বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রসঙ্গে অধিক রাজস্ব, রাজস্বের পরিমাণ, কৃষকদের অবস্থা, সাধারণ মানুষের শোচনীয় অবস্থা ও কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে জানবো।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

বিষয়বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব
সাম্রাজ্যবিজয়নগর সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠাকাল১৩৩৬ খ্রি
আয়ের উৎসভূমি রাজস্ব
রাজস্ব আদায়নায়ক
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

ভূমিকা :- বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব। নায়করা রাষ্ট্রীয় তালুক বা নাড়ুগুলি থেকে এবং সামন্তপ্রভু বা অমর নায়কদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করত এবং রাজকোষে জমা দিত।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধিক রাজস্ব

দক্ষিণের বিজয়নগর রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা ছিল সামরিক কেন্দ্রিক। তাই ভূমিরাজস্ব খুব বেশি ছিল। কারণ নায়করা এই আদায়ের একটা অংশ পেত। একটি তথ্য থেকে জানা যায় বিজয়নগর রাজ্য থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হত তার অর্ধেক পেত প্রাদেশিক শাসনকর্তারা, স্বভাবতই ভূমি রাজত্ব ছিল অত্যধিক।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের মুকুটহীন রাজা নায়করা

প্রাদেশিক ও উপপ্রাদেশিক শাসক বা নায়করা ছিলেন নিজ নিজ অঞ্চলে মুকুটহীন রাজা। তাদের নিজস্ব দরবার ও সেনাদল ছিল। কেন্দ্রকে সৈন্য দল সরবরাহ করা ছিল তাদের প্রধান দায়িত্ব।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজস্বের পরিমাণ

  • (১) জমির উর্বরতা অনুযায়ী ভূমি-রাজস্ব দিতে হত। কৃষকদের উৎপন্ন শস্যের কত অংশ রাজস্ব দিতে হত, তার সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় না। তবে মনে করা হয়, উৎপন্ন শস্যের এক-ষষ্ঠাংশের বেশি ভূমি-রাজস্ব দিতে হত।
  • (২) তবে ন্যুনিজ-এর বিবরণে দেখা যায়, উৎপন্ন শস্যের এক-দশমাংশ রাজস্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এই মত গ্রহণ করা খুবই কষ্টকর। জমির মাটির উর্বরতার পার্থক্যের জন্য ভূমি-রাজস্বের হারও বিভিন্ন ছিল।
  • (৩) ভূমি রাজস্ব ছাড়াও প্রজাদের অন্যান্য করও দিতে হত। চোল আমলের মতো রাজস্ব নগদে অথবা পণ্যে দিতে পারত।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষকদের অবস্থা

বিজয়নগরের কৃষকদের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক করে কিছু বলা যায় না। কারণ, বিদেশি পর্যটকেরা রাজধানী শহরেই বেশি অবস্থান করায় গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে তাঁরা প্রায় উদাসীন ছিলেন।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের জনসাধারণের শোচনীয় অবস্থা

  • (১) করের পরিমাণ যে খুব বেশি ছিল এবং নানা ধরনের কর আদায়ের ফলে জনসাধারণের অবস্থা যে শোচনীয় ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণে যদিও জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা জানা যায় না।
  • (২) তবু কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকলে, জনসাধারণ রাজার কাছে আবেদন করতে পারত। বিদেশিদের বিবরণে দেখা যায়, রাজা কখনও কখনও কর মকুব করে দিয়েছেন, আবার দেখা যায় করের পরিমাণ হ্রাস করেছেন।
  • (৩) কোনো কোনো লেখক বিজয়নগরের কর ব্যবস্থাকে অত্যাচারের নামান্তর বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ড. শ্রীবাস্তব মনে করেন, তা যদি হত তাহলে বিজয়নগর সাম্রাজ্য দাক্ষিণাত্যে তিনশো বছর ধরে টিকে থাকতে পারত না। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের যদি কোনো সুনির্দিষ্ট রাজস্ব ব্যবস্থা না থাকত, তাহলে জনসাধারণের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দিত।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যে কৃষক বিদ্রোহ

আধুনিক অন্য এক ঐতিহাসিকের তথ্য থেকে জানা যায়, ১৩৭৯, ১৫০৬ ও ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষক-বিদ্রোহ ঘটেছিল।

উপসংহার :- Dr. C. V Vaidya তাঁর Downfall of Hindu India গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, বিজয়নগরের অর্থনীতি দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না। কারণ সাম্রাজ্যের ভূমিরাজস্বের একটা বড়ো অংশ প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও সমরনায়করা ভোগ করত।

(FAQ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আয়ের প্রধান উৎস কি ছিল?

ভূমি রাজস্ব।

২. বিজয়নগর সাম্রাজ্যে রাজস্ব আদায় করত কারা?

নায়করা।

৩. বিজয়নগর সাম্রাজ্যে নিজ নিজ অঞ্চলে মুকুটহীন রাজা ছিলেন কারা?

নায়করা।

৪. বিজয়নগরে ভূমি রাজস্বের পরিমাণ কত ছিল?

উৎপন্ন ফসলের ১/৬ বা ১/১০ অংশ।

Leave a Comment