাঁর শিশুমনটি উপযুক্ত শিক্ষায় ও সাহচর্যে তিনিই গঠন করে দিয়েছিলেন।
লেখা ও লেখক সম্পর্কে আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের ধারণা
বই পড়ার অভ্যাসের প্রভাব সলঝেনিৎসিনের মনে এমনই গভীর হয়েছিল যে মাত্র নয় বছর বয়সেই তিনি জীবনের পথ স্থির করে নিয়েছিলেন। তিনি নিজেই পরে লিখেছেন, খুব ছোট বয়স থেকেই তাঁর লিখতে ইচ্ছে হত। এই ভাবেই লেখা ও লেখক সম্পর্কে তাঁর ধারণা তৈরি হয়েছিল এবং তিনি সঙ্কল্প নিয়েছিলেন বড় হয়ে তাঁকে লেখক হতে হবে।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের লেখক সত্তার পুষ্টি
পিসিমা ইরিনার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিটিতে ছিল অসংখ্য বই। দিনের বেশির ভাগ সময়টা তাঁর সেখানেই কেটে যেত। এখানেই তিনি পরিচিত হন দস্তয়েভস্কি, পুশকিন, তুর্গেনিভ ও গোগোলের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে। মাত্র দশ বছর বয়সেই তিনি পড়ে শেষ করেছিলেন রুশ সাহিত্যের দিকপাল লেখক তলস্তয়-এর বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ওয়ার অ্যান্ড পিস। এই ভাবেই পুষ্টি লাভ করেছিল তাঁর লেখক সত্তা।
কমিউনিস্ট ভাবধারায় আকৃষ্ট আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
ছাত্র অবস্থাতেই কমিউনিস্ট ভাবধারায় আকৃষ্ট হন সলঝেনিৎসিন। কমিউনিস্ট যুব সংগঠন কোম সোমল-এর সদস্য হয়েছিলেন তিনি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং লেনিনপন্থী চিন্তাধারায় অভ্যস্ত। কার্ল মার্কস-এর রচনা সর্বক্ষণের সঙ্গী।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের বিবাহ
রোস্তভ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী দিনগুলোতেই প্রেম এলো সলঝেনিৎসিনের জীবনে। এই প্রেমের পরিণতিতে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হলেন নাটালা রেশেতোবাস্কার সঙ্গে। নাটালা ছিলেন অধ্যাপিকা এবং একজন রসায়নবিদ।
লেনিনের প্রতি আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের শ্রদ্ধা
রোস্তভ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই সলঝেনিৎসিন কার্ল মার্কস ও লেনিনের মতবাদ নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। এই সময়েই তিনি মনেপ্রাণে বর্জন করেছিলেন স্তালিনকে। লেনিনের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল অবিচল।
শিক্ষক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার পর ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ রাশিয়ার একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি গ্রহণ করেন। এখানে তিনি পড়াতেন গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা। কিন্তু বেশিদিন স্কুলের কাজ করতে পারেন নি তিনি। ততদিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। জার্মানি আক্রমণ করেছে সোভিয়েত রাশিয়া। স্কুলের কাজ ছেড়ে সলঝেনিৎসিন নাম লেখালেন সৈন্য বিভাগে। পরের বছরেই, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সামরিক বিভাগে উচ্চপদ লাভ করলেন তিনি। হলেন কমান্ডার। পরে ক্যাপ্টেন পর্যন্ত হয়েছিলেন।
গ্রেপ্তার আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ঘটল ভাগ্য বিপর্যয়। আকস্মিক ভাবে গ্রেপ্তার করা হল তাঁকে। এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না সলঝেনিৎসিন। কেননা গ্রেপ্তারের কারণ ছিল তাঁর অজানা। এক বন্ধুকে ব্যক্তিগত একটি চিঠিতে তিনি একসময় তাঁর স্তালিন-বিরোধী মতবাদের কথা জানিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ সেই চিঠিটি পড়ে যায় গোয়েন্দা বিভাগের এজেন্টদের হাতে এবং তার পরিণতিতেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সলঝেনিৎসিন লেনিনের মতাদর্শ রূপায়নের জন্য নতুন একটি দল গড়ার ষড়যন্ত্র করছেন।
লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের কারাদণ্ড
যথারীতি একতরফা বিচারের প্রহসন অনুষ্ঠিত হল। অভিযুক্তের কোনো বক্তব্যই শোনা হল না। বিচারে তাঁকে দেওয়া হল আট বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড। সলঝেনিৎসিনকে প্রথমে পাঠানো হল শ্রম শিবিরে। কিছুদিন পরে সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল মস্কোর পেনাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনসটিটিউটে। তখনকার মারফিনো কারাগারে তাঁকে কাজে নিযুক্ত করা হল।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের বিখ্যাত উপন্যাস দ্য ফার্স্ট সার্কেল
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সলঝেনিৎসিন গণিতজ্ঞ হিসাবে কমিউনিকেশন রিসার্চের কাজ আরম্ভ করলেন। কিন্তু এখানকার পরিবেশ অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর কাছে পীড়াদায়ক হয়ে উঠল। তিনি প্রকাশ্যেই তাঁর ওপরওলা অফিসারদের সমালোচনা করতে লাগলেন। পরবর্তীকালে এই মরফিনো কারাগারের পটভূমিতেই তিনি রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস দ্য ফার্স্ট সার্কেল।
মজুরের কাজে নিযুক্ত আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
- (১) এবারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সলঝেনিৎসিনকে স্থানান্তরিত করা হল কাজাকস্তানের একটি শ্রম শিবিরে। তাঁকে নিযুক্ত করা হল মজুরের কাজে। এই ক্যাম্পগুলিকে বলা হত হার্ড লেবার ক্যাম্প। বন্দীদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজে এখানে নিযুক্ত করা হত।
- (২) কারাবাসের দুঃসহ দিনগুলিতে সলঝেনিৎসিন তাঁর নিঃসঙ্গতা ঘোচাতেন লেখার কাজে বসে। প্রকাশ্যে কিছু লেখা ছিল বারণ। ছেঁড়া টুকরো ফেলে দেওয়া কাগজ গোপনে সংগ্রহ করে তিনি তাতে প্রথমে তাঁর লেখার খসড়া করতেন।
- (৩) কিন্তু সে সব লেখা প্রহরীদের চোখে পড়লে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা তাই সব খসড়া স্মৃতিতে ধরে রাখতেন আর-লেখা কাগজগুলো ফেলতেন নষ্ট করে। পরবর্তীকালে এই হার্ড লেবার ক্যাম্পের স্মৃতি নিয়েই তিনি রচনা করেছিলেন তাঁর প্রথম উপন্যাস ওয়ান ডে ইন দ্য লাইফ অব ইভানদেনিসোভিচ।
লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের মুক্তি
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ৫ই মার্চ স্তালিন মারা গেলেন। আর ঘটনাচক্রে সেই দিনটিই ছিল সলঝেনিৎসিনের দীর্ঘ আট বছরের বন্দী জীবনের মুক্তি পাবার দিন। জেল থেকে বেরুবার পর একটি সমবায় সংস্থায় চাকরি নিলেন তিনি। কিন্তু জানতেন তাঁর গতিবিধির ওপরে সরকারি গোয়েন্দাদের নজর রয়েছে। তাই এই সময়ে লেখার কাজ যেটুকু করতেন সবই গোপনে। বাইরের কেউই তা জানতে পেত না।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের বিবাহ বিচ্ছেদ
চাকরির পাশাপাশি নিয়মিত লেখার কাজ করে গেছেন তিনি। আবার উপার্জন বাড়াবার জন্য বাইরে ছাত্র পড়াবার কাজও নিতে হয়েছিল তাঁকে। সব মিলিয়ে এই সময় তাঁকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। ইতিমধ্যে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী নাটাল্যা রেশেতোবাস্কার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিবাহে আগ্রহী আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
