মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর প্রসঙ্গে বরণির অভিমত, ইবন বতুতার অভিমত, ইসামীর অভিমত, আধুনিক ব্যাখ্যা, প্রশাসনিক কারণ, সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য, অর্থনৈতিক কারণ, বিফলতার কারণ, পুনরায় দিল্লী রাজধানী ও ফলাফল সম্পর্কে জানবো।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর

ঐতিহাসিক ঘটনারাজধানী স্থানান্তর
সময়কাল১৩২৭ খ্রিস্টাব্দ
সুলতানমহম্মদ বিন তুঘলক
রাজধানীদিল্লী
স্থানান্তরদেবগিরি
মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর

ভূমিকা :- দিল্লী সুলতানির তুঘলক বংশ -এর অন্যতম সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক স্থির করেন যে, তাঁর সাম্রাজ্য-এর রাজধানী দিল্লী থেকে দক্ষিণের দেবগিরিতে স্থানান্তর করবেন।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তরের কারণ

কেন সুলতান এরূপ সিদ্ধান্ত নেন সে সম্পর্কে বরণী, ইসামী, ইবন বতুতা প্রমুখ সমকালীন ঐতিহাসিকরা কয়েকটি কারণের উল্লেখ করেছেন। যেমন –

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর সম্পর্কে বরণীর অভিমত

বরণীর মতে, দেবগিরি নগরটি তাঁর সাম্রাজ্যের মধ্যস্থলে হওয়ায় এখান থেকে দক্ষিণ ও উত্তরের রাজ্য ভালভাবে শাসন করা যাবে, একথা ভেবে সুলতান দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। এছাড়া মোঙ্গল আক্রমণের ফলে দিল্লী খুবই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এদিক থেকে দেবগিরি অনেকটা সুরক্ষিত ছিল।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর সম্পর্কে ইবন বতুতার অভিমত

  • (১) ইবন বতুতা রাজধানী স্থানান্তরের ৫ বছর পরে ভারত -এ আসেন। তিনি বলেছেন যে দিল্লীর নাগরিকরা সুলতানের নামে নানা প্রকার কুৎসাপূর্ণ পত্র লিখে রাত্রিকালে তার দরবারে ছুঁড়ে দিত।
  • (২) এজন্য সুলতান দিল্লীবাসীদের শাস্তি দিতে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দেবগিরিতে যেতে বাধ্য করেন। তিনি দিল্লীর বাসিন্দাদের ঘর-বাড়ি কিনে নেন এবং তাদের নির্দেশ দেন যে তারা যেন দেবগিরিতে চলে যায়।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর সম্পর্কে ইসামীর অভিমত

ইসামী বলেছেন যে, দিল্লীর জনসাধারণ সম্পর্কে সুলতান সন্দেহপরায়ণ ছিলেন। তাদের ক্ষমতা ধ্বংস করার জন্য তিনি দিল্লীর জনসাধারণকে দেবগিরি যেতে বাধ্য করেন।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর সম্পর্কে আধুনিক ব্যাখ্যা

সমকালীন ঐতিহাসিকরা দিল্লী থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তরের কারণ সম্পর্কে এক মত নন। তাছাড়া এই মৌলবাদী গোড়া লেখকরা সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন না। সুতরাং তাদের বিবরণে পক্ষপাত থাকার সম্ভাবনা বেশী। যেমন –

প্রথমত, দেবগিরি সাম্রাজ্যের মধ্যস্থলে ছিল না। বাংলা ও পাঞ্জাব দেবগিরি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল। তাছাড়া দেবগিরি থেকে সুদূর উত্তর-পশ্চিমে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ করা কষ্টকর ছিল। উত্তরে কোনো বিদ্রোহ ঘটলে, দেবগিরি থেকে তা দমন করা কঠিন ছিল। সুতরাং বরণীর বক্তব্যকে যুক্তিপূর্ণ বলে আধুনিক গবেষকরা মনে করেন না। তবে দেবগিরির সুন্দর জলবায়ু সুলতান মহম্মদের খুব পছন্দের ছিল এতে সন্দেহ নেই। শুধু এই কারণে তিনি দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন মনে করার কারণ নেই।

দ্বিতীয়ত, ইবন বতুতা ও ইসামীর মন্তব্যগুলি আধুনিক ঐতিহাসিকরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জন্য সুলতান দিল্লীর জনসাধারণকে দৌলতাবাদে তুলে নিয়ে যান বলে মনে করা যায় না। যদি সুলতান প্রতিহিংসার বশে রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিতেন তবে তিনি দেবগিরি যাত্রার সময় দিল্লীর জনগণের আরামের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করতেন না।

