ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ প্রসঙ্গে বাংলার নবাবের সাথে চুক্তি, অযোধ্যার নবাবের সাথে চুক্তি, দিল্লির বাদশাহর সাথে চুক্তি, দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব হিসেবে আইনি বৈধতা, নবাবের ক্ষমতা হ্রাস, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজস্ব আদায়ের অধিকার, কোম্পানির মর্যাদা বৃদ্ধি ও ইউরোপীয়দের প্রশমন সম্পর্কে জানবো।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ প্রসঙ্গে দেওয়ানি লাভের সময়কাল, বাংলায় মুঘল যুগ ও ব্রিটিশ যুগের বিভাজিকা দেওয়ানি লাভ, মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের থেকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ, বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ

ঐতিহাসিক ঘটনাইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ
সময়কাল১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ
প্রাপকইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
বাংলার নবাবনজমউদ্দৌলা
মোগল সম্রাটদ্বিতীয় শাহ আলম
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ

ভূমিকা :- ইংরেজরা মিরকাশিম -এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় মিরজাফরকে (১৭৬৩-৬৫ খ্রি.) দ্বিতীয়বারের জন্য বাংলার সিংহাসনে বসায়। এই সময় থেকে কোম্পানির আধিপত্য দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

দেওয়ানি লাভের পূর্বে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর

বক্সারের যুদ্ধ -এর পর ইংরেজ কোম্পানি বাংলার নবাব, অযোধ্যার নবাব ও দিল্লির বাদশাহের সঙ্গে পৃথক সন্ধি স্বাক্ষর করে দ্রুত আধিপত্যের প্রসার ঘটায়।

(১) বাংলার নবাবের সঙ্গে চুক্তি

বক্সারের যুদ্ধ এবং মিরজাফরের মৃত্যুর (১৭৬৫ খ্রি.) পর তাঁর পুত্র নজমউদ্দৌলাকে সিংহাসনে বসানো হয়। কোম্পানি এক চুক্তির (২০ ফেব্রুয়ারি, ১৭৬৫ খ্রি.) মাধ্যমে নজমউদ্দৌলাকে কোম্পানির পুতুলে পরিণত করে বাংলার যাবতীয় সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করে নেয়। নবাবের হয়ে কোম্পানির নিযুক্ত নায়েব নাজিম’ (বা ‘নায়েব সুবা’ বা ‘নায়েব (দেওয়ান) রেজা খাঁ বাংলার শাসন পরিচালনা করতে থাকেন। এই বছরই অপর এক চুক্তিতে কোম্পানি বাংলার শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য নবাবকে বার্ষিক ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

(২) অযোধ্যার নবাবের সঙ্গে চুক্তি

যুদ্ধের পর পরাজিত অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা কোম্পানির সঙ্গে এলাহাবাদের প্রথম সন্ধি (১৭৬৫ খ্রি.) নামে এক আত্মরক্ষামূলক মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এর দ্বারা কোম্পানি তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ লাভ করে।

(৩) দিল্লির বাদশাহের সঙ্গে চুক্তি

কোম্পানি দিল্লির পরাজিত মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে এলাহাবাদের দ্বিতীয় সন্ধি (১৭৬৫ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য করে। এই সন্ধির দ্বারা কোম্পানির কাছ থেকে কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ এবং বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা কর পাওয়ার বিনিময়ে সম্রাট কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায় ও দেওয়ানি বিচারের অধিকার দেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ঘটনা ভারত-এর ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন –

(১) আইনগত বৈধতা

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইতিপূর্বে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় যে চূড়ান্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তার কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। আইনত দিল্লির বাদশাহই ছিলেন দেশের চূড়ান্ত শাসক। কোম্পানি বাদশাহের কাছ থেকে দেওয়ানির অধিকার লাভ করলে তাদের ক্ষমতা আইনগত বৈধতা পায়। ফলে কোম্পানি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

(২) নবাবের ক্ষমতা হ্রাস

নবাবের হাতে ফৌজদারি ও প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকলেও অর্থনৈতিক ক্ষমতা তাঁর হাত থেকে কোম্পানির হাতে চলে যায়। আবার কোম্পানির হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা এলেও প্রশাসন পরিচালনায় তার কোনো নজর ছিল না। এভাবে নবাবের হাতে ক্ষমতাহীন দায়িত্ব এবং কোম্পানির হাতে দায়িত্বহীন ক্ষমতা অর্পিত হয়, যা দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

(৩) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি

দেওয়ানি লাভের ফলে ইংরেজ কোম্পানির আর্থিক সমৃদ্ধি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রাজস্ব হিসেবে আদায় করা বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা বাণিজ্য, রাজ্যবিস্তার, সেনাদল গঠন প্রভৃতি কাজে বায় করে। ফলে কোম্পানি ভারতের পণ্য কেনার জন্য বাংলার রাজস্ব ব্যবহার শুরু করে এবং ইংল্যান্ড থেকে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এক কথায়, দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি বাংলায় নির্লজ্জ অর্থনৈতিক লুণ্ঠন’ শুরু করে।

(৪) রাজস্ব আদায়ের অধিকার

দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে কোম্পানি কর্তৃক বাংলা থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার আইনগত বৈধতা লাভ করে।

(৫) কোম্পানির মর্যাদা বৃদ্ধি

কোম্পানি রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব সংক্রান্ত বিচার করার অধিকার লাভ করলে সমকালীন রাজন্যবর্গ ও জনসাধারণের চোখে কোম্পানির মর্যাদা খুবই বৃদ্ধি পায়।

ইংরেজ কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে ইউরোপীয়দের প্রশমন

ইংরেজ কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করলে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিকরা ঈর্ষান্বিত হয়ে এর বিরোধিতা করতে থাকে। কিন্তু ইংরেজরা যাবতীয় ক্ষমতা হস্তগত করেও বাংলায় নবাবের পদ অক্ষুন্ন রেখে অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলিকে শান্ত রাখে।

উপসংহার :- মোগল সম্রাটের নামের আড়ালে বাংলার নবাবকে সামনে রেখে ক্লাইভ কোম্পানি বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে থাকেন।

(FAQ) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কখন দেওয়ানি লাভ করে?

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে।

২. ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কার কাছ থেকে দেওয়ানি লাভ করে?

মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম।

৩. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?

নজমউদ্দৌলা।

Leave a Comment