দ্বিতীয়বার বিবাহ করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। পাত্রীর যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য তিনি দুটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং এই সময় যে সকল পাত্রীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছিল তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই বিষয় দুটি তুলে ধরেছিলেন। সলঝেনিৎসিন চাইতেন যাঁকে তিনি বিয়ে করবেন, পান্ডুলিপি তৈরি করার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ থাকতে হবে এবং সেই পান্ডুলিপি লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি যাদের বিবাহের প্রস্তাব দিতেন তাদের এই দুটি বিষয়ের পাশাপাশি আন্তন চেকভের দ্য ডার্লিং বইটি পড়তে দিতেন। যাতে গল্পের মর্মার্থ থেকে তারা তাঁর উদ্দেশ্য ও মনোভাব পরিষ্কার বুঝতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে মহিলারা সলঝেনিৎসিনকে বিবাহে আগ্রহী হয়েছিলেন, তাঁরা কেউই তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হন নি। এমনকি চেকভের গল্পের প্রভাবও তাঁদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় নি।
ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
দীর্ঘ আট বছর কারাদন্ডকালের কঠোর জীবনের যন্ত্রণা সইতে হয়েছিল সলঝেনিৎসিনকে। তথাপি দেশের কমিউনিস্ট শাসকদের কড়া নজর ছিল তাঁর ওপরে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে আবার বিনা বিচারে নির্বাসনে পাঠানো হল। এবারে দক্ষিণে কাজাকস্তানের কোকটেরেক ক্যাম্প। ইতিপূর্বে হার্ডলেবার ক্যাম্পে বন্দী থাকার সময়েই তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হন। কোকটেরেক ক্যাম্পে আসার পর পুনরায় রোগাক্রান্ত হলেন তিনি। চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাঠানো হল তাসখন্দ হাসপাতালে এবং সৌভাগ্যবশতঃ রোগমুক্ত হলেন তিনি।
লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের ভাগ্য পরিবর্তন
ইতিমধ্যে দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঘটেছে পরিবর্তন। স্তালিনের পরে সোভিয়েত রাশিয়ার শাসন ‘ক্ষমতায় এলেন নিকিতা ক্রুশ্চেভ। রাজনৈতিক পরিবেশে এল কিছুটা সুস্থিরতা। স্তালিন-বিরোধী মতাদর্শ দানা বাঁধার সুযোগ পেল। এই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিমন্ডলে সলঝেনিৎসিনেরও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটল। তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়া হল এবং তিনি মুক্তি পেলেন।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের স্ত্রীর সাথে পুনরায় মিলন
এই সময়েই তাঁর সঙ্গে ফের যোগাযোগ হল বিবাহ বিচ্ছিন্না স্ত্রীর সঙ্গে। যে বন্ধন একদিন ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তাই আবার পুনযোজিত হল। দুজনে আবদ্ধ হলেন অটুট বন্ধনে। ছেড়ে যাওয়া স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে যেন নতুন জীবন লাভ করলেন সলঝেনিৎসিন। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে চলে গেলেন মস্কোর অদূরে রেজানে নামক স্থানে। সেখানেই বসবাস করতে লাগলেন তাঁরা। সংসার জীবনে পুনঃপ্রবেশ করে আবার পুরনো পেশাতেই ফিরে এলেন সলঝেনিৎসিন। গ্রহণ করলেন শিক্ষকতার জীবন। তার পাশাপাশি চলল তাঁর লেখার কাজ।
গোপনে আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের লেখার কাজ
লেখার কাজটা চলত গোপনে। একমাত্র স্ত্রী ছাড়া দ্বিতীয় কেউ তাঁর পান্ডুলিপি দেখার সুযোগ পেত না। তিনিই টাইপ করতেন তাঁর যাবতীয় লেখা। দিনে দিনে জমে উঠছিল পান্ডুলিপি। সে সবের দিকে তাকিয়ে হতাশায় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতেন সলঝেনিৎসিন। ভাবতেন, এসব লেখা তাঁর কোন দিনই প্রকাশের সুযোগ পাবে না। কেননা সোভিয়েত রাশিয়ায় লেখকদের স্বাধীনতা অস্তমিত।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের রচনা প্রকাশ