তৃতীয়ত, ইবন বতুতা স্বীকার করেছেন যে সুলতান দিল্লীর জনগণের পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি কিনে নেন। প্রতিহিংসার বশে কাজ করলে তিনি তা করতেন না। তাঁর সমগ্র পরিকল্পনার মধ্যে চিন্তার ছাপ দেখা যেত না। যদি সুলতান দিল্লীর জনসাধারণকে সত্যই শাস্তি দিতে চাইতেন তবে তার জন্য তার হাতে অনেক কম ব্যয়সাধ্য উপায় ছিল। অন্তত তিনি দমননীতির আশ্রয় নিতে পারতেন। কাজেই ইসামি ও ইবন বতুতার মন্তব্যকে আধুনিক গবেষকরা বিশ্বাস্য বলে মনে করেন না।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তরের প্রশাসনিক কারণ

  • (১) আধুনিক গবেষকদের মতে সুলতান শাসনতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্যে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। ডঃ হোসেন ও অধ্যাপক হবিবুল্লাহের মতে, প্রশাসনিক কারণেই সুলতান এই কাজ করেন।
  • (২) কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজির আমল থেকে দক্ষিণের রাজ্যগুলিকে সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ শাসনের ভেতর আনার কাজ আরম্ভ হয়। মহম্মদ বিন তুঘলক বুঝেন যে, দক্ষিণে রাজধানী স্থাপন না করলে দক্ষিণকে শাসন করা সম্ভব হবে না।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তরের সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য

  • (১) দক্ষিণের হিন্দু সংখ্যা বেশী হওয়ায় এই অঞ্চলে ইসলামীয় সংস্কৃতি ছিল ক্ষীণ, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। এজন্য সুলতান দেবগিরিকে মুসলিম সংস্কৃতির কেন্দ্রে পরিণত করার কথা ভাবেন।
  • (২) সিয়ার-উল-আওলিয়া নামক গ্রন্থের ওপর নির্ভর করে ডঃ হোসেন বলেছেন যে দক্ষিণে মুসলিম সংস্কৃতি বিস্তারের উদ্দেশ্যে উলেমা ও মুসলিম সন্তদের দক্ষিণে দেবগিরিতে গিয়ে খানকা স্থাপন ও ধর্মপ্রচারের জন্য তিনি ডাক দেন।

সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তরের কারণ মিশ্র সংস্কৃতির বিকাশ

  • (১) ডঃ গার্ডনার ব্রাউনের মতে, সুলতান মহম্মদ শাসনতান্ত্রিক প্রয়োজনকেই জরুরী মনে করেন। এই সঙ্গে মনে রাখা দরকার যে ধর্মোন্মত্ততা বা সাম্প্রদায়িক কারণে সুলতান মহম্মদ দক্ষিণে ইসলামীয় সংস্কৃতি প্রচারের উদ্যোগ নেননি।
  • (২) সাম্রাজ্যবাদী শাসক হিসেবে এবং রাজনৈতিক কারণেই তিনি ইসলামীয় সংস্কৃতি প্রচারের লক্ষ্য নেন। তিনি আশা করেন যে উত্তরের মতই দক্ষিণে হিন্দু মুসলিম মিশ্র সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তরের অর্থনৈতিক কারণ

  • (১) গার্ডনার ব্রাউনের মতে, মহম্মদ বুঝতে পারেন যে, পাঞ্জাবসহ উত্তর ভারত ঘন ঘন মোঙ্গল আক্রমণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উত্তর ভারতে কৃষি সম্পদের এমন বেশী উদ্বৃত্ত ছিল না যার দ্বারা রাজকোষ পূর্ণ করা যেতে পারে।
  • (২) তুলনামূলকভাবে দক্ষিণের সঞ্চিত ধন-সম্পদের পরিমাণ ছিল অনেক বেশী। আলাউদ্দিন খলজি দক্ষিণ থেকে ধনরত্ন লুঠ করে আনার পরেও দক্ষিণে প্রচুর ধন রত্ন ছিল। কাজেই অর্থনৈতিক দিক থেকে দিল্লী অপেক্ষা দেবগিরির গুরুত্ব বেশী ছিল।
  • (৩) সর্বভারতীয় রাজধানী হিসেবে দেবগিরির দাবী দিল্লী অপেক্ষা অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশী ছিল। এই সকল কারণে মহম্মদ রাজধানী দক্ষিণের কোনো শহরে স্থানান্তরিত করার কথা ভাবেন।

মহম্মদ বিন তুঘলকের প্রতি মন্ত্রীদের পরামর্শ

তার মন্ত্রীরা উজ্জয়িনীকে বেছে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করলে, ফেরিস্তার মতে মহম্মদ দেবগিরিকেই বেছে নেন। কারণ দেবগিরির জলবায়ু ছিল উত্তম। সুতরাং নিছক উদ্ভাবনী প্রবৃত্তির কারণে অথবা দিল্লীবাসীকে শাস্তিদানের জন্য মহম্মদ রাজধানী স্থানান্তরের কথা ভাবেননি। বাহাউদ্দিন ঘুরশাম্পের বিদ্রোহের সময় থেকেই তিনি দক্ষিণে রাজধানী স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা বুঝেন।

