বৌদ্ধ ধর্মের মৌলিকত্ব প্রসঙ্গে ভগবান বা ঈশ্বরের অনুল্লেখ, ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিবাদী, কর্মফল ও জন্মান্তর, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব, অহিংস নীতি ও বুদ্ধদেবের পন্থা সম্পর্কে জানবো।
বৌদ্ধ ধর্মের মৌলিকত্ব
ঐতিহাসিক ঘটনা | বৌদ্ধ ধর্মের মৌলিকত্ব |
প্রবর্তক | গৌতম বুদ্ধ |
ধর্মগ্ৰন্থ | ত্রিপিটক |
সমকালের অন্য ধর্ম | জৈন ধর্ম |
পূর্ববর্তী ধর্ম | ব্রাহ্মণ্যধর্ম |
ভূমিকা :- ভারত -এ প্রায় সমকালে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান ঘটে। গৌতম বুদ্ধ প্রচার করেন বৌদ্ধ ধর্ম ও মহাবীর প্রচার করেন জৈন ধর্ম। তৎকালীন সময়ে বৌদ্ধ ধর্ম ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল।
বৌদ্ধ ধর্মে ভগবান বা ঈশ্বরের অনুল্লেখ
বৌদ্ধধর্মে দেব-দেবী, যাগ-যজ্ঞ বা ঈশ্বরের কথা বলা হয় নি। বৈদিক হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মণ্যধর্মের সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের মূল পার্থক্য হিসেবে দেখা যায় যে, ঈশ্বর আছেন কি নেই, বুদ্ধ এই তর্কের মধ্যে যাননি। তিনি ভগবান বা ঈশ্বরের কোনো উল্লেখ করেন নি। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য কতকগুলি নৈতিক নিয়ম পালনের কথা বলেছেন।
ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতিবাদী বৌদ্ধ ধর্ম
হিন্দু ব্রাহ্মণ্যধর্মের আচরণ বিধিকে বুদ্ধদেব বর্জন করেছেন। অনেকে মনে করেন যে, বৈদিক সভ্যতার ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিবাদী ধর্ম হিসেবেই বৌদ্ধধর্মের উদ্ভব হয়। সমাজে যাগ-যজ্ঞ, পশুবলি, বায়ু-বহুল পুজা-পার্বনে লোকে যখন আস্থা হারায় তখন বৌদ্ধধর্ম মানুষকে মুক্তির নতুন পথ দেখায়। বৈদিক যুগের শেষ দিক থেকে ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
বৌদ্ধ ধর্মে জন্মান্তর ও কর্মফল
আরণ্যক ও উপনিষদে আত্মার মুক্তির জন্য ব্যাকুল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা উচ্চারিত হয়। জন্মান্তর ও কর্মফল থেকে যজ্ঞ ও পূজো মানুষকে ত্রাণ করতে পারবে না এই প্রত্যয় দেখা দেয়। উপনিষদ যেমন জন্মান্তর এবং কর্মফলের কথা বলে বৌদ্ধধর্মও জন্মান্তর ও কর্মফলের কথা বলে। এজন্য অনেকে বুদ্ধকে উপনিষদের কাছে ঋণী বলে মনে করেন।
বৌদ্ধ ধর্মে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তন
বস্তুতপক্ষে সমাজের যে পরিবর্তনের ফলে ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধে উপনিষদে সংশয় দেখা দেয়, সেই পরিবর্তন বৌদ্ধধর্মের উদ্ভবে সাহায্য করে। একই সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তন উপনিষদে ও বৌদ্ধধর্মে তার প্রতিফলন ঘটায়।
বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বরের অস্তিত্ব
- (১) বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে উদাসীনতা দেখা যায়। এ. কে. ওয়ার্ডার তার ‘ইণ্ডিয়ান বুদ্ধিজম’ গ্রন্থে বলেছেন যে ঈশ্বর সম্পর্কে বুদ্ধের নিস্পৃহতা কোনো নতুন বা মৌলিক চিন্তা উপনিষদে ঈশ্বর আছেন কি নেই এই নিয়ে বিশেষ বিতর্ক দেখা যায়। উপনিষদের এই সংশয়বাদ বুদ্ধকে প্রভাবিত করে।
- (২) দ্বিতীয়ত খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যে ধর্ম আন্দোলনগুলি ঘটেছিল সকল ক্ষেত্রেই বেদ ও ব্রাহ্মণকে অগ্রাহ্য করা হয়। একা বুদ্ধ এই চিন্তাধারা প্রবর্তন করেননি। বর্ধমান মহাবীর ও আজীবিকরাও একই কথা বলেন।
বৌদ্ধ ধর্মে অহিংস নীতি
- (১) উপনিষদে বিশেষত ছান্দোগ্য ও মণ্ডুক উপনিষদে অহিংসা নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বৌদ্ধধর্মেও অহিংসা নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জৈনধর্মে অহিংসাবাদকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
- (২) অহিংসা সম্পর্কে এই যুগে এই ব্যাপক চিন্তা ছিল সার্বিক। ব্রাহ্মণ্যধর্মের যজ্ঞে পশু বলির বিরুদ্ধে এই অহিংসার প্রচার। তাছাড়া উপজাতিক সমাজের গোষ্ঠী যুদ্ধের প্রভাব তখনও বিদ্যমান ছিল। অহিংসার প্রচার দ্বারা ক্ষমতার লোভ থেকে ব্যক্তি ও সমাজকে মুক্ত করার কথা বুদ্ধ ভাবেন।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনকে গ্ৰহণ
সমাজে গ্রহপতি, শ্রেষ্ঠী প্রভৃতি শ্রেণীর উদ্ভবের ফলে এবং ক্ষত্রিয় শ্রেণীর একাংশ ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য মেনে নিতে না চাইলে এক নতুন ধর্মমতের প্রয়োজন দেখা দেয়। বুদ্ধ তাঁর ধর্মমতে এই সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনকে গ্রহণ করেন।
বুদ্ধদেবের পন্থা
গৌতম বুদ্ধ যজ্ঞ-কণ্টকিত ব্রাহ্মণ্যধর্মকে অস্বীকার করেন এবং নৈতিক অনুশাসনকে সর্বোচ্চ স্থান দেন। তিনি জাতিভেদ, চতুরাশ্রম অগ্রাহ্য করেন। তিনি দেব-দেবীর অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেন।
উপসংহার :- বুদ্ধদেব সকল সম্প্রদায়কে তাঁর ধর্ম চিন্তার অঙ্গনে স্থান দেন। বুদ্ধ তাঁর ধর্মকে সমাজের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত প্রসারিত করেন। এজন্য তিনি চলিত বা কথ্য ভাষায় মাগধী প্রাকৃতে তার বাণীগুলি ব্যক্ত করেছেন।
(FAQ) বৌদ্ধ ধর্মের মৌলিকত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গৌতম বুদ্ধ।
ত্রিপিটক।
চারটি।
রাজগৃহে।
প্রাকৃত ভাষা।