রডা কোম্পানির মশার পিস্তল চুরি প্রসঙ্গে মশার পিস্তলের বৈশিষ্ট্য, পিস্তল আনার দায়িত্ব, সিডিসন কমিটির ধারণা, সমস্ত বৈপ্লবিক ঘটনায় মশার পিস্তল ব্যবহার ও রডা কোম্পানির অপহৃত মশার পিস্তল উদ্ধার সম্পর্কে জানবো।
রডা কোম্পানির মশার পিস্তল চুরি
ঐতিহাসিক ঘটনা | রডা কোম্পানির মশার পিস্তল চুরি |
ভারতে পৌঁছে | আগস্ট, ১৯১৪ খ্রি: |
চুরি হয় | ৫০ টি |
চুরি করে | বিপিনবিহারী গাঙ্গুলীর দল |
লাভ করে | বাংলাদেশ-এর ৯ টি বিপ্লবী দল |
ভূমিকা :- রডা কোম্পানি বিদেশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করে এদেশে ব্যবসা করত। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের শেষ দিকে এই কোম্পানি বিদেশ থেকে ‘মশার’ নামক পিস্তলের বড় একটি চালান নিয়ে আসে।
মশার পিস্তলের বৈশিষ্ট্য
মশার পিস্তল একটি ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্র, এর অংশ বিশেষ খুলে একে পিস্তল হিসাবেও ব্যবহার করা যায়, আবার ঐ অংশটি জুড়ে একে রাইফেলের মতও ব্যবহার করা চলে। তাই বরাবর এই পিস্তলের উপর বিপ্লবীদের লোভ ছিল।
রডা কোম্পানির মশার পিস্তল আনার দায়িত্ব
- (১) কোম্পানির মালপত্র কাস্টম্স্-অফিস থেকে খালাস করে অফিসের গুদামে নিয়ে আসবার ভার ছিল একজন বাঙালী কর্মচারীর উপর। ২৬শে আগস্ট ঐ কর্মচারী কাস্টমস অফিস থেকে মশার পিস্তল ও তার গুলিপূর্ণ ২০২টি বাক্স বুঝে নিয়ে তা থেকে ১৫২টি বাক্স অফিসের গুদামে নিয়ে আসে।
- (২) এর পর বাকি বাক্সগুলি নিয়ে অসবার অজুহাত দিয়ে কর্মচারীটি পুনরায় রাস্তায় বের হন। বলা বাহুল্য, কর্মচারীটি আর অফিসে ফিরে যান নি এবং মশার পিস্তলের পঞ্চাশটি বাক্স বিপ্লবীদের হস্তগত হয়।
মশার পিস্তল চুরি সম্পর্কে সিডিসন কমিটির ধারণা
সিডিসন কমিটির ধারণা যে, যুগান্তর সমিতির অন্তর্ভুক্ত বিপিনবিহারী গাঙ্গুলীর দলের দ্বারাই এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল।
রডা কোম্পানির অপহৃত মশার পিস্তলের বিতরণ
- (১) পরে এই অপহৃত মশার পিস্তলগুলি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সমিতির কাছে বিলি করা হয়। তখন থেকে প্রায় প্রত্যেকটি বৈপ্লবিক ক্রিয়াকলাপে এগুলি ব্যবহৃত হয়েছিল।
- (২) পশ্চিমবঙ্গ-এ যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত যুগান্তর সমিতি, সতীশ চক্রবর্তীর পরিচালিত চন্দননগরের যুগান্তর শাখা, বিপিন গাঙ্গুলীর পরিচালিত যুগান্তর শাখা, মাদারীপুর সমিতি, ঢাকা ও বরিশালের অনুশীলন সমিতি প্রভৃতি ন’টি বৈপ্লবিক প্রতিষ্ঠান এই অস্ত্রগুলি লাভ করছছিল।
রডা কোম্পানির অপহৃত মশার পিস্তল সম্পর্কে পুলিশের তথ্য
- (১) সিডিসন কমিটির মতে, পুলিস যে সকল তথ্য সংগ্রহ করেছে তাতে দেখা যায় যে, অপহৃত পিস্তল গুলির মধ্যে চুয়াল্লিশটি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের ন’টি বৈপ্লবিক সমিতির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল।
- (২) এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এইভাবে বিলি করা পিস্তলগুলি ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের পর অনুষ্ঠিত ডাকাতি ও নরহত্যার চেষ্টায় ব্যবহৃত হয়েছিল।
সমস্ত বৈপ্লবিক ঘটনায় মশার পিস্তল ব্যবহার
অনায়াসে বলা চলে যে, ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের পর এমন বৈপ্লবিক ঘটনা খুব কমই অনুষ্ঠিত হয়েছে, যাতে ‘রডা-কোম্পানি’ হতে অপহৃত মশার পিস্তলগুলি ব্যবহৃত হয় নি।
রডা কোম্পানির অপহৃত মশার পিস্তল উদ্ধার
পরে পুলিশের বহু চেষ্টার ফলে অপহৃত পিস্তলগুলির একত্রিশটি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।
উপসংহার :- পরবর্তীকালে মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার সম্পর্কিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, পঞ্চাশটি মশার পিস্তল বাংলাদেশের শাসন প্রায় অচল করে ফেলেছিল।
(FAQ) রডা কোম্পানির মশার পিস্তল চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের শেষ দিকে।
৫০ টি।
৯ টি।
যুগান্তর সমিতির অন্তর্ভুক্ত বিপিনবিহারী গাঙ্গুলীর দলের।