জাহাঙ্গীরের প্রশাসনিক ঘোষণা সমূহ প্রসঙ্গে অভিজাতদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন, খান-ই-খানানকে সম্মানজনক পদ প্রদান, মানসিংহের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন, সমর্থকদের উচ্চপদ দান, বিচারের ঘন্টা শিকল স্থাপন ও দার-উল-আমল জারী করা সম্পর্কে জানবো।
জাহাঙ্গীরের প্রশাসনিক ঘোষণা সমূহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | জাহাঙ্গীরের প্রশাসনিক ঘোষণা সমূহ |
রাজা | জাহাঙ্গীর |
রাজত্বকাল | ১৬০৫-১৬২৭ খ্রি |
পূর্বসূরি | আকবর |
উত্তরসূরি | শাহজাহান |
ভূমিকা :- জাহাঙ্গীরের প্রকৃত নাম ছিল সেলিম। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন খুবই উচ্ছৃঙ্খল। তিনি পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করেছিলেন। সিংহাসন লাভের পর তিনি কিছু প্রশাসনিক ঘোষণা করেন।
অভিজাতদের প্রতি জাহাঙ্গীরের ক্ষমা প্রদর্শন
জাহাঙ্গীর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসার পর তার শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বী অভিজাতদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং তাদের পদমর্যাদা ফিরিয়ে দেন।
জাহাঙ্গীর কর্তৃক খান-ই-খানানকে সম্মানজনক পদ প্রদান
জাহাঙ্গীরের চক্রান্তে আকবরের সভাসদ আবুল ফজল নিহত হন। সিংহাসনে বসার পর জাহাঙ্গীর আবুল ফজলের পুত্র খান-ই-খানানকে সম্মানজনক পদ দেন। মীর্জা আজিজ কোকাকেও তিনি আগের পদে বহাল রাখেন।
মানসিংহের প্রতি জাহাঙ্গীরের ক্ষমা প্রদর্শন
মান সিংহ-এর প্রতিও তিনি ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং তাকে মনসবদারের পদে বহাল রাখেন। কিন্তু মানসিংহকে তিনি কোনোদিন পূর্ণ বিশ্বাস করেন নি। তাঁর রাজত্বকালে মানসিংহ বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন নি।
জাহাঙ্গীর কর্তৃক সমর্থকদের উচ্চপদ দান
এছাড়া জাহাঙ্গীর তার সমর্থকদের বিভিন্ন উচ্চপদ দেন। নূরজাহান-এর পিতা মীর্জা গিয়াস বেগ ১৫০০ মনসবদারের পদ পান এবং “ইতিমাদউদদৌলা” খেতাব পান।
জাহাঙ্গীর কর্তৃক বিচারের ঘন্টা শিকল স্থাপন
জাহাঙ্গীর আগ্রা দুর্গের শাহ বুরুজ থেকে যমুনার তীর পর্যন্ত ত্রিশ গজ লম্বা সোনার তৈরি ঘণ্টা যুক্ত একটি শিকল টাঙ্গিয়ে দেন। যে সকল প্রজা ন্যায় বিচার পায় নি তারা এই শিকল ধরে টানলে সম্রাটের ঘরে ঘণ্টা বাজত। সম্রাট আবেদনকারীর প্রার্থনা নিজে বিচার করতেন। শিকলের অপব্যবহার করা হলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হত।
জাহাঙ্গীরের দার-উল-আমল জারী
জাহাঙ্গীর ১২টি আইন বা দার-উল-আমল জারী করেন। এই আইনগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য হল –
- (ক) তামায়া (বিশেষ বাণিজ্য শুল্ক), মীর বাহরী (নদী পথে বাহিত পণ্যের শুল্ক প্রভৃতি অতিরিক্ত কর রহিত করা হয়।
- (খ) বণিকদের অনুমতি ছাড়া তাদের মালে রাজকর্মচারীদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়।
- (গ) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীকে দান করা এবং উত্তরাধিকারী না থাকলে তা রাষ্ট্রের হাতে থাকার কথা বলা হয়।
- (ঘ) মদ্য ও অন্যান্য নেশার দ্রব্য তৈরি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়।
- (ঙ) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গচ্ছেদ করে অপরাধীকে শাস্তিদানের প্রথা রহিত করা হয়।
- (চ) জাগীরদার বা সরকারি কর্মচারীদের নিজ পরগণার স্থানীয় পরিবারে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়।
- (ছ) বছরের কয়েকটি বিশিষ্ট দিনে এবং প্রতি বৃহস্পতিবার পশুবধ নিষিদ্ধ করা হয়।
উপসংহার :- আইনগুলি সর্বক্ষেত্রে প্রকৃতভাবে প্রয়োগ করা হয় কিনা তা সঠিক জানা যায় নি। তবে জাহাঙ্গীর তাঁর পিতার মতই উদারনীতি নিয়ে শাসন চালাতে ইচ্ছা করেন তা এই আইনগুলি দ্বারা প্রমাণিত হয়।
(FAQ) জাহাঙ্গীরের প্রশাসনিক ঘোষণা সমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জাহাঙ্গীর।
আবুল ফজল।
খান-ই-খানান।
বৃহস্পতিবার।