নসরৎ শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব প্রসঙ্গে উচ্চস্তরের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, রাজ দরবারের সংঘাত দূরীকরণ, উদারতার মূর্ত প্রতীক, ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা, শিল্প স্থাপত্যের বিকাশ, চরম সমৃদ্ধি ও অত্যাচারী নসরৎ শাহ সম্পর্কে জানবো।
নসরৎ শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব
বিষয় | নসরৎ শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব |
সুলতান | নসরৎ শাহ |
সময়কাল | ১৫১৯-১৫৩২ খ্রি |
পূর্বসূরি | আলাউদ্দিন হুসেন শাহ |
ভূমিকা :- নসরৎ শাহ তাঁর পিতার মতোই উদার ও প্রজাহিতৈষী ছিলেন। বাবর তাঁর ‘আত্মজীবনী’তে তাঁর সমকালীন ভারতের যে পাঁচজন বিখ্যাত মুসলমান শাসকের নাম উল্লেখ করেছেন, নসরৎ শাহ তাঁদের অন্যতম।
উচ্চস্তরের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি
তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নসরৎ মুঘল নেতা বাবরের সঙ্গে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তা তাঁর উচ্চস্তরের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচায়ক।
রাজদরবারের সংঘাত দূরীকরণ
তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেই তাঁর ভ্রাতাগণ পিতার কাছ থেকে যে সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন, তা তিনি দ্বিগুণ করে দেন। এইভাবে তিনি রাজদরবারের পারিবারিক সংঘাত দূর করেন।
কালীকিঙ্কর দত্তর অভিমত
কালীকিঙ্কর দত্ত বলেছেন যে, ভারতে মুসলমান নরপতিগণের মধ্যে “Nusrat proved generous towards his brothers and doubled their inheritance.”
উদারতার মূর্ত প্রতীক
নসরৎ শাহ ছিলেন তাঁর পিতার আদর্শের সত্যকার অনুসরণকারী। তিনি তাঁর পিতার মতোই ছিলেন উদারতার মূর্ত প্রতীক। হিন্দু-মুসলমান সংস্কৃতির সঙ্গে উদারভাবে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।
ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা
তিনি বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের চরম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি স্বয়ং বাংলা ভাষায় মহাভারতের অনুবাদের আদেশ দিয়েছিলেন। ছুটি খান, শ্রীকর নন্দী তাঁর রাজসভাতেও পৃষ্ঠপোষণ পেয়েছিলেন।
শিল্প ও স্থাপত্যের বিকাশ
তিনি কতকগুলি স্মরণীয় সৌধ নির্মাণ করেছিলেন। এই বিষয়ে গৌড়ের বড়ো সোনা মসজিদ ও কদম রসুল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বড়ো সোনা মসজিদের গাম্ভীর্য ও সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে ফার্গুসন এটিকে গৌড়ের সর্বোৎকৃষ্ট সৌধ বলে অভিহিত করেছেন। এটি গৌড়ের প্রাচীন সৌধগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়ো।
চরম সমৃদ্ধি
ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে তাঁর আমলে বঙ্গদেশের যে চরম সমৃদ্ধি ঘটেছিল, তার প্রমাণ প্রতিটি বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্রে বহু খরচে মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। তাঁর শাসনকেও বাঙালি জাতীয় শাসন বলে মনে করেছিল।
অত্যাচারী নসরৎ শাহ
- (১) ঐতিহাসিক ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ ও ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, পরবর্তী জীবনে নসরৎ শাহ অত্যাচারী হয়ে উঠেছিলেন। ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ বলেছেন, তাঁর অত্যাচারের জন্য যিনি তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন তিনিই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
- (২) এমনকি, তাঁর খাস রাজদরবারের কর্মচারীরাও তাঁর ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়ে অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে এবং তাঁকে হত্যা করেছে।
উপসংহার :- ড. ঈশ্বরীপ্রসাদের মন্তব্য সত্য হলেও আমাদের দুঃখের সঙ্গে নসরৎ শাহের শাসনকালকে তাঁর পিতার মতোই মধ্যযুগের বঙ্গদেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় বলেই বিবেচনা করতে হবে।
(FAQ) নসরৎ শাহের চরিত্র ও কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহ।
বাবর।
নসরৎ শাহ।