প্রথম কনস্টানটাইন

রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন প্রসঙ্গে প্রথম কনস্টানটাইনের প্রথম জীবন, প্রথম কনস্টানটাইনের প্রকৃত নাম, প্রথম কনস্টানটাইনের সম্রাট পদ লাভ, প্রথম কনস্টানটাইনের সংস্কারকার্য, প্রথম কনস্টানটাইনের রাজধানী পরিবর্তন, প্রথম কনস্টানটাইনের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ, প্রথম কনস্টানটাইনের মিলানের অনুশাসন, প্রথম কনস্টানটাইনের শাসন সংস্কার ও প্রথম কনস্টানটাইনের মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোচনা।

সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন

ঐতিহাসিক চরিত্রপ্রথম কনস্টানটাইন
অপর নামকনস্টানটাইন দ্য গ্রেট
প্রকৃত নামফ্লেভিয়াস ভ্যালেরিয়াস অরেলিয়াস কনস্ট্যান্টিনাস
রাজত্বকাল৩০৬-৩৩৭ খ্রি.
রাজধানীরোম, বাইজানটিয়াম
ধর্মখ্রিস্টধর্ম
মৃত্যু৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ
প্রথম কনস্টানটাইন

ভূমিকা :- সম্রাট ডায়োক্লেসিয়ানের সিংহাসন ত্যাগের পর তাঁর প্রচলিত শাসনব্যবস্থায় নানা জটিলতা দেখা দেয়। ৩০৬ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিয়াসও মারা যান। তখন গল ও ব্রিটেনের লিজিয়নগুলি কনস্টান্টিয়াসের পুত্র কনস্টানটাইনকে সম্রাট ঘোষণা করে। এইভাবে গৃহযুদ্ধের আপাত সংকট কাটিয়ে তিনি রোমের সম্রাট হন। সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইনই ইতিহাসে ‘কনস্টানটাইন দ্য গ্রেট’ নামে পরিচিত। তাঁর প্রকৃত ও সম্পূর্ণ নাম ‘ফ্লেভিয়াস ভ্যালেরিয়াস অরেলিয়াস কনস্ট্যান্টিনাস’। তিনি ৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।

প্রথম কনস্টানটাইনের সংস্কার

সম্রাট কনস্টানটাইন নানা সংস্কারকার্যে প্রয়াসী হয়েছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সংস্কার হল রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী পরিবর্তন এবং খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ ও খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রীয় অনুমোদন দান।

(১) সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন কর্তৃক রাজধানী পরিবর্তন

তাঁর আমলে রোমান সাম্রাজ্য পশ্চিম ও পূর্ব এই দুই অংশে বিভক্ত হয়। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী লিসিনিয়াস-কে পরাজিত ও নিহত করে উভয় অংশেরই সম্রাট হন কনস্টানটাইন। সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় একমাত্র রাজধানী রোম থেকে তা আর শাসন করা সম্ভব ছিল না। তাই ৩৩০ খ্রিস্টাব্দে কনস্টানটাইন কুয়সাগরের তীরবর্তী বাইজানটিয়াম-এ দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এর নাম হয় কনস্ট্যানটিনোপল (বর্তমান নাম ইস্তানবুল)। কার্যত সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যথা – (ক) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য, যার রাজধানী ছিল রোম এবং (খ) পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য, যার রাজধানী ছিল বাইজানটিয়াম বা কনস্ট্যানটিনোপল।

(২) প্রথম কনস্টানটাইনের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ

কনস্টানটাইনের নানা কাজের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজ হল তিনি ৩১২ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং এই ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। কনস্টানটাইনের রাজত্বকালে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও খ্রিস্টধর্ম ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছিল। দূরদর্শী সম্রাট বুঝতে পেরেছিলেন যে অত্যাচার বা Persecution নীতির দ্বারা খ্রিস্টধর্মের প্রসার রোধ করা সম্ভব নয়। বরং সাম্রাজ্যের উন্নতি ও স্থায়িত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন প্রয়োজন।

