গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সাম্রাজ্য নীতি প্রসঙ্গে আলাউদ্দিন অপেক্ষা আগ্ৰাসী, তেলেঙ্গানায় অভিযান, উড়িষ্যা জয়, মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ, বাংলা অভিযান সম্পর্কে জানবো।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সাম্রাজ্য নীতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সাম্রাজ্য নীতি |
সুলতান | গিয়াসউদ্দিন তুঘলক |
তেলেঙ্গানা অভিযান | ১৩২১ ও ১৩২৩ খ্রি: |
বাংলা অভিযান | ১৩২৩-২৪ খ্রি: |
মৃত্যু | ১৩২৩ খ্রি: |
উত্তরসূরি | মহম্মদ বিন তুঘলক |
ভূমিকা :- সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক আভ্যন্তরীণ সংগঠনের ক্ষেত্রে যেরূপ দক্ষতা দেখান, সুলতানি সাম্রাজ্যের সীমা বিস্তারের জন্যও সমান প্রয়াস দেখান।
আলাউদ্দিন অপেক্ষা আগ্ৰাসী গিয়াসউদ্দিন তুঘলক
তিনি আলাউদ্দিন খলজি অপেক্ষা বেশী আগ্রাসী ছিলেন। যে ক্ষেত্রে আলাউদ্দিন দক্ষিণের রাজ্যগুলির বশ্যতা পেয়ে সন্তুষ্ট হন, সেক্ষেত্রে গিয়াসউদ্দিন দক্ষিণের রাজ্যগুলিকে প্রত্যক্ষ শাসনে আনার জন্য চেষ্টা চালান। আলাউদ্দিনের পর সাম্রাজ্য-এর যে সকল অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দেয়, তা তিনি কঠোর হাতে দমন করেন।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের তেলেঙ্গানায় প্রথম অভিযান
- (১) মালিক খসরুর রাজত্বকালে তেলেঙ্গানার রাজা প্রতাপরুদ্রদেব দিল্লীর প্রতি আনুগত্য তুলে নেন এবং কর প্রদান বন্ধ করেন। ১৩২১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র জৌনা খান বা জুনা খানকে এই বিদ্রোহ দমনের জন্য পাঠান।
- (২) প্রতাপরুদ্র তেলেঙ্গানার দুর্গে কয়েক মাস অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধি প্রার্থনা করলে, জৌনা খান তাঁর পূর্ণ আত্মসমর্পণ দাবী করেন। এর ফলে প্রতাপরুদ্র মরিয়া হয়ে যুদ্ধ চালান। জৌনা খানের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয় এবং তার সেনাদলে বিদ্রোহ দেখা দেয়।
- (৩) ইতিমধ্যে গুজব ছড়ায় যে, দিল্লীতে সুলতান গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। এই গুজবে বিচলিত হয়ে জৌনা অবরোধ তুলে দিল্লীতে ফিরে আসেন। সুলতান তাঁর পুত্রকে এই বিফলতার জন্য ক্ষমা করেন।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের তেলেঙ্গানায় দ্বিতীয় অভিযান
- (১) এরপর ১৩২৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান গিয়াসউদ্দিনের নির্দেশে জৌনা খানের নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার তেলেঙ্গানায় অভিযান পাঠান হয়। তিনি দিল্লীর সঙ্গে যোগাযোগের পথ ঠিক রাখার জন্য বিদর ও আর কয়েকটি দুর্গ অধিকার করেন।
- (২) তারপর তিনি তেলেঙ্গানা দুর্গ আক্রমণ করেন। পাঁচ মাস নিষ্ফল বাধাদানের পর প্রতাপরুদ্র দেব আত্মসমর্পণ করেন। তাকে বন্দী করে দিল্লীতে পাঠান হয়। ডঃ বি. পি. সাক্সেনার মতে, তিনি আত্মহত্যা করেন। তেলেঙ্গানা সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
- (৩) তেলেঙ্গানাকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে বিভিন্ন তুর্কী শাসনকর্তার দ্বারা শাসনের ব্যবস্থা করা হয়। বরঙ্গলের নতুন নামকরণ করা হয় সুলতানপুর। জৌনা খান মালাবার আক্রমণ করে মাদুরা অধিকার করেন। তিনি রাজমান্দ্রি অধিকার করেন।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের উড়িষ্যা জয়
উড়িষ্যা রাজ দ্বিতীয় ভানুদেব বরঙ্গলের রাজা প্রতাপ রুদ্রকে সুলতানের বিরুদ্ধে সাহায্য করেন। এজন্য যুবরাজ জৌনা খান ভানুদেবকে যুদ্ধে পরাস্ত করে প্রচুর ধনরত্ন, বহু রণহস্তী অধিকার করেন। এই সকল লুণ্ঠিত ধনরত্ন সহ জৌনা খান দিল্লীতে ফিরে আসেন।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ
গিয়াসউদ্দিনের আমলে যখন দক্ষিণে অভিযান পাঠান হয়, সেই সময় ১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে এক মোঙ্গল আক্রমণ ঘটে। সুলতানের সীমান্ত সেনাপতি বাহাউদ্দিন ঘুরশাস্প সম্মুখ যুদ্ধে বহু মোঙ্গল সেনাকে নিহত করায় মোঙ্গল আক্রমণকারীরা পিছু হঠে যায়।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের বাংলা অভিযান
- (১) গিয়াসউদ্দিন এরপর বাংলায় বিদ্রোহ দমনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। গিয়াসউদ্দিন বলবন-এর মৃত্যুর পর বুঘরা খাঁর আমল থেকে বাংলায় প্রায় একটি স্বাধীন সুলতানির উদ্ভব হয়। বুঘরা খাঁর বংশধরেরাই বাংলা শাসন করতে থাকেন।
- (২) বুঘরা খাঁর বংশধর তিন ভাই, যথা গিয়াসুদ্দিন, শিহাবুদ্দিন ও নাসিরুদ্দিনের মধ্যে বাংলার সিংহাসন নিয়ে বিরোধ বাঁধে। জ্যেষ্ঠ গিয়াসুদ্দিন সকল ক্ষমতা অধিকার করলে কনিষ্ঠ নাসিরুদ্দিন, তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লীর সাহায্য চান।
- (৩) বাংলায় হস্তক্ষেপের এই সুযোগ সুলতান গিয়াসুদ্দিন তুঘলক ছাড়তে রাজী হননি। তিনি ১৩২৩-১৩২৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাংলা অভিযান নিজেই পরিচালনা করেন।
- (৪) তিনি বাংলার গিয়াসউদ্দিনকে পরাস্ত করে উত্তর বাংলায় নাসিরুদ্দিনকে সামন্ত হিসেবে বসিয়ে দেন। পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা দিল্লীর অধিকারে রাখা হয়। বাংলা থেকে ফেরার পথে সুলতান ত্রিহুত জয় করেন।
উপসংহার :- বাংলা থেকে দিল্লি ফিরে আসার সময় গিয়াসউদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র জুনা খান পিতাকে সম্বর্ধনার জন্য দিল্লির নিকট আফগানপুরি গ্রামে একটি কাঠের তৈরি মন্ডপ নির্মাণ করেন। সুলতান গিয়াস উদ্দিন এই মন্ডপ চাপা পড়ে নিহত হন।
(FAQ) গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সাম্রাজ্য নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জুনা খান বা মহম্মদ বিন তুঘলক।
প্রতাপরুদ্রদেব।
দ্বিতীয় ভানুদেব।
১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে।