সাতবাহনদের পরিচয় প্রসঙ্গে সাতবাহন রাজ্যের স্থাপনকাল, সাতবাহন রাজ্যের উদ্ভবের অর্থনৈতিক কারণ, সাতবাহন ও অন্ধ্র এবং অন্ধ্রভৃত্য সম্পর্কে জানবো।
সাতবাহনদের পরিচয়
বিষয় | সাতবাহনদের পরিচয় |
সাম্রাজ্য | সাতবাহন সাম্রাজ্য |
প্রতিষ্ঠাতা | সিমুক |
শ্রেষ্ঠ রাজা | গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী |
শেষ রাজা | যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী |
ভূমিকা :- ভট্টিপ্রলু শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, অশোক -এর বংশধরদের শাসনকালে দক্ষিণ ভারতে মৌর্য শাসন বিলুপ্ত হয়। ধ্বংস-প্রায় মৌর্য সাম্রাজ্যের ওপর স্থানীয় শক্তি স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করে।
সাতবাহন রাজ্যের স্থাপনকাল
- (১) মৌর্য সাম্রাজ্য -এর ক্ষয়শীল অবস্থায় কোনো এক সময় দক্ষিণে সাতবাহন শাসন স্থাপিত হয় বলে অনেক পণ্ডিত মনে করেন। অপর এক শ্রেণীর পণ্ডিত মনে করেন যে, প্রথম খ্রি পূর্বে যখন মগধ -এ শুঙ্গ বংশ -এর শাসন স্থাপিত হয়েছিল সেই সময় দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন রাজ্য স্থাপিত হয়।
- (২) ডঃ গোপাল আচারিয়ার মতে, “প্রাচীন ভারত -এ সাংস্কৃতিক ঐক্যকে রাজনৈতিক ঐক্যের বাঁধনে বাঁধবার চেষ্টার ক্ষেত্রে বিশাল ও সুশাসিত মৌর্য সাম্রাজ্যকে পথিকৃৎ এবং চমকপ্রদ কাজ বলে স্বীকার করলে, সাতবাহন সাম্রাজ্যকে একই প্রকারের পরবর্তী মহান প্রচেষ্টা বলা চলে। “
প্রাচীন ভারতের সাতবাহন রাজ্যের উদ্ভবের অর্থনৈতিক কারণ
- (১) মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন-এর পর যখন উত্তর ভারতে বৈদেশিক আক্রমণ হয় তখন দক্ষিণ ভারত বৈদেশিক আক্রমণ থেকে মুক্ত ছিল। সেই সুযোগে সাতবাহন বংশ সাম্রাজ্য স্থাপন করে।
- (২) দক্ষিণ ভারতে বৈদেশিক আক্রমণ এই সময় কেন ঘটেনি, সে প্রশ্নের একটা অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। উত্তর ভারতের মত দক্ষিণ ভারত তখনও কৃষিতে অগ্রসর হয়নি। দক্ষিণের বহু স্থান তখনও জঙ্গলাকীর্ণ ছিল।
- (৩) কৃষিকেন্দ্রিক স্বয়ং-সম্পূর্ণ গ্রামের সংখ্যা উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে অনেক কম ছিল। রাস্তাঘাট ও যোগাযোগও ভাল ছিল না। এজন্য দক্ষিণের সমৃদ্ধি এমন কিছু ছিল না যাতে বিদেশী আক্রমণকারীরা আকৃষ্ট হতে পারে।
- (৪) সাতবাহন যুগে দক্ষিণের বহু সমৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু তার আগে দক্ষিণে আপাতঃদৃষ্টিতে লোভনীয় কিছু বিদেশীদের কাছে ছিল না। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে মহারাষ্ট্র ও কলিঙ্গ ছিল মধ্যবর্তী সেতু।
সাতবাহন ও অন্ধ্র
- (১) মহারাষ্ট্রে সাতবাহনদের কথাই এখানে আলোচ্য। সাতবাহন রাজাদের পুরাণে অন্ধ্র ও অন্ধ্রভৃত্য বলা হয়েছে। পুরাণে তাদের সাতবাহন নামে অভিহিত করা হয়নি। তবে শিলালিপিতে সাতবাহন নাম পাওয়া যায়। এর থেকে প্রশ্ন উঠেছে যে, সাতবাহনদের আদি পরিচয় কি ছিল?
- (২) পণ্ডিতেরা বলেন যে, সাতবাহনদের সঙ্গে আদিতে অন্ধ্র জাতির সম্পর্ক না থাকলে পুরাণে এরকম নাম হত না। ভাণ্ডারকরের মতে, সাতবাহনরা ছিল আদিতে অন্ধ্র দেশের অধিবাসী, এজন্য পুরাণে তাদের নাম হয়েছে ‘অন্ধ্র’।
- (৩) নীলকণ্ঠ শাস্ত্রীর মতে, সাতবাহনরা আদিতে অন্ধ্রেই ছিল। যখন পুরাণের সঙ্কলন হয় তখন সাতবাহনদের শাসন অন্ধ্রদেশে সীমাবদ্ধ ছিল। এজন্য এদের নাম ‘অন্ধ্র’ দেওয়া হয়েছে।
- (৪) ডঃ রায়চৌধুরীর মতে, শক আক্রমণের ফলে পরবর্তী সাতবাহন রাজারা মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য অঞ্চল হারিয়ে কৃষ্ণা নদীর উপকূলে অন্ধ্রদেশে বসবাস করে। এজন্য তারা অন্ধ্র নাম পায়।
সাতবাহনদের অন্ধ্রভৃত্য নাম
‘অন্ধ্রভৃত্য’ নামটির ব্যাখ্যা বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। যেমন –
- (১) নীলকণ্ঠ শাস্ত্রীর মতে, সাতবাহন বা অন্ধ্ররা ছিল গোড়ায় মৌর্যদের অধীন কর্মচারী বা ভৃত্য। পরে তারা দক্ষিণে এক স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করে। সেই অর্থে তাদের নাম হয় ‘অন্ধ্রভৃত্য’।
- (২) ডঃ ডি. সি. সরকারের অভিমত হল যে, ‘অন্ধ্রভৃত্য’ বলতে সাতবাহনদের বোঝায় না। অন্ধ্র বা সাতবাহনদের যারা ভৃত্য ছিল তাদের বোঝায়। এই অর্থে তিনি আভীরদের বোঝাতে চেয়েছেন। আভীর জাতি অন্ধ্র বা সাতবাহনদের সামন্ত বা ভৃত্য ছিল এই অর্থে তাদের ‘অন্ধ্রভৃত্য’ বলা হয়েছে।
উপসংহার :- ডঃ গোপাল আচারিয়া যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা যুক্তি-সঙ্গত বলে বেশীর ভাগ পণ্ডিত মনে করেন। তাঁর মতে, “অন্ধ্র ছিল উপজাতীয় নাম, সাতবাহন ছিল রাজবংশের নাম এবং সাতকর্ণী ছিল সাতবাহন বংশের রাজাদের পদবী।”
(FAQ) সাতবাহনদের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১. সাতবাহন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন কে?
সিমুকে।
২. পুরাণে সাতবাহনরা কি নামে পরিচিত?
অন্ধ্র।
৩. সাতবাহন রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা কে?
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।