কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

কাদম্বিনী গাঙ্গুলী -র জন্ম, বংশ পরিচয়, শিক্ষা, বিবাহ, প্রথম মহিলা স্নাতক, ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত, বঞ্চনার স্বীকার, ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন, বিলেত যাত্রা, বিহার ও ওড়িশা ভ্রমণ, নেপাল যাত্রা, কংগ্রেসের প্রতিনিধি ও বক্তৃতা প্রদান এবং তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম মহিলা স্নাতক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় প্রসঙ্গে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বংশ পরিচয়, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বিবাহ, সামাজিক বাধায় আক্রান্ত কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতের প্রথম মহিলা গ্ৰ্যাজুয়েট কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের ডাক্তারের ডিগ্ৰি অর্জন, বাংলার প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে স্মরণের কারণ ও তার মৃত্যু।

নারী চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

ঐতিহাসিক চরিত্রকাদম্বিনী গাঙ্গুলী
জন্ম১৮ জুলাই ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু৩ অক্টোবর ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ
পরিচিতিনারী চিকিৎসক
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়

ভূমিকা :- ব্রিটিশ ভারত -এর প্রথম দুই জন নারী স্নাতকের একজন এবং ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী চিকিৎসক। আনন্দীবাঈ জোশীর সাথে তিনিও হয়ে উঠেছিলেন ভারতের প্রথমদিককার একজন নারী চিকিৎসক।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর জন্ম

১৮ই জুলাই ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে বিহারের ভাগলপুরে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় জন্ম গ্ৰহণ করেন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর বংশ পরিচয়

ব্রাহ্ম সংস্কারক ব্রজকিশোর বসু ছিলেন তার পিতা। তাঁর মূল বাড়ি ছিলো বর্তমান বাংলাদেশ -এর বরিশালের চাঁদশীতে। তাঁর বাবা ভাগলপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর পড়াশোনা শুরু

দ্বারকানাথ ও তার বন্ধু কাদম্বিনীর পিসতুতো দাদা মনমোহনের হাত ধরে কাদম্বিনী তার পড়াশোনা আরম্ভ করেন হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ে।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর প্রশংসায় ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার

দ্বারকানাথের পোলিও আক্রান্ত পুত্র সতীশের জ্বরের সময় তার মাথা ধুইয়ে প্রাণরক্ষা করেছিলেন কাদম্বিনী। তার এই বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা করেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত ডাক্তার মহেন্দ্র লাল সরকার।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর বিবাহ

মেডিকেল কলেজে ঢোকার পরেই তিনি তার শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীকে বিয়ে করেন। দ্বারকানাথ বিখ্যাত সমাজসংস্কারক ও মানবদরদী সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন।

প্রবেশিকা পরীক্ষায় কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর দ্বিতীয় স্থান লাভ

স্কুলে পড়ার সময়ে কাদম্বিনী ১৮৭৮ সালে প্রথম মহিলা হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাস করেন।

প্রথম এফ এ -এর সূচনা

তার দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে বেথুন কলেজ প্রথম এফ.এ (ফার্স্ট আর্টস) এবং তারপর অন্যান্য স্নাতক শ্রেণি আরম্ভ করে।

সামাজিক বাধায় আক্রান্ত কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

হিন্দু রক্ষণশীল সমাজের দ্বারা তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে রক্ষণশীল বাংলা পত্রিকা বঙ্গবাসী তাকে পরোক্ষ ভাবে খারাপ ভাষায় সম্বোধন করেছিল। এর বিরুদ্ধে মামলা করে তিনি জয়লাভ করেন। বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশ চন্দ্র পালকে ১০০ টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়।

ভারতের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কাদম্বিনী এবং চন্দ্রমুখী বসু বেথুন কলেজের প্রথম গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন। তারা বি.এ পাস করেছিলেন। তারা ছিলেন ভারতে এবং সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত

গ্র্যাজুয়েট হবার পর কাদম্বিনী দেবী ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৮৪ সালে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম ছাত্রী হিসেবে প্রবেশ করেন।

বঞ্চনার স্বীকার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

মেডিকেল কলেজের অন্তিম পরীক্ষার সময় মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় ১ নম্বর কম দিয়ে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে ফেল করিয়ে দেয়।

