আকবরের উত্তর ভারত বিজয় নীতি

মুঘল সম্রাট আকবরের উত্তর ভারত বিজয় নীতি প্রসঙ্গে ক্ষমা প্রদর্শন, সংহতি ও সম্প্রসারণ, সুসংগঠিত প্রশাসন ধর্মীয় সহনশীলতা, ভারতবর্ষের সংহতি দান, জাতীয় জীবনের সূত্রপাত, প্রত্যক্ষ শাসন প্রচলন, জাতীয় নরপতি ও আধুনিকতার গোড়াপত্তন সম্পর্কে জানবো।

মুঘল সম্রাট আকবরের উত্তর ভারত বিজয় নীতি

বিষয়আকবরের উত্তর ভারত বিজয়নীতি
মুঘল বাদশাআকবর
সময়কাল১৫৫৬-১৬০৫ খ্রি
পূর্বসূরিহুমায়ুন
উত্তরসূরিজাহাঙ্গীর
মুঘল সম্রাট আকবরের উত্তর ভারত বিজয় নীতি

ভূমিকা :- ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আকবর আসাম ছাড়া সমগ্র উত্তর ভারত-এ নিরঙ্কুশভাবে সাম্রাজ্য-এর সম্প্রসারণ ঘটাতে সমর্থ হয়েছিলেন। উত্তর ভারতে তিনি যে নীতি অবলম্বন করেছিলেন, তাতে তাঁর উদার মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

আকবরের ক্ষমা প্রদর্শন

তিনি উত্তর ভারতের বহু শাসককে ক্ষমা করেছেন এবং বশ্যতা স্বীকারের পর তাঁকে তার রাজ্যেই নিয়োগ করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই নীতির ব্যাতিক্রম ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু রক্তপিপাসু স্বৈরাচারীর ভূমিকা অবলম্বন করেন নি।

আকবরের সম্প্রসারণ ও সংহতি নীতি

  • (১) মধ্যযুগের ইতিহাসে রক্তপিপাসু স্বৈরাচারিতাই ছিল রাজধর্ম – একথা আমরা যেন বিস্তৃত না হই। কিন্তু আকবর শুধুমাত্র সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটিয়েই নিশ্চিত ছিলেন না।
  • (২) তিনি আলাউদ্দিন খলজির মতো সম্প্রসারণ ও সংহতি – এই দুটি নীতি একই সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন এবং এই নীতি গ্রহণ করে তিনি চূড়ান্তভাবে এক আধুনিক শাসকে পরিণত হয়েছিলেন।

সম্রাট আকবরের সুসংগঠিত প্রশাসন

  • (১) আকবর অবশ্য সাম্রাজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সুসংগঠিত প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজেও মনোযোগী ছিলেন। তিনি যখনই কোনো রাজ্য অধিকার করতেন তৎক্ষণাৎ সেখানে তিনি শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন।
  • (২) এরপর সুশৃঙ্খল রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়োগ করতেন। এই রাজস্বব্যবস্থার ভিত্তি ছিল জমির উৎপাদিকা শক্তি অনুযায়ী জমির শ্রেণীবিভাজন এবং জমি জরিপ করে তার খাজনা নির্ধারণ।

আকবরের ধর্মীয় সহনশীলতা

নতুন বিজিত রাজ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা আকবর অবলম্বন করতেন। সেই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে আকবর সামাজিক, ধর্মনৈতিক, নৈতিক, আর্থিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার করতেন।

আকবর কর্তৃক ভারতবর্ষে সংহতি দান

মুঘল বাদশাহ আকবর বিজিত সাম্রাজ্যের সব রাজ্যে একই রকম শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করে ভারতবর্ষের সংহতি দান করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

আকবর কর্তৃক জাতীয় জীবনের সূত্রপাত

তিনি ভারতবর্ষে প্রথম রাজনৈতিক ঐক্যের পথ নির্মাণ করে এক জাতীয় জীবনের সূত্রপাত করেন।

আকবরের আমলে প্রত্যক্ষ শাসন প্রচলন

প্রকৃতপক্ষে আকবর তাঁর সমগ্র সাম্রাজ্যে প্রত্যক্ষ শাসন প্রচলিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন, যা তাঁর পূর্বে কখনও সম্ভব হয় নি। আলাউদ্দিন ও শেরশাহ প্রচলিত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আকবরের মতো সাফল্য তাঁরা লাভ করেন নি।

জাতীয় নরপতি আকবর

আকবরই প্রথম ভারতীয় শাসক, যিনি ভারতবর্ষকে জাতীয়তার আদর্শে গড়ে তোলার ভিত্তি নির্মাণ করেছিলেন। মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যতিক্রম, যিনি ‘জাতীয় নরপতি’ আখ্যায় বিভূষিত হয়েছিলেন।

আধুনিকতার গোড়াপত্তনে আকবরের অবদান

আকবরের সম্প্রসারণ ও সংহতি সাধন ভারতবর্ষে আধুনিকতার গোড়াপত্তন করে। আকবরের সম্প্রসারণে সাম্রাজ্যবাদের লক্ষণ পরিস্ফুট থাকলেও, তাঁর সম্প্রসারণ শুধুমাত্র নগ্ন সাম্রাজ্যবাদ ছিল না।

উপসংহার :- এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে, রাজপুত জাতির একাংশ এই প্রথম বুকের রক্ত দিয়ে সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই দিক লক্ষ্য করেই হ্যাভেল তাঁকে ‘Indian of Indians’ বলে অভিহিত করেছেন।

(FAQ) মুঘল সম্রাট আকবরের উত্তর ভারত বিজয় নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন মুঘল সম্রাট জাতীয় নরপতি নামে অভিহিত হন?

আকবর।

২. আকবরকে ‘Indian of Indians’ বলেছেন কে?

ঐতিহাসিক হ্যাভেল।

৩. সমগ্ৰ রাজ্যে প্রত্যক্ষ শাসন প্রচলন করেন কে?

আকবর।

৪. মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয়?

আকবর।

Leave a Comment