ইতিহাস-পুরাণ ঐতিহ্য প্রসঙ্গে পুরাণ চর্চা, কৌটিল্যের বক্তব্য, পুরাণের বিষয়বস্তু, পুরাণের গুরুত্ব ও প্রাণীর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানবো।
পুরাণ-ইতিহাস বা ইতিহাস-পুরাণ ঐতিহ্য প্রসঙ্গে বৈদিক সাহিত্যে ‘ইতিহাস-পুরাণ’ কথাটি একত্রে উচ্চারিত, পুরাণ চর্চা, পুরাণের বিষয়বস্তু, ইতিহাস ও পুরাণ সমার্থক সম্পর্কে জানব।
ইতিহাস-পুরাণ ঐতিহ্য
ঐতিহাসিক বিষয় | ইতিহাস-পুরাণ ঐতিহ্য |
উল্লেখ | বৈদিক সাহিত্য |
অথর্ববেদে উল্লেখ | ইতিহাস |
পুরাণ অর্থ | প্রাচীন |
পুরাণের লক্ষণ | পাঁচটি |
অর্থশাস্ত্র | কৌটিল্য |
ভূমিকা :- অথর্ববেদ-এ ‘ইতিহাস’ শব্দটির উল্লেখ আছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রাচীন ভারত-এ বিশ্লেষণধর্মী ইতিহাসের অস্তিত্ব না থাকলেও ভারতবাসী সুদূর অতীতেই ‘ইতিহাস’ শব্দটির সৃষ্টি করেছিল। ‘পুরাণ’ বলতে বোঝায় প্রাচীন কাহিনি সংবলিত গ্রন্থাদি। বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্যে ‘ইতিহাস-পুরাণ’ কথাটি একত্রে উচ্চারিত হয়েছে। এর থেকে মনে হয় যে, এই শব্দ দুটি সমার্থক।
পুরাণ-চর্চা
‘পুরাণ’ কথার অর্থ হল ‘প্রাচীন’ এবং এর মধ্যে গাথা, কাহিনি, উপকথা, উপাখ্যান সবই অন্তর্ভুক্ত। ছান্দোগ্য উপনিষদে ‘ইতিহাস-পুরাণ’-কে ‘পঞ্চম বেদ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ‘শতপথ ব্রাক্ষ্মণ’-এ বলা হচ্ছে যে, প্রাত্যহিক ইতিহাস পাঠ দেবকুলের সন্তোষ সাধন করে। অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠানে ‘ইতিহাস-বেদ’ আবৃত্তির কথা বলা হয়েছে।
কৌটিল্যের বক্তব্য
কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’-তে বিধান দেওয়া হয়েছে যে, রাজা যেন দিনের কিছু সময় অবশ্যই ইতিহাসের বিবরণ শ্রবণ করেন। প্রাচীন যুগে ইতিহাসকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হত। সম্ভবত, এই কারণেই বর্ষাকালে এবং উৎসব-এর সময় প্রত্যেক গ্রাম ও শহরে পুরাণের বর্ণনা ছিল বার্ষিক অনুষ্ঠানের অঙ্গ।
পুরাণের বিষয়বস্তু
‘অমরকোষ’, বায়ুপুরাণ, মৎস্যপুরাণ প্রভৃতির মতে, পুরাণের লক্ষণ পাঁচটি – সর্গ (সৃষ্টি), প্রতিসর্গ (প্রলয়ের পর নবসৃষ্টি), বংশ (দেবতা ও ঋষিদের বংশতালিকা), মন্বন্তর (চোদ্দোজন মনুর শাসনের বিবরণ) এবং বংশানুচরিত (রাজাদের বংশাবলি)। অর্থাৎ ইতিহাস-পুরাণ অনুসরণ করে জগতের সৃষ্টি, মানুষের উদ্ভব, মানবসমাজের উন্মেষ প্রভৃতি সম্পর্কে প্রাচীন ভারতীয় ধারণার কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়।
পুরাণের গুরুত্ব
ভারতীয় পুরাণের সংখ্যা ১৮টি। এর মধ্যে আছে ব্রহ্মপুরাণ, পদ্মপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, মৎস্যপুরাণ প্রভৃতি। পুরাণগুলি বিভিন্ন সময়ে রচিত হয়েছে। কোনো কোনো পুরাণের সংকলনের কাজ আবার চলেছে দীর্ঘদিন ধরে।
(১) রাজবংশের বিবরণ
পুরাণে বর্ণিত রাজবংশাদির বিবরণ ঐতিহাসিকদের কাছে মূল্যবান। এইসব অধ্যায়ে হর্ষঙ্ক, শৈশুনাগ, নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ, কান্ব, সাতবাহন, গুপ্ত প্রভৃতি রাজবংশ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য আছে।
(২) বিদেশি জাতি সম্পর্কে তথ্য
এইসব অংশে শক, যবন, আভীর, হুন প্রভৃতি বিদেশি জাতি সম্পর্কেও নানা মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক পার্জিটার এবং ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী পুরাণে বর্ণিত এইসব বংশাবলির ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস রচনায় প্রয়াসী হন।
(৩) অন্যান্য তথ্য
এ ছাড়া ঈশ্বরতত্ত্ব, মূর্তিপূজা, সমাজ, স্থাপত্য, সংগীত, জ্যোতিষ, নদনদী, পাহাড়পর্বত, তীর্থস্থান প্রভৃতি বহু বিষয়ের ওপর আলোচনা আছে।
পুরাণের সীমাবদ্ধতা
পুরাণের বর্ণনায় নানা ত্রুটিবিচ্যুতি, অতিশয়োক্তি, অলীক কল্পনা, পরবর্তীকালের সংযোজন প্রভৃতি আছে। যেমন –
(১) পুরাণ ইতিহাস গ্রন্থ নয়
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক সাহিত্য এক নয়। ইতিহাস-ঐতিহ্য হল ইতিহাস-পুরাণ, যা প্রধানত বিশেষ সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশে পুরোহিত শ্রেণির দ্বারা সৃষ্ট।
(২) অতিশয়োক্তি
পুরাণে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে অতিশয়োক্তি করা হয়েছে। বহুক্ষেত্রে তাতে কাল্পনিক বক্তব্য যুক্ত করা হয়েছে।
(৩) পরবর্তী যুগের রচনা
পুরাণে উল্লিখিত বহু ঘটনা পরবর্তীকালের রচনা। যে সময়ের ইতিহাসের উপাদানগুলি হারিয়ে গেছে সে সম্পর্কে কাহিনি লিপিবদ্ধ করে তা প্রাচীন রচনা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছে। এসব সত্ত্বেও ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
উপসংহার :- প্রাচীন ভারতীয়, গ্রিক সহ বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় বিভিন্ন পুরাণ বা পৌরাণিক কাহিনীর উল্লেখ আছে। এগুলি থেকে সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনার ধারণা পাওয়া যায়।
(FAQ) ইতিহাস-পুরাণ ঐতিহ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
অথর্ববেদে।
পুরাণ।
বৈদিক সাহিত্যে।
প্রাচীন।