অ্যালোপ্যাথি ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

অদম্য জেদ নিয়ে আবার লড়াই শুরু করেন তিনি শেষ পর্যন্ত প্রিন্সিপাল সাহেবের সার্টিফিকেট অর্জন করে তিনি অ্যালোপ্যাথি ডাক্তার  হন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ লাভ করে চিকিৎসক রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।

চিকিৎসক রূপে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর কর্মজীবন শুরু

১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি লেডি ডাফরিন হাসপাতালের চিকিৎসক রূপে নিযুক্ত হন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর বিলেত যাত্রা

১৮৯২ সালে তিনি বিলেতে গিয়ে এল. আর. সি. পি., এডিনবরা, এল. আর. সি. এস, গ্লাসগো ও জি. এফ. পি. এস ডাবলিন উপাধি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তিনিই হলেন বিলিতি ডিগ্রিধারী প্রথম মহিলা চিকিৎসক, যিনি ভারতে ফিরে এসে চিকিৎসার কাজ শুরু করেন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর পাশ্চাত্য চিকিৎসা রীতির অনুমতি লাভ

তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসারীতিতে চিকিৎসা করবার অনুমতি পান।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর বিহার ও ওড়িশা গমন

একটি সরকারি অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হিসেবে কাদম্বিনী ও তাঁর শৈশব সঙ্গিনী কবি কামিনী রায় মহিলা শ্রমিকদের দুর্দশা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখার জন্য বিহার ও ওড়িশায় গিয়েছিলেন।

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর নেপাল যাত্রা

১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাজমাতার চিকিৎসার জন্য তিনি নেপাল -এ গিয়েছিলেন। এই মহৎ প্রাণ মানবীর হাত ধরে নেপালে আধুনিক জন চিকিৎসার সূত্রপাত হয়।

কংগ্রেসের প্রতিনিধি কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বোম্বাইয়ে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে প্রথম যে ছজন নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের অন্যতম একজন ছিলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।

কংগ্রেসের অধিবেশনে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর বক্তৃতা প্রদান

তিনি ১৮৯০ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের ষষ্ঠ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা বক্তা।

সভাপতি ও সদস্য কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

কাদম্বিনী গান্ধীজীর সহকর্মী হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রানসভাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (ভারত সভা) -এর প্রথম সভাপতি এবং ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনের সদস্য ছিলেন।

ব্রাহ্মসমাজের সভাপতি কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

১৯১৪ সালে তিনি কলকাতায় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ -এর অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

সফল ও স্বাধীন ব্রাহ্ম নারী কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

বিখ্যাত আমেরিকার ইতিহাসবিদ ডেভিড কফ বলেছেন যে, “গাঙ্গুলির স্ত্রী কাদম্বিনী ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে সফল এবং স্বাধীন ব্রাহ্ম নারী।”

কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর মৃত্যু

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা অক্টোবর কাদম্বিনী বসু গঙ্গোপাধ্যায় একটি অপারেশন সেরে বাড়ি ফেরার পথে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বরণ করেন।

উপসংহার :- রাজনীতি ও নারী আন্দোলণের নেত্রী অ্যানি বেসান্তের মতে, “The first woman who spoke from the Congress platform, is a symbol that India’s freedom would uplift India’s womanhood.”


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “কাদম্বিনী গাঙ্গুলী” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণীয় কেন?

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম দুই নারী স্নাতকের একজন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি উনিশ শতকে বাঙলার সমাজে নারীর জীবন যখন ছিল খুবই পশ্চাদপদ এবং বহু প্রতিকূলতায় জর্জরিত, তখন সবরকম সামাজিক বাধার বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রথম মহিলা চিকিৎসক রূপে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন বাঙালি নারী কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।

২. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক কে?

১৮৮২ সালে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ও চন্দ্রমুখী বসু ।

৩. ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কে ছিলেন?

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।

৪. কাদম্বিনী গাঙ্গুলী কে ছিলেন?

ভারত তথা এশিয়ার প্রথম মহিলা ডাক্তার।

৫. কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কে ছিলেন?

কাদম্বিনী গাঙ্গুলী।

৬. ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কে ছিলেন?

কাদম্বিনী গাঙ্গুলী।

Leave a Comment