প্রাচীন উড়িষ্যা

প্রাচীন উড়িষ্যা প্রসঙ্গে রাজবংশের শাসন, গৌড়রাজ শশাঙ্কের অধীনে উড়িষ্যার রাজ্য, হর্ষবর্ধনের অধীনে উড়িষ্যা রাজ্য, হিউয়েন সাঙের বিবরণ, শৈলোদ্ভব বংশ, পূর্বাঞ্চলীয় গঙ্গ বংশ ও শিল্পকলা সম্পর্কে জানবো।

প্রাচীন উড়িষ্যা

ঐতিহাসিক স্থানপ্রাচীন উড়িষ্যা
মন্দির নগরীভূবনেশ্বর
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরঅনন্তবর্মন চোড়গঙ্গ
কোনারকের সূর্য মন্দিরপ্রথম নরসিংহ
প্রাচীন উড়িষ্যা

ভূমিকা :- উড়িষ্যা সম্ভবতঃ গুপ্ত সম্রাটদের প্রত্যক্ষ শাসিত প্রদেশগুলির অনতম একটি ছিল। এই অঞ্চলে কোনো সামন্ত রাজা ছিল না।

উড়িষ্যায় রাজবংশের শাসন

ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে মান ও শৈলোদ্ভব নামে দুটি স্বাধীন রাজবংশ যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ উড়িষ্যা শাসন করত। উত্তরাংশ উৎকল নামে ও দক্ষিণাংশ কোঙ্কণ নামে পরিচিত ছিল।

গৌড়রাজ শশাঙ্কের অধীনে উড়িষ্যার রাজ্য

উড়িষ্যার দুটি রাজ্যই কিছুকালের জন্য গৌড়রাজ শশাঙ্ক-এর অধীনে আসে।

হর্ষবর্ধনের অধীনে উড়িষ্যার রাজ্য

শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে হর্ষবর্ধন উৎকল এবং কোঙ্কণ অধিকার করেন।

উড়িষ্যা সম্পর্কে হিউয়েন সাঙের বিবরণ

হিউয়েন সাঙ উড়িষ্যা ভ্রমণ করেছিলেন। কোঙ্কণ সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন, এই রাজ্যের সীমানার মধ্যে বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র শহর আছে। তারা পর্বতের পার্শ্ববর্তী এবং সমুদ্রের কাছে অবস্থিত। শহরগুলি উচ্চস্থানে অবস্থিত এবং শক্তিশালী। সৈন্যরা সাহসী ও উদ্যমী। তারা নিজ শক্তির দ্বারা পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলি শাসন করে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারে না।

উড়িষ্যার শৈলোদ্ভব বংশ

হর্ষবর্ধনের উড়িষ্যা জয়ের পরেও শৈলোদ্ভব বংশীয়গণ কোঙ্কণ শাসন করতে থাকে। তাঁর মৃত্যুর পরে তারা পুনরায় স্বাধীন হয়ে শক্তিবৃদ্ধি করেন। সম্ভবতঃ অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে তাদের শাসনের অবসান হয়।

বিভিন্ন রাজবংশের অধীনে উড়িষ্যা

পরবর্তী সার্ধ দুই শতাব্দী কাল বিভিন্ন রাজবংশ উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করেন। ভৌম বা কর বংশের রাজধানী ছিল গুহদেব-পটক (বা গুহেশ্বর-পটক)। ভঞ্জ রাজবংশের দুটি প্রধান শাখা ছিল। এছাড়া কয়েকটি ক্ষুদ্র রাজবংশও ছিল।

