বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নায়ক প্রথা

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নায়ক প্রথা প্রসঙ্গে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী, আয় ব্যয়ের হিসাব, রাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, জনকল্যাণমূলক কাজ, রাজস্ব আদায় মন্দিরের উপরে আধিপত্য, নায়কদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা ও কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে জানবো।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নায়ক প্রথা

বিষয়নায়ক প্রথা
সাম্রাজ্যবিজয়নগর সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠাতাহরিহর ও বুক্ক
শ্রেষ্ঠ রাজাকৃষ্ণদেব রায়
শেষ রাজাতৃতীয় রঙ্গ
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নায়ক প্রথা

ভূমিকা :- বিজয়নগরের প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থায় ‘নায়ক’ উপাধিধারী অভিজাত সামরিক শাসকদের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী

প্রতিটি উপপ্রদেশ অভিজাত বংশীয় অথবা রাজপরিবারের ‘নায়ক’ উপাধিধারী শাসনকর্তার হাতে ন্যস্ত থাকত। প্রাদেশিক নায়কগণ স্থানীয় সামরিক, অসামরিক বা বিচার ব্যবস্থার চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।

আয়-ব্যয়ের হিসেব

প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ বা গভর্নরগণ প্রদেশের নিয়মিত আয়ব্যয়ের হিসাব কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে বাধ্য থাকতেন। এমনকি প্রয়োজনে কেন্দ্রকে সামরিক সাহায্যদানেও প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ বাধ্য থাকতেন।

রাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ রাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতেন ঠিকই, কিন্তু শক্তিশালী ব্যক্তিত্বময় প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতেন। তবে অযোগ্যতা বা রাজদ্রোহের অভিযোগ থাকলে তাদের পদচ্যুত করা হত এবং তাঁদের জায়গির বাজেয়াপ্ত হত।

জনকল্যাণমূলক কাজ

তাঁরা কৃষি উন্নয়নের মতো জনকল্যাণমূলক কাজে কখনোই অমনোযোগী ছিলেন না। কৃষির উন্নতিতে তারা উৎসাহই দিতেন। দেবমন্দির ও অন্যান্য সৌধ নির্মাণেও তাঁরা উৎসাহ দিতেন। গ্রামের বৃক্ষরোপণ ও ধর্মরক্ষার কাজেও আত্মনিয়োগ করতেন।

কে কে দত্তের অভিমত

ড. কে. কে. দত্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের সবচেয়ে দায়ী করেছেন। তার মতে, যখন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ক্ষমতা চিরতরে অন্তর্হিত হয় তখন সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্যে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল তার জন্য প্রাদেশিক শাসনকর্তারা দায়ী ছিলেন।

রাজস্ব আদায়

বিজয়নগরের শাসনব্যবস্থায় সামরিক সামন্ত বা ‘নায়ক’ ও অমর নায়কদের বিশেষ স্থান ছিল। এরা কেন্দ্রকে সৈন্য জোগাত এবং তার বিনিময়ে জায়গির ভোগ করত। এরা সৈন্যপালনের জন্য আদায়ীকৃত রাজস্ব হতে খরচ কেটে নিয়ে রাজস্ব কেন্দ্রে জমা দিত। একটি তথ্য থেকে জানা যায় যে তারা আদায়ী রাজস্বের অংশ জমা দিত। তার উপর অধিকাংশই উপরি পাওনা হিসাবে আদায় করত।

মন্দিরের উপর আধিপত্য

মন্দিরগুলির উপরেও নায়কদের বা সামন্তদের আধিপত্য বিস্তৃত হওয়ায় সমাজজীবনে তারা অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হয়। এমনকি শহর, বন্দর ও বাজারগুলিও তারা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। এমনকি এই সকল স্থানে তারা খাজনা ও শুল্ক আদায় করত।

কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতা

  • (১) সামন্তপ্রভুরা বা নায়করা ধনশালী হয়ে ওঠে। এরাই ‘পলিগার’ নামে পরে অভিহিত হয়। এর ফলে রাজা দুর্বল হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে এরা অমান্য করত। ক্রমে নায়করা খুবই ক্ষমতাশালী ও স্বাধীনতাকামী হয়ে ওঠে।
  • (২) কৃষ্ণদেব রায়ের পর কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে নায়কদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয়।

শাসনব্যবস্থা নায়ক নির্ভর নয়

বিজয়নগরের শাসনব্যবস্থায় নায়কদের বিশেষ স্থান থাকলেও শাসনব্যবস্থা নায়ক-নির্ভর ছিল না। রাজা দুর্বল হলেই তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হত।

নায়কদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা

রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের পরই নায়কদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ রাজা নায়কদের মাধ্যমে রাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করতেন এবং এই শাসনব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ব্রাহ্মণ সেনাদের জেটিগুলি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। নায়ক ও ব্রাহ্মণদের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল।

কৃষক বিদ্রোহ

তারা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায়ের ফলে এখানে দু’একবার কৃষক বিদ্রোহও ঘটেছিল। বিজয়নগরের এই নায়কনির্ভর কৃষি অর্থনীতিতে অনেকেই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার উৎস সন্ধান করেছেন।

উপসংহার :- বিজয়নগরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নায়ক নির্ভর না হলেও সমগ্র সাম্রাজ্যেই এই সামরিক নায়কদের যে প্রাধান্য ছিল তা বিদেশিদের দৃষ্টিতেও ধরা পড়েছে।

(FAQ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নায়ক প্রথা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন কে?

হরিহর ও বুক্ক।

২. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক কে?

কৃষ্ণদেব রায়।

৩. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের কি বলা হত?

নায়ক।

৪. নায়ক প্রথা কি?

বিজয়নগর রাজ্যের প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থায় সামরিক শাসকদের উপাধি ছিল নায়ক।

Leave a Comment