(৩) মিলানের অনুশাসন

কনস্টানটাইন ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে মিলান থেকে এক নির্দেশনামা জারি করেন যা মিলানের অনুশাসন (Edict of Milan) নামে খ্যাত। এতে বলা হয় – (ক) সরকারের রাজধানী রোমের পরিবর্তে হল মিলান, (খ) খ্রিস্টানরা ধর্মের দিক থেকে স্বাধীন, (গ) খ্রিস্টধর্ম হল রাষ্ট্রীয় ধর্ম এবং (ঘ) অন্যান্য ধর্মের প্রতি রাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে।

(৪) প্রথম কনস্টানটাইনের শাসন সংস্কার

সম্রাট ডায়োক্লেসিয়ান প্রবর্তিত পন্থা অনুসরণ করে কনস্টানটাইন শাসন সংস্কারে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। (ক) তিনি একজন সেনাপতির অধীনে বেশি সৈন্য রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না। তাই সৈন্যের সংখ্যা কমিয়ে দেন। (খ) তিনি প্রাদেশিক শাসকদের সামরিক ক্ষমতা কেড়ে নেন। (গ) প্রদেশগুলিকে ছোটো ছোটো জেলায় বিভক্ত করে প্রতিটি জেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেন। (ঘ) জেলাগুলিকে একত্রিত করে তেরোটি বড়ো বিভাগ গঠন করেন। চারজন প্রিফেক্ট-এর হাতে এগুলির শাসনভার অর্পণ করেন।(ঙ) তিনি কনস্ট্যানটিনোপল-এ নতুন সেনেট ও রাজকর্মচারীর পদ সৃষ্টি করেন। (চ) তিনি নিরঙ্কুশ শাসন ব্যবস্থার প্রচলন করেন।

আধুনিক বাইজানটিয়াম নগরী গঠনে কনস্টানটাইনের অবদান

তাঁর নির্দেশে বাইজানটিয়ামে রাজপ্রাসাদ, রাজপথ, স্নানাগার, ঘরবাড়ি প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়। বাইজানটিয়ামকে তিনি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি ঐক্যবদ্ধ রোমান সাম্রাজ্যকে শাসন করেন।

প্রথম কনস্টানটাইনের মূল্যায়ন

সম্রাট কনস্টানটাইন খ্রিস্টানদের প্রতি তাঁর উদার মনোভাব এবং কনস্ট্যানটিনোপল নগরী প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয়। তবে তাঁর সংস্কারগুলি যে ত্রুটিহীন ছিল তা নয়। তিনি সীমান্তকে সুরক্ষিত করতে পারেননি। ফলে বর্বর আক্রমণ সহজ হয়। তা ছাড়া কনস্ট্যানটিনোপল রোমান শাসনের কেন্দ্রভূমি হওয়ায়, রোম নগরীর অবক্ষয় শুরু হয়েছিল। তাই বলা যায়, তিনি আপাতভাবে রোমান সাম্রাজ্যে স্থিতি আনতে পারলেও, তাঁর রাজত্বকালেই রোমান সাম্রাজ্যের অবক্ষয় দেখা যায়।

উপসংহার :-  ৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে কনস্টানটাইনের মৃত্যুর পর রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে আবার গৃহযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হয়। এর সাথেই চলতে থাকে বহিরাগত জাতিগুলির আক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে সম্রাট থিওডোসিয়াস (৩৭৯-৩৯৫ খ্রি.) বর্বরদের হাত থেকে কোনোক্রমে রোমকে রক্ষা করেন। ৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর পুত্রদের হাতে রোমান সাম্রাজ্য বিভক্ত হয়ে যায়। তাঁর এক পুত্র হনোরিয়াস (Honorius) রোমের পশ্চিম সাম্রাজ্য ও অপর পুত্র আর্কাডিয়াস (Arcadius) রোমের পূর্ব সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। এই বিভাজনের ফলে রোমের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

(FAQ) সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. প্রথম কনস্টানটাইন কে ছিলেন?

৩০৬-৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোমান সম্রাট ছিলেন প্রথম কনস্টানটাইন।

২. প্রথম কনস্টানটাইন আর কি নামে পরিচিত ছিলেন?

কনস্টানটাইন দ্য গ্ৰেট।

৩. প্রথম কনস্টানটাইন কোন ধর্ম গ্ৰহণ করেছিলেন?

খ্রিস্টধর্ম।

৪. সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন?

খ্রিস্টধর্ম।

৫. সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন কোন নগরীকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলেন?

বাইজানটিয়াম।

Leave a Comment