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়ায় ২২ তম কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের বাতাবরণ তৈরি হল। ফলে কিছুটা আশান্বিত হলেন সলঝেনিৎসিন। তাঁর রচনা প্রকাশের সম্ভাবনার পথ দেখতে পেলেন। এই সময়েই তিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস ওয়ান ডে ইন দ্য লাইফ অব ইভানদিনেসোভিচ প্রকাশের জন্য নাভিমির মাসিক পত্রিকায় পাঠালেন। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আলেকজান্ডার টাভডোস্কি। সলঝেনিৎসিনের উপন্যাসটি পড়ে তিনি চমকিত হলেন। প্রকাশের আগে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তিনি পান্ডুলিপিটি পাঠালেন স্বয়ং ক্রুশ্চেভের কাছে। অবিলম্বে অনুমোদনও পাওয়া গেল এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সেই লেখা প্রকাশিত হল নাভিমির মাসিক পত্রে।
লেখক হিসেবে আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের প্রতিষ্ঠা
প্রথম উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই লেখক হিসেবে দেশে প্রতিষ্ঠা পেলেন সলঝেনিৎসিন। রাইটার্স ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত হলেন তিনি। কেবল তাই নয় রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে যাঁকে একদিন দেওয়া হয়েছিল দীর্ঘকারাবাসের দন্ড, শ্রমশিবিরে তাঁকে দিয়ে করান হয়েছে মজুরের কাজ, সেই মানুষকেই কেবল একটি উপন্যাসের বক্তব্যের সুবাদে ভাষণ দিতে আহ্বান জানানো হল সোভিয়েত সুপ্রিম মিলিটারি ট্রাইবুনালে।
খ্যাতির শীর্ষে আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে এক বছরের মধ্যেই উপন্যাসটি পৌঁছে গেল ইউরোপ-এর নানা দেশের মানুষের হাতে। এই ভাবেই শুরু হল লেখক সলঝেনিৎসিনের অগ্রযাত্রা। উপন্যাসের পরেই নাভিমির কাগজে প্রকাশিত হল দুটি গল্প। সমালোচকরা এবারেও প্রশংসায় মুখর হলেন। তাঁর তুলনা করা হল তুর্গেনিভ এবং চেকভের সঙ্গে। সলঝেনিৎসিনের নাম পৌঁছে গেল খ্যাতির শীর্ষে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে লেনিন পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করা হল। যদিও এই পুরস্কার তাঁকে দেওয়া হয় নি।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের চাকরি ত্যাগ
খ্যাতি ও যশ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছিল লেখার চাহিদা। ফলে দুই দিকে তাল রাখা, লেখা এবং চাকরি, তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ল। শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে লেখাকেই একমাত্র জীবিকা হিসেবে বেছে নিলেন তিনি। বই বিক্রি বাবদ প্রকাশকদের দেওয়া টাকাই হল তাঁর একমাত্র উপার্জন।
লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের দুর্ভাগ্য
দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দিল ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় তিনি তাঁর দ্য ফার্স্ট সার্কল উপন্যাস রচনার কাজে ব্যস্ত। ক্রুশ্চেভ হলেন ক্ষমতাচ্যুত। স্তালিন-বিরোধী প্রচারের জন্য তাঁকে অপসারিত করে ক্ষমতায় এলেন লিওনাদ ব্রেজনেভ। রাজনৈতিক পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে সলঝেনিৎসিনের ভাগ্যেও নেমে এলো দুর্ভাগ্যের অশুভ ছায়া। কর্তৃপক্ষের বিষনজর পড়ল তাঁর ওপর। ব্রেজনেভ ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই ১৯২২ খ্রিঃ পুলিস দা ফার্স্ট সার্কেল উপন্যাসের পান্ডুলিপি সহ অন্য কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করল। একজন লেখকের জীবনে এই ঘটনা চরম দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী। উপন্যাসের পান্ডুলিপি বাজেয়াপ্ত করেই ক্ষান্ত হয় নি পুলিস। সলঝেনিৎসিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাড়িতেও পুলিশি হামলা হল। সেখানে খোঁজা হল সলঝেনিৎসিনের কাগজপত্র।
প্রতিবাদী লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