মহম্মদ বিন তুঘলকের কঠোরতা অবলম্বন

বরণী ও বতুতার বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, সুলতান দিল্লীর ধনী দরিদ্র সকল শ্রেণীর লোককে একসঙ্গে দেবগিরি যাত্রায় বাধ্য করেন। ইবন বতুতার মতে সুলতান অসাধারণ কঠোরতার সঙ্গে তার এই আদেশকে কার্যকরী করেন।

মহম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক দিল্লীবাসীদের দেবগিরি প্রেরণ

  • (১) ১৩২৭ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদের মাতা মুকদমা-ই-জাহান ও সুলতানের পরিবারবর্গ, মালিক, আমীর সকলকেই দেবগিরিতে পাঠান হয়। তারপরে সুলতান উলেমা, সৈয়দ, শেখ ও মরমিয়া সম্ভদের দেবগিরিতে যেতে বাধ্য করেন।
  • (২) এর সঙ্গে দিল্লীর সকল অধিবাসীদের দেবগিরিতে যেতে বাধ্য করা হয়। দিল্লী নগরী জনহীন হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বরণীর মতে যাতে দিল্লী থেকে লোকজনের যাতায়াতে সুবিধা হয় এজন্য পথের ধারে সরাই স্থাপন, বৃক্ষ রোপন করা হয়। কিন্তু পথের কষ্টে বহু লোক মারা যায়।

মহম্মদ বিন তুঘলকের দুই রাজধানী তত্ত্ব

আধুনিক গবেষকরা সকল প্রকার সম্ভাব্য সূত্র বিচার করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, দেবগিরিতে রাজধানী কিছুদিন স্থানান্তরিত হলেও দিল্লী তার মর্যাদা হারায়নি। সমকালীন রচনা মাসালিক-ই-অবসরে রাজধানী স্থানান্তরের উল্লেখ না থাকায়, অনেকে মনে করেন যে দিল্লী ও দৌলতাবাদ দুটি স্থানেই দুটি রাজধানী স্থাপিত হয়। দৌলতাবাদকে দক্ষিণের শাসনকেন্দ্রে পরিণত করা হয়।

মহম্মদ বিন তুঘলকের সময়কালে জনবহুল দিল্লী

বরণী দিল্লীর জনসংখ্যা ধ্বংস সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ ৫ বছর পরে ইবন বতুতা যখন দিল্লীতে আসেন তখন তিনি দিল্লীকে জনবহুল ও সমৃদ্ধিশালী দেখেন।

মহম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক হিন্দুদের অব্যাহতি

ডঃ হোসেনের মতে, দিল্লীর হিন্দুদের সম্ভবত দক্ষিণে যেতে হয়নি। তিনি ১৩২৭-২৮ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর দুটি সংস্কৃত শিলালিপির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। এই শিলালিপিতে হিন্দুরা মহম্মদ তুঘলকের প্রশংসা করেছেন।

মহম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক গণ্যমান্য মুসলিমদের প্রেরণ

মুতলাব-উৎ-তালিবিন-এর মতে কেবলমাত্র দিল্লীর গণ্যমান্য মুসলিমদের দেবগিরি যেতে বাধ্য করা হয়। এই কারণে ডঃ নিজামী মন্তব্য করেছেন যে “দিল্লীর গণ্যমান্য এবং শাসক শ্রেণীর লোকেরা দক্ষিণের রাজধানীর উপযোগী সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির কাজ করেন। সুলতান একমাত্র এই শ্রেণীকেই বাসগৃহ স্থানান্তর করে, দক্ষিণের এই নতুন অঞ্চলে, নতুন পরিবেশের মধ্যে বাস করতে বাধ্য করেন।”

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তরের বিফলতার কারণ

যাই হোক দেবগিরিতে সুলতান মহম্মদের রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। সুলতানের বিফলতার কয়েকটি কারণ ছিল। যেমন –

