রাজাবাজার বোমার মামলা প্রসঙ্গে রাজাবাজার অঞ্চলে খানাতল্লাস, চার বিপ্লবীকে গ্ৰেপ্তার, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার, মামলা, মামলার বিচার, সিডিশন কমিটির রিপোর্ট ও মামলার ফল সম্পর্কে জানবো।
রাজাবাজার বোমার মামলা
ঐতিহাসিক ঘটনা | রাজাবাজার বোমার মামলা |
সময়কাল | ১৯১৩ খ্রি: |
স্থান | কলকাতার রাজাবাজার |
আদালত | আলিপুর |
নায়ক | শশাঙ্ক শেখর হাজরা |
ভূমিকা :- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে শ্রীহট্টের মৌলভীবাজারে ম্যাজিস্ট্রেট গর্ডন সাহেবকে হত্যা করবার উদ্দেশ্যে একটি বোমা নিক্ষেপ করবার জন্য এক যুবক তাঁর গৃহপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। কিন্তু বোমাটি নিক্ষেপ করবার পূর্বেই যুবকটির হাতেই তা ফেটে যায় এবং তার ফলে যুবকটির মৃত্যু ঘটে।
রাজাবাজার অঞ্চলে খানাতল্লাস
এই বোমা বিস্ফোরণ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে খানাতল্লাস হয়। এই ঘটনার সূত্র ধরে কলিকাতার রাজাবাজার অঞ্চলের একটি বাড়িতে খানাতল্লাস হয়।
রাজাবাজারে চার বিপ্লবীকে গ্ৰেপ্তার
পুলিশ রাজাবাজারের এক বাড়িতে প্রবেশ করে অমৃতলাল হাজরা ছদ্মনামধারী শশাঙ্কশেখর হাজরা, দীনেশ সেনগুপ্ত, চন্দ্রশেখর দে এবং সারদা গুহ নামে চারজন বিপ্লবীকে নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করে।
রাজাবাজারে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার
পুলিশ এই বাড়িতে বহু সিগারেটের টিনবাক্স আর সেই সঙ্গে বোমা তৈরির পক্ষে প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য এবং বহু বৈপ্লবিক সাহিত্য হস্তগত করে।
পরবর্তীতে রাজাবাজারে দুজন বিপ্লবী গ্ৰেপ্তার
পরে এর সাথে জড়িত ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে কালীপদ ঘোষ ওরফে উপেন্দ্রলাল রায়চৌধুরী এবং খগেন্দ্রনাথ চৌধুরী ওরফে সুরেশচন্দ্র চৌধুরী নামে অন্য দুজন যুবককেও গ্রেপ্তার করে।
‘রাজাবাজার বোমার মামলা’
অবশেষে ধৃত বিপ্লবীদের নিয়ে আলিপুর আদালতে এক ষড়যন্ত্র মামলা আরম্ভ হয়। এই মামলাই ‘রাজাবাজার বোমার মামলা’ নামে খ্যাত।
রাজাবাজার বোমার মামলার বিচার
মামলার বিচারে খগেন্দ্রনাথ ব্যতীত অন্য সকলে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড লাভ করেন। এই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে বিপ্লবীরা হাইকোর্টে আপীল করলে তাদের প্রত্যেকেরই দণ্ড বৃদ্ধি পায়, এমন কি খগেন্দ্রনাথও শাস্তি লাভ করেন। শশাঙ্ক শেখরের কারাদণ্ড ৭ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ বছরের দ্বীপান্তর দণ্ডে পরিণত হয়।
রাজাবাজার বোমার মামলার ফল
এই মামলার বিচারে প্রকাশ পায় যে, স্বল্প মূল্যে বোমা তৈরি করে তা ভারতবর্ষ-এর সর্বত্র সরবরাহ করাই ছিল এই বিপ্লবীদের উদ্দেশ্য।
রাজাবাজার ও অন্যত্র নিক্ষিপ্ত বোমা একই
ইতিপূর্বে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ডালহৌসি স্কোয়ারে, ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই ডিসেম্বর মেদিনীপুরে, ২৩শে ডিসেম্বর দিল্লীতে বড়লাটের উপর, ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মার্চ শ্রীহট্টের মৌলভীবাজারে ম্যাজিস্ট্রেটের গৃহ প্রাঙ্গণে, মে মাসে লাহোরে, সেপ্টেম্বর মাসে ময়মনসিংহে এবং ডিসেম্বর মাসে কলকাতার নিকটবর্তী ভদ্রেশ্বরে যে সকল বোমা নিক্ষিপ্ত হয়েছিল সেই বোমা এবং এই বিপ্লবীদের দ্বারা নির্মিত বোমা একই প্রকারের বলে স্থির হয়।
রাজাবাজারে বোমা তৈরির কৌশল
এই বোমা এক বিশেষ পদ্ধতিতে প্রস্তুত হত। সিগারেট বা জমানো দুধের কৌটা এই বোমার খোল রূপে ব্যবহৃত হত। এই বোমার মধ্যে যে বারুদ ব্যবহৃত হত তাও বিশেষ শক্তিশালী বিস্ফোরক পদার্থ দ্বারা তৈরী হত এবং বারুদের মধ্যে লোহার টুকরা দেওয়া হইত।
রাজাবাজারের বোমা সম্পর্কে সিডিসন কমিটি’র রিপোর্ট
সিডিসন কমিটি’র রিপোর্টে লেখা হয়েছে, “বোমা বিশেষজ্ঞরা বিচার-বিশ্লেষণ করে স্থির করেছেন যে, ঐ সকল স্থানে নিক্ষিপ্ত বোমা একই জাতির এবং একই মস্তিষ্কপ্রসূত”।
রাজাবাজারের বোমা সম্পর্কে মেজর টার্নারের মন্তব্য
খ্যাতনামা বোমা বিশেষজ্ঞ মেজর টার্নার বলেছেন যে, তিনি তাঁর জীবনে এই প্রকারের বোমা পূর্বে কোনোদিন দেখেন নি।”
রাজাবাজার বোমার মামলার নায়ক শশাঙ্ক শেখর
মামলার বিচারের রায়ে শশাঙ্কশেখর হাজরাকে এক বিশাল বিপ্লবী দলের অন্যতম নায়ক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
রাজাবাজার বোমার মামলার বিচারে বক্তব্য
এই মামলার বিচারের রায়ে বলা হয়েছে যে, অভিযুক্ত বিপ্লবীদলের সাথে সমগ্র ভারতবর্ষের যোগাযোগ ছিল। এই দলটিই ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে এই প্রকারের ভয়ঙ্কর বোমা সরবরাহ করত। এই বোমাই কলকাতায়, লাহোরে, দিল্লীতে, শ্রীহট্টে, ময়মনসিংহে, মেদিনীপুরে এবং ভদ্রেশ্বরে ব্যবহৃত হয়েছিল।
উপসংহার :- শশাঙ্কের গৃহে যে কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছিল তার একটিতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা ছিল, “দেশভক্ত বীরদের দ্বারা রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই এই আয়োজন।”
(FAQ) রাজাবাজার বোমার মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে।
আলিপুর।
শশাঙ্কশেখর হাজরা।
শশাঙ্ক শেখর হাজরা ও দীনেশ সেনগুপ্ত।