দ্য ফার্স্ট সার্কল-এর পান্ডুলিপি ফিরিয়ে দেবার জন্য তিনি চিঠি লিখলেন ব্রেজনেভকে। কিন্তু তাতে কোনো ফল হল না। অগত্যা বাধ্য হয়েই তিনি প্রত্যক্ষ প্রতিবাদের পথ বেছে নিলেন। ব্রেজনেভ সরকারের হুমকির কাছে মাথা নত করলেন না তিনি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে লাগল তাঁর সরকারি নীতির সমালোচনা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি চিঠি লিখে ঘটনাটি সোভিয়েত রাইটার্স কংগ্রেসের নজরে আনলেন। এতদিনে স্বাধীনতাকামী প্রতিবাদী লেখক হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর খ্যাতির কথা বিবেচনা করেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে চরম কোনো ব্যবস্থা নিতে সাহস পায় নি।
সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের কাছে অসহনীয় আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন
- (১) সলঝেনিৎসিনের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টায় সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের ক্লান্তি ছিল না। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে নানাভাবে তাঁকে হেনস্থা করতে লাগল। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সলঝেনিৎসিনের উপন্যাস দ্য ক্যানসার ওয়ার্ড নাভিমির পত্রিকায় প্রকাশের অনুমোদন পেয়েছিল। কিন্তু তা ছাপা হল না।
- (২) কিন্তু পশ্চিমে সলঝিনিৎসিনের লেখার চাহিদা দিন দিনই বাড়ছিল। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর দ্য ক্যানসার ওয়ার্ড এবং দ্য ফার্স্ট সার্কেল উপন্যাস দুটি রাশিয়ার বাইরে থেকে প্রকাশিত হল। রাশিয়ান ভাষায় প্রকাশিত উপন্যাসের ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া পড়ে গেল। সাহিত্য সমালোচকরা মন্তব্য করলেন, এ দুটি উপন্যাস বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারে এক মূল্যবান সংযোজন।
- (৩) সলঝেনিৎসিনের আন্তর্জাতিক খ্যাতি যত বাড়তে লাগল, সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের কাছে ততই তিনি অসহনীয় হয়ে উঠতে লাগলেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে রাশিয়ার রাইটার্স ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হল। সেই সঙ্গে নাভিমির পত্রিকার সম্পাদকের চাকরিটিও কেড়ে নেওয়া হল। নিয়মিত চলতে লাগল ভীতি প্রদর্শন।
- (৪) সমস্ত ভয় বাধা উপেক্ষা করে সলঝিনিৎসিন নিজের মতাদর্শে অটল রইলেন। সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আপোশ করলেন না। পরের বছরেই যেন বোমা ফাটল সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের মুখের ওপরে। সুইডিশ একাডেমি সলঝেনিৎসিনকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন।
- (৫) এই সময় পৃথিবীর দেশে দেশে যখন সলঝেনিৎসিনের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা, প্রশংসা চলতে লাগল, গোটা সোভিয়েত রাশিয়া তাঁর সম্পর্কে একেবারেই নীরব হয়ে রইল। সরকারি পত্রিকা প্রাভদায় মন্তব্য করা হল, তিনি সোবিয়েত জনগণের স্বার্থ- বিরোধী লেখক। সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা কে. জি. বি লেখকের বাড়ি তল্লাসির নামে নতুন লেখার পান্ডুলিপি হাতড়ে বেড়াল।
- (৬) তাঁর কারাবাসের পটভূমিতে লেখা উপন্যাস দ্য গুলাগ অ্যার্কিপেগালো-এর প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হল ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে। এই উপন্যাস সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সলঝেনিৎসিনের বিরোধ আরও বাড়িয়ে তুলল। কে. জি. বি. এই উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডের পাণ্ডুলিপি বাজেয়াপ্ত করার উদ্দেশ্যে আবার তাঁর বাড়ি তল্লাশি করল।
- (৭) সলঝেনিৎসিনের এক ব্যক্তিগত সচিব এলিনাবেতা ভোরোনায়াসকায়াকে গ্রেপ্তার করা হল। তার বাড়ি থেকে পুলিশ হস্তগত করল সলঝেনিৎসিনের একটি পাণ্ডুলিপি। এই ঘটনার পর এলিনাবেতা আত্মহত্যা করলেন। তাঁর মৃত্যুতে নিদারুণ আঘাত পেলেন সলঝেনিৎসিন। তিনি রাতারাতি প্রকাশককে উপন্যাসের পরবর্তী খণ্ড প্রকাশের নির্দেশ দিলেন।
- (৮) এই ঘটনা সম্পর্কে সলঝেনিৎসিন তাঁর আত্মজীবনীমূলক দা ওক অ্যান্ড দা কাফ গ্রন্থে স্পষ্ট উল্লেখ করলেন যে, তাঁর গ্রন্থটি প্রকাশের ফলে সোভিয়েত নেতাদের যে সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হবে তা থেকে তাঁরা আগামী পঞ্চাশ বছরেও মুক্ত হতে পারবেন না।
লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের স্বদেশ পরিত্যাগ
প্রতিবাদী সলঝেনিৎসিনকে কোনও ভাবেই দমন করতে না পেরে সোভিয়েত নেতারা মরিয়া হয়ে তাঁর সরাসরি নিন্দাবাদ প্রচার করতে লাগল। প্রাভদা কাগজে তাঁকে দেশদ্রোহী বলে ঘোষণা করল। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে দেশ থেকে বহিষ্কার করল। এরপর বিদ্রোহী লেখক সলঝেনিৎসিন স্বদেশ পরিত্যাগ করে প্রথমে গেলেন পশ্চিম জার্মানির ফ্রাংকফুটে। সেখান থেকে সুইজারল্যান্ড হয়ে চলে এলেন আমেরিকায়। নিউইয়র্ক হল তাঁর স্থায়ী বসবাসের ঠিকানা।
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন
স্বদেশ সলঝেনিৎসিনকে পরিত্যাগ করলেও তাঁর স্থির বিশ্বাস ছিল, একদিন প্রবাস থেকে দেশের মাটিতে ফিরতে পারবেন। দীর্ঘ দুই যুগের পরে তাঁর এই আন্তরিক বিশ্বাস সত্য হয়েছিল। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিল এবং তাঁকে দেশে ফেরার আমন্ত্রণ জানাল। ইতিমধ্যে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটেছে রাশিয়ায়, ভেঙ্গে গেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। দেশে নতুন পালা বদলের মধ্যে সলঝেনিৎসিনও তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও তিন পুত্রকে নিয়ে ফিরে এসেছেন নিজভূমে।
লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের মৃত্যু
প্রতিবাদী লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন মস্কোর কাছে ৩ আগস্ট ২০০৮ সালে ৮৯ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
উপসংহার :- একসময় তাঁর লেখার প্রচার বন্ধ করার জন্য রাশিয়ার কমিউনিস্ট সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিলম্ব করল না। সোভিয়েত রাশিয়ায় সলঝেনিৎসিনের লেখা বই পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিল। প্রতিবাদী এই লেখককে চূড়ান্ত নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসের পট সতত পরিবর্তনশীল। এক সময় রাষ্ট্রীয় আবহাওয়ার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটল। কমিউনিস্ট অপশাসনের কবল মুক্ত বর্তমান রাশিয়ায় তাঁর রচনা ঘরে ঘরে পঠিত হয়। বিপুলভাবে সমাদৃত তাঁর সাহিত্যকর্ম।
(FAQ) আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন ছিলেন একজন রাশিয়ান ঔপন্যাসিক এবং ইতিহাসবিদ, যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য বিখ্যাত। তার লেখা গুলাগ শ্রম শিবিরের ভয়াবহতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর নিপীড়ন তুলে ধরেছে।
তার বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে “One Day in the Life of Ivan Denisovich”, যা সোভিয়েত গুলাগ শিবিরে বন্দীদের জীবন নিয়ে, এবং “The Gulag Archipelago”, যা গুলাগ শিবিরের ইতিহাস এবং নিপীড়নের বর্ণনা দেয়, অন্যতম।
সোভিয়েত শাসনের কঠোর সমালোচনা এবং গুলাগের নিষ্ঠুর বাস্তবতা প্রকাশ করায়, সলঝেনিৎসিনকে ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত সরকার দেশ থেকে নির্বাসিত করে।
১৯৭০ সালে সলঝেনিৎসিন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, তার সাহসী এবং গভীর সাহিত্যকর্মের জন্য, যা সোভিয়েত দমনমূলক শাসনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে ১৯৯৪ সালে সলঝেনিৎসিন রাশিয়ায় ফিরে আসেন, নির্বাসিত জীবন শেষ করে।
“The Gulag Archipelago” হলো সলঝেনিৎসিনের একটি বিশাল গবেষণাধর্মী কাজ, যা সোভিয়েত গুলাগ শ্রম শিবিরের ইতিহাস, বন্দীদের অভিজ্ঞতা এবং শাসনব্যবস্থার নিষ্ঠুরতা তুলে ধরে।