  • (১) সুলতান তাঁর পরিকল্পনা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কার্যকরী করেন। দিল্লীতে বসবাসকারী মুসলিমদের পুরুষানুক্রমে গঠিত বাসস্থান ছেড়ে যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতির সময় দেন নি।
  • (২) তিনি সকল প্রতিবাদকারীকে কঠোর হাতে দমন করেন। তাঁর দমন নীতির ফলে তার পরিকল্পনাটির জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়।
  • (৩) দিল্লীর অভিজাত, মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও ধর্মীয় নেতারা মহম্মদের বিরুদ্ধে চলে যান। তিনি আর কোনোদিনই তাদের সমর্থন ফিরে পাননি।
  • (৪) যদিও সুলতান দেবগিরি যাত্রাকারীদের অর্থ সাহায্য করেন, কিন্তু বরণীর মতে, গ্রীষ্মকালে দেবগিরি যাত্রার হুকুম দেওয়ায় পথ কষ্টে অনেকে মারা যান। নারী ও শিশুদের অবর্ণনীয় দুর্দশা ভোগ করতে হয়।
  • (৫) দেবগিরির জলহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে এবং দিল্লী ছেড়ে আসার দুঃখে অনেকে মারা যান। সুফীসন্ত ও মরমিয়া সাধকরা দিল্লীর খলিফা কেন্দ্রিক জীবনধারণ থেকে বঞ্চিত হয়ে গভীর জলে পড়েন।
  • (৬) সুফীসন্ত শেখ নাসিরুদ্দিন চিরাগ সুলতানের আদেশে দিল্লীতে অবস্থিত নিজ শিলশিলাহ সম্প্রদায়ের স্বার্থ ছেড়ে দিতে রাজী না হলে, সুলতান তাকে নির্যাতন করেন। এর ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।
  • (৭) দেবগিরিতে যে সকল কর্মচারী যেতে বাধ্য হন, তারা কাজকর্মে উৎসাহ দেখান নি।
  • (৮) ফেরিস্তার মতে ১৩২৮-২৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লী অরক্ষিত দেখে মোঙ্গল সেনা পাঞ্জাব লুঠ করে দিল্লীর কাছে এসে গেলে, সুলতান দিল্লী ছেড়ে যাওয়ার ভুল বুঝতে পারেন।

মহম্মদ বিন তুঘলকের পুনরায় রাজধানী দিল্লী

শেষ পর্যন্ত হতাশ সুলতান দেবগিরি থেকে মুসলিমদের আবার দিল্লীতে ফিরে আসার নির্দেশ দেন। দেবগিরি একেবারে পরিত্যক্ত না হয়ে, একটি শাসন কেন্দ্র হিসেবে থেকে যায়। সুলতান তাঁর অভিজাত, প্রধান কর্মচারী ও সরকারী দপ্তরগুলি আবার দিল্লীতে ফিরিয়ে আনেন।

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তরের ফলাফল

  • (১) রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনার ফলাফল দুদিক থেকে বিচার করা যায়। এই রাজধানী স্থানান্তর করণের প্রত্যক্ষ ফল ছিল বিপর্যয়কর। রাজধানী স্থানান্তর উপলক্ষে সুলতানের রাজকোষের বহু অর্থ ব্যয় হয়।
  • (২) কারণ, দেবগিরির নির্মাণ ও দিল্লীর অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সুলতান বহু টাকা খরচ করেন। সুলতান অভিজাত ও শাসকশ্রেণীর সমর্থন হারান। তাদের প্রভাবে সাধারণ লোকেরাও সুলতানের প্রতি বিরূপ হয়। সুলতান জনসমর্থন হারাবার জন্য তাঁর অন্যান্য সংস্কারগুলিকেও লোকে সন্দেহের চোখে দেখে।
  • (৩) সুলতানের মর্যাদা নষ্ট হয়। এই পরিকল্পনার পরোক্ষ ফল ছিল সুদূরপ্রসারী। যদিও মহম্মদ পুনরায় দিল্লীতে রাজধানী ফিরিয়ে আনেন, দেবগিরি বা দৌলতাবাদে বহু মুসলিম বসবাস করতে থাকেন। তারাই দক্ষিণে সুলতানি কর্মচারী ও শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন। এইভাবে হিন্দু অধুষিত দক্ষিণ ভারতে মুসলিম সংস্কৃতির প্রসার ঘটে।

উপসংহার :- দেবগিরিকে কেন্দ্র করে খানকা, মসজিদ, মিনারগুলি গড়ে ওঠে। হিন্দু, মুসলিম মিশ্র সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে থাকে। ডঃ নিজামীর মতে, এর ফলে ভবিষ্যতে বাহমনী রাজ্য গঠনের পথ প্রস্তুত হয়।

(FAQ) মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দিল্লীর কোন সুলতান রাজধানী স্থানান্তর করেন?

মহম্মদ বিন তুঘলক।

২. মহম্মদ বিন তুঘলক কোথা থেকে কোথায় রাজধানী স্থানান্তর করেন?

দিল্লী থেকে দেবগিরিতে।

৩. মহম্মদ বিন তুঘলক দেবগিরির নাম কি রাখেন?

দৌলতাবাদ।

৪. মহম্মদ বিন তুঘলক কখন রাজধানী স্থানান্তর করেন?

১৩২৭ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment