গোরা উপন্যাস -এর লেখক, পত্রিকায় প্রকাশ, প্রকাশকাল, উৎসর্গ, পটভূমি, মূল বিষয়, গোরা চরিত্রের সৃষ্টি ও উত্তরণ, দার্শনিক বিতর্কের ইতিহাস, জাতীয়তাবাদী নেতাদের শিক্ষা, জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভূমিকা ও উপন্যাসের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানবো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গোরা উপন্যাস প্রসঙ্গে গোরা উপন্যাসের প্রকাশকাল, গোরা উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট, প্রবাসী পত্রিকায় গোরা উপন্যাস প্রথম প্রকাশ, গোরা উপন্যাসের মূল বক্তব্য, গোরা উপন্যাসের চরিত্র, গোরা উপন্যাসের নায়ক চরিত্র গোরার প্রকৃত পরিচয়, গোরা উপন্যাসের সুচরিতা চরিত্র, গোরা উপন্যাসের বিষয়বস্তু, গোরা উপন্যাসের নামকরণ, গোরা উপন্যাসের গুরুত্ব ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে গোরা উপন্যাসের ভূমিকা।
গোরা উপন্যাস
লেখক | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
ধরণ | উপন্যাস |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশকাল | ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- রবীন্দ্র সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘতম সাহিত্য হল গোরা উপন্যাস। এই উপন্যাসের গোরা চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি ঔপনিবেশিক ভারত -এ স্বদেশিকতা ও জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন।
পত্রিকায় গোরা উপন্যাসের প্রকাশ
প্রথমে ১৯০৭ থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রবাসী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
গোরা উপন্যাসের প্রকাশকাল
বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন চলাকালে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই উপন্যাসটি প্রকাশ করেন।
গোরা উপন্যাসটি উৎসর্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোরা উপন্যাসটি উৎসর্গ করেন তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথক ঠাকুরকে।
গোরা উপন্যাসের পটভূমি
গোরা উপন্যাসটি ১৮৮০ -এর দশকে ব্রিটিশ রাজত্বকালের সময়কার কলকাতার পটভূমিতে লেখা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘতম উপন্যাস গোরা
লেখার ক্রম অনুযায়ী পঞ্চম এবং রবীন্দ্রনাথের তেরোটি উপন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম।
দার্শনিক বিতর্কের উপন্যাস গোরা
এটি রাজনীতি এবং ধর্ম নিয়ে দার্শনিক বিতর্কে সমৃদ্ধ একটি উপন্যাস।
গোরা উপন্যাসের লিখিত বিষয়
উপন্যাসে মুক্তি, সর্বজনীনতা, ভ্রাতৃত্ব, লিঙ্গ, নারীবাদ, বর্ণ, শ্রেণি, ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা, নগর অভিজাত বনাম গ্রামীণ কৃষক, ঔপনিবেশিক শাসন, জাতীয়তাবাদ এবং ব্রাহ্ম সমাজ নিয়ে লেখা রয়েছে।
গোরা উপন্যাসের মূল বিষয়
গোরা উপন্যাস দুই প্রেমিক জুটির দুটি সমান্তরাল প্রেমের গল্প নিয়ে গঠিত। একদিকে গোরা এবং সুচরিতা, অন্যদিকে বিনয় এবং ললিতা।
গোরা উপন্যাসের চরিত্র গুলির আবেগপূর্ণ ক্রমবিকাশ
উনিশ শতকের শেষদিকে ভারতে প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে প্রধান চরিত্র গুলির আবেগপূর্ণ ক্রমবিকাশ দেখানো হয়েছে।
গোরা উপন্যাসে বিরোধ ও সমন্বয়
গোরা উপন্যাসটিতে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের, সমাজের সঙ্গে ধর্মের এবং ধর্মের সঙ্গে মানব সত্যের বিরোধ ও সমন্বয়ের ছোঁয়া রয়েছে ।
গোরা চরিত্রের সৃষ্টি
স্বদেশী আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ -এ রবীন্দ্রনাথকে আত্মনুসন্ধানী করে তুলেছিল। সেই অন্বেষণ থেকেই দেশ, জাতি ও জাতিসত্তার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনে তিনি গোরাকে সৃষ্টি করেন ।
গোরা চরিত্রের উত্তরণ
‘গোরা’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের হিন্দুত্ববাদী সংস্কার থেকে বিশ্বমানবতায় উত্তরণ দেখিয়েছেন।
গোরা উপন্যাসের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী নেতাদের শিক্ষা
