পরবর্তী বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে কৃষি, জমির মালিকানা ব্যবস্থা, পশুপালন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানবো।
পরবর্তী বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | পরবর্তী বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা |
জীবিকা | কৃষি ও পশুপালন |
মুদ্রা | নিষ্ক, কৃষ্ণল, শতমান |
নগর | মগধ, কোশাম্বী, কাশী |
ভূমিকা :- পরবর্তী বৈদিক যুগ বলতে ঋগ্বেদ -এর পরবর্তী যুগ বুঝায়। ঋকবেদের যুগের সঙ্গে পরবর্তী বৈদিক যুগের প্রভূত সময়ের ব্যবধান আছে। আর এই ব্যবধানের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনও ঘটে যথেষ্ট পরিমাণে।
কৃষি
- (১) পরবর্তী বৈদিক যুগে বেশীর ভাগ লোক গ্রামে বাস করত। গ্রামগুলিতে কৃষিই ছিল লোকের প্রধান জীবিকা। এই যুগে জমি খুব গভীরভাবে লাঙ্গল দেওয়া হত। কখনও কখনও ভারী লোহার লাঙ্গল টানার জন্য একসঙ্গে ২৪টি বলদ লাগত।
- (২) লাঙ্গল টানার জন্য শুধু বলদের ওপর নির্ভর না করে মহিষকেও কাজে লাগানো হয়। এজন্য গৃহপালিত পশুর মধ্যে মহিষ স্থান পায়। এই সময় জমিতে সার দেওয়ার প্রথা আরম্ভ হয় এবং উন্নত বীজ বপন করার নিয়ম চালু হয়। গম, ধান ও যব ছিল প্রধান শস্য। এই সঙ্গে তুলার চাষের প্রচলন বাড়ে।
জমির মালিকানা ব্যবস্থা
পরবর্তী বৈদিক যুগে জমির মালিকানা ছিল পরিবারগুলির হাতে। পরিবারের কর্তা পরিবারের স্বার্থে জমি ব্যবহার করত। পরিবারের লোকেরাই জমি চাষ-আবাদ করত। এই সঙ্গে একশ্রেণীর জমির মালিকের উদ্ভব হয় যারা বেশী জমি ভোগ করত। তারা নিজ হাতে চাষ-আবাদ করত না। রাজা জমির মালিক ছিলেন না। তিনি শুধু রাজস্ব ভোগ করতেন। নারী ও শূদ্রদের জমিতে কোনো অধিকার ছিল না।
পশুপালন
- (১) কোনো কোনো আর্য গোষ্ঠী পরবর্তী বৈদিক যুগে ঋকবৈদিক যুগ -এর মতই শুধুমাত্র পশুপালন করত। তারা যাযাবরের মতো পশুর খাদ্যের সন্ধানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেত। এরা কৃষিকাজের প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিল না। তবে এই শ্রেণীর সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছিল।
- (২) এরূপ দুটি ভ্রাম্যমান যাযাবর গোষ্ঠী পরস্পরের মুখোমুখী হলে যুদ্ধ বাধত এবং তাতে বহু লোক মারা পড়ত। তারা ঘোড়া, গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়াকে গৃহে পালন করা হত। গাভী ছিল হত্যার অযোগ্য।
- (৩) যজ্ঞ উপলক্ষে গোহত্যা করা হত এবং তার মাংস ভক্ষণ করা হত বলে কোনো কোনো পণ্ডিত অভিমত দিয়েছেন। এই যুগে হাতিকে পোষ মানিয়ে যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়।
ব্যবসা-বাণিজ্য
- (১) পরবর্তী বৈদিক যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ঘটে। কোনো কোনো আর্য বৈশ্য পরিবার বংশানুক্রমিকভাবে বাণিজ্যে নিযুক্ত থাকত। শ্রেষ্ঠীন নামে ধনী বৈশ্যদের কথা জানা যায়। কাপড়, ছাগলের চামড়া ও অন্যান্য পোষাকের দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হত।
- (২) পূর্ব দিকে বিহার ও নেপাল হতে পশ্চিমে পাঞ্জাব পর্যন্ত বাণিজ্য চলত। কিরাত নামে এক উপজাতি ছাগলের চামড়া, মৃগনাভি প্রভৃতি বিক্রি করত। এই যুগে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের সুনিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়।
- (৩) পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণে সমুদ্রের কথা বহুবার উল্লিখিত হয়েছে। সমুদ্রপথে মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চলত। শ্রেষ্ঠী ও বণিকরা গিল্ড বা নিগম বা সঙ্ঘ বা ‘গণ’ গঠন করত।
শিল্প
- (১) এই যুগে সোনা, রূপা, তামার ঢালাই ও খোদাইয়ের কাজ হত। এছাড়া লোহা, টিন, দস্তার কাজ হত। ঋকবেদে ‘আফাস’ নামে একটি শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। এই শব্দটির অর্থ সঠিক জানা যায় নি। কারও মতে এর অর্থ হল লোহা, কারও মতে তামা।
- (২) পরবর্তী বৈদিক যুগে লোহার ব্যবহারের প্রমাণ নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়। লোহার অস্ত্রের দ্বারা বন-জঙ্গল কেটে কৃষি জমি তৈরি করা হত। ধাতুশিল্প ছাড়া কাপড় বোনা, ছুতার মিস্ত্রির কাজ, ঝুড়ি তৈরি, চিকিৎসকের কাজ প্রভৃতি জীবিকার প্রসার ঘটে।
মুদ্রা
এই যুগে নিষ্ক ছাড়া কৃষ্ণল নামে এক মুদ্রা ছিল। এর ওজন ছিল এক রতি। ‘শতমান’ ছিল এক ধরনের সোনার বাট। একশত কৃষ্ণলে একটি শতমান হত।
উপসংহার :- নগর জীবন এই যুগে অপরিচিত ছিল না। কাশী, কোশাম্বী, বিদেহ, মগধ প্রভৃতি নগরের পরিচয় পরবর্তী বৈদিক যুগে পাওয়া যায়। গ্রাম অপেক্ষা নগর জীবনের আরাম বেশী ছিল।
(FAQ) পরবর্তী বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
কৃষি ও পশুপালন।
নিষ্ক, কৃষ্ণল ও শতমান।
মগধ, বিদেহ, কাশী।