উড়িষ্যার পূর্বাঞ্চলীয় গঙ্গ বংশ

পঞ্চম শতাব্দীর শেষদিকে পূর্বাঞ্চলীয় গঙ্গ বংশ (Eastern Gangas) নামে পরিচিত একটি রাজবংশ কলিঙ্গদেশে ক্ষমতা লাভ করে। সম্ভবতঃ এই বংশ মহীশূরের গঙ্গ বংশের একটি শাখা ছিল। এই বংশের আদি রাজাদের রাজধানী ছিল কলিঙ্গনগর (গঞ্জাম জেলার মুখলিঙ্গম)। দশম শতাব্দীতে এই রাজ্যটি সম্ভবতঃ রাজ পরিবারের বিভিন্ন শাখার অধীনে পাঁচটি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়।

অনন্তবর্মন চোড়গঙ্গ কর্তৃক উড়িষ্যা দখল

একাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পূর্বাঞ্চলীয় গঙ্গ বংশ চোলরাজদের অনুগত মিত্র ছিল। অনন্তবর্মন চোড়গঙ্গ (১০৭৮-১১৫০) চোল বংশ, কলচুরি বংশপারমার বংশ-এর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি সমগ্র উড়িষ্যা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের কিয়দংশ অধিকার করেন। তার রাজ্য গোদাবরী নদী থেকে গঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রথম নরসিংহ কর্তৃক উড়িষ্যায় তুর্কি আক্রমণ প্রতিরোধ

  • (১) ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম থেকে উড়িষ্যা বঙ্গদেশ শাসনকারী তুর্কীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে বাধ্য হয়। প্রথম নরসিংহ (আনুমানিক ১২৩৮-৬৪) আত্মরক্ষার পরিবর্তে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নীতি অনুসরণ করেন।
  • (২) তাঁর সৈন্যদল বঙ্গদেশের রাজধানী লক্ষ্মণাবতী পর্যন্ত অগ্রসর হয় এবং কিছুকালের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গ তার অধিকারে আসে। বঙ্গদেশে তাঁর সামরিক অভিযানের কোনো স্থায়ী ফল না হলেও তিনি উড়িষ্যাকে তুর্কী আক্রমণ থেকে নিরাপদ রেখেছিলেন। তিনি কোনারকের অপূর্ব সূর্য মন্দির নির্মাণ করেন।

উড়িষ্যার শিল্পকলা

  • (১) সপ্তম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত উড়িষ্যায় অসংখ্য মন্দির নির্মিত হয়। নির্মাণকার্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল ভুবনেশ্বর। এই মন্দির-নগরীতে অবস্থিত, শিবের উদ্দেশ্যে নির্মিত, লিঙ্গরাজ মন্দির উড়িষ্যার স্থাপত্য শিল্পের পরিপূর্ণ বিকশিত রূপের নিদর্শন। বারবার সংস্কার করার ফলে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদি শিল্পসৌন্দর্য বিনষ্ট হয়েছে।
  • (২) কোনারকের সূর্য মন্দির উড়িষ্যার স্থাপত্যের পরিপূর্ণতার নিদর্শন। এটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রথম নরসিংহের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল। একে ‘কৃষ্ণ প্যাগোডা’ (Black Pagoda) বলা হয়। কারণ দূর থেকে দেখলে একে কৃষ্ণবর্ণ বলে মনে হয়। উড়িষ্যার এই মন্দিরগুলি ‘নগর’ রীতিতে নির্মিত।

উপসংহার :- ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে উড়িষ্যা অতি উচ্চস্থানের অধিকারী। কোনারকের সূর্য মন্দির, পুরীর জগন্নাথ মন্দির ও ভূবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির আজও আমাদের মনকে আকর্ষণ করে।

(FAQ) প্রাচীন উড়িষ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন চীনা পর্যটক উড়িষ্যা ভ্রমণ করেছেন?

হিউয়েন সাঙ।

২. পুরীর জগন্নাথ মন্দির কে প্রতিষ্ঠা করেন?

অনন্তবর্মন চোড়গঙ্গ।

৩. কোনারকের সূর্য মন্দির কে নির্মান করেন?

প্রথম নরসিংহ।

৪. উড়িষ্যার মন্দির নগরী কাকে বলা হয়?

ভূবনেশ্বর।

Leave a Comment