প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথ গোরা চরিত্রটির মধ্য দিয়ে তৎকালীন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতাদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন যে, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত।
জাতীয়তাবাদ বিকাশে গোরা উপন্যাসের ভূমিকা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ উপন্যাস ভারতের জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
(১) প্রকৃত ভারতের স্বরূপ তুলে ধরা
গোরা উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গোরা বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিতে গিয়ে ভারতবর্ষের সত্যিকারের রূপটি চিনতে পারেন।
(২) ভারতের সত্য পরিচয়
লেখক সকলকে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ -এর সত্য উপলব্ধি করিয়ে দেওয়ার জন্য গোরাকে নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
(৩) ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্বহীনতা
ভারতীয় সভ্যতার প্রতি ব্রিটিশদের ঘৃণা ও বিদ্বেষ লক্ষ্য করে গোরা উগ্র হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু পরে সে উপলব্ধি করে যে ধর্মীয় পরিচয় একমাত্র বা সবথেকে বড় পরিচয় নয়।
(৪) দেশ প্রেম
গোরা নিষ্ঠাবান, গোঁড়া ব্রাহ্মণ, কৃষ্ণ দয়ালু আনন্দময়ীর সন্তান হলেও ছিলেন একজন দেশ প্রেমিক ও রাজনৈতিক কর্মী। ভারতে সীমাহীন দুঃখ, দারিদ্র, অভাব, অনটন, প্রভৃতি সত্বেও ইংরেজদের সঙ্গে মারামারিকে শ্রেয় বলে মনে করত। সঙ্গী হিসাবে তিনি সমাজের মানুষকে আপনজন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
(৫) গোরার আদর্শ
সমাজের শিক্ষিত শ্রেণীর সামনে গোরাকে দাঁড় করিয়ে লেখক সমাজ, ধর্ম, দেশ সম্পর্কিত গোরার আদর্শ ও বক্তব্যকে তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “হিন্দু এক জাতি, দল নয় এই জাতির তো কোনো সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ নয়। আর হিন্দু ধর্ম মায়ের মত নানাভাবে ও নানা মতের মানুষকে কোল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
(৬) জাতীয়তাবোধে জাগ্রত করা
তিনি দেশবাসীকে জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনে বর্বরতা ও নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেন। এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য ভারতবর্ষকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “মা তুমি আমার মা, আমি ভারতীয়”।
বিনোদনে গোরা উপন্যাসের ব্যবহার
- (১) এই উপন্যাস অবলম্বনে পরিচালক নরেশ মিত্র ১৯৩৮ সালে একই ‘গোরা’ নামেই একটি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।
- (২) ২০১৫ সালে পরিচালক শুক্লা মিত্র ‘গোরা’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
- (৩) হিন্দি চ্যানেল দূরদর্শন ২০১২ সালে ২৬ পর্বের একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক সম্প্রচার করে, যার প্রযোজক ছিলেন গার্গি সেন এবং পরিচালক ছিলেন সোমনাথ সেন।
গোরা উপন্যাসের মূল্যায়ন
গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমন্বয়বাদী দেশাত্মবোধ ও জাতির সংকীর্ণতা দূরে সরিয়ে মিলনের মধ্য দিয়ে ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। এখানেই উপন্যাসের সার্থকতা।
উপসংহার :- ভারতবর্ষের মত এক বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশে অপরাপর সমস্ত জাতি, ধর্ম এবং সম্প্রদায়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হল এক স্বাস্থ্যকর গণতন্ত্রের লক্ষণ। আর তাই ‘গোরা’ উপন্যাসটি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পুনর্বার পড়া ও ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “গোরা উপন্যাস” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) গোরা উপন্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
প্রবাসী পত্রিকায়।
১৯১০ খ্রিস্টাব্দ।
স্বদেশী আন্দোলন।
প্রবাসী পত্রিকায়।
স্বদেশ প্রেম।