অরাজকতা দমনে বলবনের ভূমিকা

অরাজকতা দমনে বলবনের ভূমিকা প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা স্থাপনে উদ্যোগ, মেওয়াটি দমন, দোয়াবে দস্যু দমন, উত্তর ভারতে নিরাপত্তা স্থাপন ও কার্টিহারের বিদ্রোহ দমন সম্পর্কে জানবো।

অরাজকতা দমনে বলবনের ভূমিকা

বিষয়অরাজকতা দমনে বলবনের ভূমিকা 
সুলতানগিয়াসউদ্দিন বলবন
পূর্বসূরিনাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ
উত্তরসূরিকাইকোবাদ
মেওয়াটী দমনগিয়াসউদ্দিন বলবন
অরাজকতা দমনে বলবনের ভূমিকা

ভূমিকা :- দিল্লী সুলতানির শ্রেষ্ঠ সুলতান বলবন শাসন ক্ষেত্রে রক্ত ও লৌহ নীতি অবলম্বন করেন। অরাজকতা দমন ও আইনশৃঙ্খলা স্থাপনে বলবন বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

আইনশৃঙ্খলা স্থাপনে বলবনের উদ্যোগ

  • (১) বলবন প্রথমেই আইন-শৃঙ্খলা স্থাপনের কাজে হাত দেন। বরণীর মতে, আইন-শৃঙ্খলা না থাকায় রাজপদের গুরুত্ব কমে যায়। লোকে সুলতানি শাসনের প্রতি আস্থা হারায়।
  • (২) সুলতান বলবন মনে করতেন যে, প্রজাদের নিরাপত্তা ও শান্তিতে বসবাস করতে দেওয়াকেই ন্যায় বিচার বলা সঙ্গত। এই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিশেষ চেষ্টা দেখান।

মেওয়াটী দস্যু দমনে বলবনের ভূমিকা

  • (১) তিনি মেওয়াটী দস্যুদলকে দমনের জন্য দিল্লীর চতুর্দিকে জঙ্গলগুলি কাটাই করান। এই জঙ্গলে দস্যুরা বাসা বেঁধেছিল। তিনি দ্রুতগামী অশ্বারোহী বাহিনী দ্বারা বহু মেওয়াটীদের ধরে নিহত করেন। দিল্লীর চতুর্দিকে সামরিক ছাউনী ও থানা স্থাপন করেন।
  • (২) মেওয়াটী দস্যুদের দমনের জন্য গোপালগিরে একটি দুর্গ স্থাপন করা হয়। মেওয়াটী গ্রামগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মেওয়াটীদের জমিগুলি বাজেয়াপ্ত করে সাহসী তুর্কী সেনাদের বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বলবনের রক্ত ও লৌহ নীতির ফলে মেওয়াটী উপদ্রব দমিত হয়।

বলবন কর্তৃক দোয়াবে দস্যু দমন

  • (১) এর পর তিনি অযোধ্যা ও দোয়াবে অরাজকতা ও দস্যুদলের অত্যাচার বন্ধের ব্যবস্থা করেন। দোয়াব ছিল সুলতানি সাম্রাজ্য-এর শস্য ভান্ডার। এই স্থানে দস্যুতার তান্ডব সুলতানি সাম্রাজ্যের ক্ষতির কারণ হয়। দোয়াবের বিদ্রোহীদের পরিচয় এক্ষেত্রে উল্লেখ্য।
  • (২) যদিও বরণী তাদের দস্যু বলে অভিহিত করেছেন, কোনো কোনো গবেষক মনে করেন যে এরা ছিল দোয়াব ও অযোধ্যার ধনী হিন্দু কৃষক ও জমিদার শ্রেণী। এরা তুর্কী শাসনের নিকট বশ্যতা স্বীকারে রাজী ছিল না এবং এই উর্বরা অঞ্চলে মুসলিম জাতি তখনও বিস্তৃতি না হওয়ায় তারা নিজেদের স্বাধীন বলে মনে করত।
  • (৩) সুলতানি সরকারকে তারা নিয়মিত কর দিত না এবং ইক্তাদারদের ক্ষমতা অগ্রাহ্য করত। দোয়াবের বিদ্রোহী গ্রামগুলিকে ধ্বংস করে ছারখার করা হয়, সক্ষম পুরুষদের নিহত করা হয় এবং নারী ও শিশুদের দাসদাসীতে পরিণত করা হয়।
  • (৪) দোয়াবের জঙ্গলগুলি কেটে ফেলা হয়, দোয়াব অঞ্চলকে ছোট্ট ছোট্ট ইক্তায় ভাগ করা হয়। তুর্কী ও আফগান সেনাপতিদের সেই ইক্তাগুলি দিয়ে দোয়াবে বসবাসের আদেশ দেওয়া হয়। তাদের দায়িত্ব থাকে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা।
  • (৫) তারা নিজ নিজ অঞ্চলে বিদ্রোহী ও দস্যুদলকে দমন করে এবং বিনিময়ে সৈন্য-সামন্তসহ জমি ভোগ করে। এছাড়া কাম্পিলি, পাতিয়ালী ও ভোজপুরে দুর্গ নির্মাণ করে সেই দুর্গে সেনাদল রাখা হয়। দরকারের সময় এই সেনারা ইক্তাদারদের সাহায্য করত।

