আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা প্রসঙ্গে মামলার বিচারক, অরবিন্দ ঘোষের উকিল, প্রেক্ষাপট, সূচনা, রাজসাক্ষী, বারীন্দ্রকুমারের স্বীকারোক্তি, বিচার শুরু, রায় ও মামলার গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা
ঐতিহাসিক ঘটনা | আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা |
স্থান | আলিপুর |
দেশ | ভারত |
বিচার | আলিপুর সেশন কোর্ট |
সময়কাল | মে, ১৯০৮ খ্রি: |
ভূমিকা :- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কোর্টের মামলা হল আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলা মে ১৯০৮ থেকে মে ১৯০৯ পর্যন্ত চলেছিল।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার বিচারক
এই মামলায় ৩৭ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনকে আলিপুর সেশন কোর্টে বিচার করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে বিচার করে পি. সি. বিচক্রফট এবং ভারতীয় বিচারক ছিলেন লাথুনিপ্রসাদ ও জানকিপ্রসাদ।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় অরবিন্দ ঘোষের উকিল
চিত্তরঞ্জন দাস ব্যারিস্টার হিসাবে অরবিন্দ ঘোষ-এর মামলা পরিচালনা করেন। বিচারে অরবিন্দ মুক্তি লাভ করেন।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট
- (১) মজঃফরপুরের বোমা বিস্ফোরণ এবং প্রফুল্ল চাকীর আত্মহত্যা ও ক্ষুদিরাম বসুর গ্রেপ্তারের সূত্র ধরে কলকাতার পুলিশ ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২রা মে যুগান্তর সমিতির কলকাতার প্রধান কর্মকেন্দ্র মানিকতলার বাগানবাড়ী ও বিপ্লবীদের অন্যান্য বাসস্থান খানাতল্লাসী করে।
- (২) এই খানাতল্লাসীর ফলে বাগান বাড়ী থেকে বোমা, ডিনামাইট ও কার্তুজ প্রস্তুত করবার যন্ত্রপাতি, বন্দুক, রিভলভার ও বহু চিঠিপত্র পুলিশের হস্তগত হয়।
- (৩) বিভিন্ন স্থান থেকে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্ৰ দাস, অবিনাশ ভট্টাচার্য, হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল, উল্লাসকর দত্ত, শৈলেন্দ্রনাথ বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কানাইলাল দত্ত প্রমুখ যুগান্তর দলের চৌত্রিশ জন নেতা ও প্রধান কর্মী গ্রেপ্তার হন।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার সূচনা
বন্দী নেতা ও প্রধান কর্মীদের নিয়েই ইতিহাস বিখ্যাত ‘আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা’ আরম্ভ হয়।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার রাজসাক্ষী
যুগান্তর সমিতির অন্যতম সভ্য নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে পুলিশের কাছে সকল তথ্য প্রকাশ করে দেয়। রাজসাক্ষী হবার পর নরেন্দ্র গোস্বামীকে আলিপুর জেলের হাসপাতালে অপসারিত করা হয়।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় বারীন্দ্রকুমারের স্বীকারোক্তি
বারীন্দ্রকুমার এই ষড়যন্ত্রের প্রধান দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে পুলিশের কাছে এক স্বীকারোক্তি করেন। তাঁর স্বীকারোক্তির ফলে (রাজা) সুবোধ মল্লিক এবং আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরু
বারীন্দ্রের পর উল্লাসকর, উপেন্দ্রনাথ এবং আরও কয়েকজন স্বীকারোক্তি দেন। ধৃত বিপ্লবীদের মধ্যে অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন অন্যতম। এইভাবে ধৃত ৩০ জনেরও বেশি বিপ্লবীর বিরুদ্ধে ‘সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধোদ্যম’-এর অভিযোগে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার বিচার আরম্ভ হয়।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার রায়
- (১) ১৯০৯ সালের ৬ মে আলিপুর বোমা মামলার রায় দেওয়া হয়। বিচারক তার রায়ে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, ও উল্লাসকর দত্তকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
- (২) উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র কানুনগো, বিভূতিভূষণ সরকার, বীরেন্দ্র সেন, সুধীর ঘোষ, ইন্দ্রনাথ নন্দী, অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য, শৈলেন্দ্রনাথ বসু, হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল, ইন্দুভূষণ রায়ের, দ্বীপান্তর দণ্ড হয়।
- (৩) পরেশ মৌলিক, শিশির ঘোষ, নিরাপদ রায় ১০ বছর দ্বীপান্তর দণ্ড, অশোক নন্দী, বালকৃষ্ণ হরিকোণে, শিশির কুমার সেন ৭ বছর দ্বীপান্তর দণ্ড এবং কৃষ্ণ জীবন সান্যাল ১ বছর কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন।
- (৪) আপিলে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তের মৃত্যুদণ্ড রদ হয় এবং তার বদলে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। অরবিন্দ ঘোষ মুক্তি পান এবং অনেকের সাজা হ্রাস করা হয়।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার গুরুত্ব
বিভিন্ন কারণে ভারতের সন্ত্রাসবাদী বিপ্লব প্রচেষ্টার ইতিহাসে ‘আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা’ বিখ্যাত হয়ে আছে। যেমন –
- (১) এটিই বিংশ শতাব্দীর বিপ্লব প্রচেষ্টার ইতিহাসে প্রথম ষড়যন্ত্র মামলা।
- (২) ভারতে এই প্রথম বোমা দ্বারা বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা চলে এবং এই বিপ্লবীরাই ভারতে প্রথম বোমা ব্যবহার করেন।
- (৩) কানাইলাল ও সত্যেনের দ্বারা জেলের মধ্যে নরেন গোস্বামীর হত্যা কেবল ভারতের বিপ্লব প্রচেষ্টার ইতিহাসে নয়, সমগ্র বিশ্বের বিপ্লব-প্রচেষ্টার ইতিহাসে এক অতি বিস্ময়কর ঘটনা” বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
উপসংহার :- আলিপুর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জেলা সদর ও কলকাতার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি অঞ্চল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গেও এই অঞ্চলের যোগ অত্যন্ত গভীর।
(FAQ) আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯০৮ সালে।
অরবিন্দ ঘোষ।
আলিপুর সেশন কোর্টে।
লাথুনিপ্রসাদ ও জানকীপ্রসাদ