দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা প্রসঙ্গে মামলার প্রেক্ষাপট, মামলার পূর্বে বৈপ্লবিক ইস্তাহার প্রকাশ, মামলার পূর্বে বিপ্লবীদের গ্ৰেপ্তার, মামলার পূর্বে রাসবিহারী বসুর পলায়ণ, দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা ও তার বিচার সম্পর্কে জানবো।
দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা
ঐতিহাসিক ঘটনা | দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা |
স্থান | দিল্লী |
বড়লাট | লর্ড হার্ডিঞ্জ |
বোমা নিক্ষেপ | বসন্ত বিশ্বাস |
প্রধান নেতা | রাসবিহারী বসু |
ভূমিকা :- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ভারত ভ্রমণ শেষ করে দিল্লী প্রত্যাবর্তন করছিলেন। যথা সময়ে বিপ্লবীরা এই সংবাদ জানতে পারেন।
দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট
এই দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট হল নিম্নরূপ –
(১) পিনবোম্ব নিক্ষেপ
বড়লাটের দিল্লি ফিরে আসার সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য বিপ্লবীরা প্রস্তুত হন। বড়লাট সাহেব রেল স্টেশন থেকে জুড়ি-গাড়ীতে চড়ে দিল্লী প্রবেশ করতে উদ্যত, এমন সময় তাঁর গাড়ীর উপর একটি বোমা পড়ে। বোমাটি ছিল ‘পিনবম্ব’ শ্রেণীর, অর্থাৎ বোমাটির মধ্যে বিস্ফোরক পদার্থের সাথে বহু ছোট পেরেক দেওয়া হয়েছিল।
(২) পিনবোম্ব বিস্ফোরণের ফল
বোমা বিস্ফোরণের ফলে বড়লাট সাংঘাতিকরূপে আহত হন এবং তাঁর গাড়ীর পশ্চাৎ ভাগের একজন গার্ড নিহত হয়। পথের উভয় পাশে দণ্ডায়মান দর্শকশ্রেণীর উপর পুলিশের নির্মম অত্যাচার চলে, কিন্তু বোমা নিক্ষেপকারীকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।
(৩) লাহোর সংগঠনের উপর ভার
এত চেষ্টা ও আয়োজন সত্ত্বেও বড়লাটকে হত্যা করা সম্ভব হল না দেখে বিপ্লবীরা মরিয়া হয়ে উঠেন, তারা আবার নূতন এক পরিকল্পনা করেন। এবারের পরিকল্পনা কার্যকরী করবার ভার পড়ে লাহোর সংগঠনের উপর।
(৪) বড়লাট বধের ব্যর্থতা পূরণের সিদ্ধান্ত
লাহোরের বিপ্লবীরা লক্ষ্য করেছেন যে, লাহোরের ‘লরেন্স গার্ডেন’-এর একটি পথ দিয়ে বহু ইংরেজ দল বেঁধে সন্ধ্যাকালে যাতায়াত করে। বিপ্লবীরা এক সঙ্গে বহু ইংরেজ সাহেবকে হত্যা করে বড়লাট বধের ব্যর্থতা পূরণ করবার সিদ্ধান্ত করেন।
(৫) ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই ডিসেম্বরের ঘটনা
বসন্ত বিশ্বাস সন্ধ্যার অন্ধকারে লুকিয়ে ‘লরেন্স গার্ডেন’-এর উক্ত পথের উপর একটি ভয়ংকর বিস্ফোরক বোমা পেতে রাখেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, কোনো ইংরেজসাহেব ঐ পথে আসবার পূর্বেই একজন ভারতীয় চাপরাশী ঐ পথে সাইকেলে যাবার সময় সাইকেলের চাকার ধাক্কা লেগে বোমাটি ফেটে যায় এবং চাপরাশীটি তৎক্ষণাৎ নিহত হয়।
দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার পূর্বে বৈপ্লবিক ইস্তাহার প্রকাশ
এই সময় লাহোরে কতকগুলি বৈপ্লবিক ইস্তাহার বিতরণ করা হয়। সেই সকল ইস্তাহারের কতকগুলি পরবর্তীকালে কলকাতার রাজাবাজার বোমার মামলায় অভিযুক্ত অমৃত হাজরা কর্তৃক মুদ্রিত হয়েছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়।
দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার পূর্বে বিপ্লবীদের গ্ৰেপ্তার
এই সকল ইস্তাহার বিতরণ করবার সময় পুলিশ কয়েকজন বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে দীননাথ অন্যতম। দীননাথ গ্রেপ্তার হবার সঙ্গে সঙ্গে এক স্বীকারোক্তি করে রাজসাক্ষী হয়। তার স্বীকারোক্তির ফলে আমীরচাঁদ, অবোধবিহারী, বালমুকুন্দ ও বসন্ত বিশ্বাস গ্রেপ্তার হন।
দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার পূর্বে রাসবিহারী বসুর পলায়ণ
গুপ্ত সমিতির পরিচালক রাসবিহারী বসুকে গ্রেপ্তার করবার জন্য পুলিশ পাঞ্জাব ও দিল্লী তোলপাড় করে। কিন্তু রাসবিহারী ততক্ষণে বহু দূরে চলে গেছেন।
দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা
ধৃত বিপ্লবীদের নিয়ে এক ষড়যন্ত্র মামলা আরম্ভ হয়। এই মামলাই ‘দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে বিখ্যাত।
দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার বিচার
এই মামলার বিচারে ষড়যন্ত্র ও “সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধোদ্যম”-এর অপরাধে আমীরচাঁদ, অবোধবিহারী, বালমুকুন্দ ও বসন্ত বিশ্বাসের ফাঁসির আদেশ হয়।
উপসংহার :- সরকার রাসবিহারীকে ‘পলাতক আসামী’ বলে ঘোষণা করে তাঁর গ্রেপ্তারের জন্য বহু সহস্র টাকার একটি পুরস্কার ঘোষণা করে।
(FAQ) দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১২-১৪ খ্রিস্টাব্দে।
বসন্ত কুমার বিশ্বাস।
রাসবিহারী বসু।
আমীরচাঁদ, অবোধবিহারী, বালমুকুন্দ ও বসন্ত বিশ্বাস।