উত্তর ভারতে নিরাপত্তা স্থাপনে বলবনের ভূমিকা

  • (১) বলবন বাণিজ্য ও রাজপথগুলিকে দস্যুমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। তিনি দোয়াব, অযোধ্যা প্রভৃতি অঞ্চলের সঙ্গে দিল্লীর সংযোগকারী রাজপথে নিরাপদে বণিক ও পথিকদের চলাচলের জন্য কাম্পিল ও পাতিয়ালী অভিযান করেন।
  • (২) বহু দস্যু ও বিদ্রোহীদের হত্যা করা হয়। উত্তর ভারত-এর রাজপথ এর ফলে মাল চলাচলের পক্ষে নিরাপদ হয়। দস্যুদের গ্রাম লুঠ করে বহু অর্থ পাওয়া যায়। এই লুণ্ঠিত অর্থ সম্পদ, ঘোড়াগুলি ও বন্দী বিদ্রোহীদের দাসে পরিণত করে দিল্লীতে আনা হয়।

বলবন কর্তৃক কাটিহারের বিদ্রোহ দমন

  • (১) এর পর বলবন কাটিহার বা রোহিলখন্ডের বিদ্রোহ দমনের কাজে হাত দেন। এই বিদ্রোহীরা ছিল সম্ভবত স্থানীয় হিন্দু সামন্ত বা জমিদার। বরণীর মতে কাটিহারের এই বিদ্রোহীরা রায়ত প্রজাদের ওপর দারুণ অত্যাচার চালাত।
  • (২) তারা এত সাহসী ছিল যে, তারা বাদাউন ও আমরোহার ইক্তাদারদের গ্রাহ্য করত না। বলবন এই বিদ্রোহীদের পরাস্ত করে বহু বিদ্রোহীকে হত্যা করেন। বলবন নিজে এই দমনমূলক অভিযান পরিচালনা করে অধিকাংশ বিদ্রোহীদের হত্যা করেন।
  • (৩) জিয়াউদ্দিন বরণী কাটিহারে এই বিদ্রোহীদের “মুফ্রিদান” বা “ক্ষতিকারী” আখ্যা দিয়েছেন। সম্ভবত দোয়াবের বিদ্রোহীদের মতই কাটিহারের বিদ্রোহীরাও তুর্কী আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।

উপসংহার :- ডঃ নিজামীর মতে বলবন কাটিহারের রায়ত প্রজাদের রক্ষার জন্যই এই অভিযান চালান। কাটিহারের পর বলবন জুদ্ বা লবন পর্বত এলাকার বিদ্রোহী খোক্করদের দমন করলে সর্বত্র শান্তি ফিরে আসে।

(FAQ) অরাজকতা দমনে বলবনের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন সুলতান মেওয়াটী দস্যুদের দমন করেন?

গিয়াসউদ্দিন বলবন।

২. কোন সুলতান বিদ্রোহী খোক্করদের দমন করেন?

গিয়াসউদ্দিন বলবন।

৩. কোন সুলতান রক্ত ও লৌহ নীতি অনুসরণ করেন?

গিয়াসউদ্দিন বলবন।

৪. দিল্লী সুলতানির শ্রেষ্ঠ সুলতান কে ছিলেন?

গিয়াসউদ্দিন বলবন।

Leave a Comment