সুলতান কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি প্রসঙ্গে মালিক কাফুরের ক্ষমতা দখল, মালিক কাফুরের মৃত্যু, সুলতান পদ গ্ৰহণ, দমনমূলক নীতি রদ, বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন, নৈতিক চরিত্র, গুজরাটের শাসনকর্তা নিয়োগ, আমোদ প্রমোদ, অত্যাচার ও ব্যাভিচার এবং খলজি বংশের পতন সম্পর্কে জানবো।
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি
ঐতিহাসিক চরিত্র | কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি |
রাজত্ব | ১৩১৬-১৩২০ খ্রি |
বংশ | খলজি বংশ |
পিতা | আলাউদ্দিন খলজি |
পূর্বসূরি | আলাউদ্দিন খলজি |
ভূমিকা :- ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খলজির মৃত্যুর আগেই তাঁর অনুচর মালিক কাফুরের প্রভাবে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র খিজির খাঁর দাবী উপেক্ষা করে, কনিষ্ঠ পুত্র বালক শিহাবুদ্দিন উমরকে তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেন।
মালিক কাফুরের ক্ষমতা দখল
- (১) আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর মালিক কাফুর বালক উমরের অভিভাবক সেজে সকল ক্ষমতা করায়ত্ত করেন। কাফুর শিহাবুদ্দিনের মাতা তথা আলাউদ্দিনের বিধবা পত্নীকে বিবাহ করেন।
- (২) তিনি আলাউদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র খিজির খান ও তাঁর ভ্রাতা শাদি খানকে অন্ধ করে গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দী করেন। সকল প্রভাবশালী আলাই অভিজাতদের বন্দী অথবা হত্যা করার তিনি চক্রান্ত করেন।
মালিক কাফুরের মৃত্যু
আলাউদ্দিনের অপর এক পুত্র মোবারক খলজিকে হত্যার জন্য কাফুর চেষ্টা করলে, মোবারক সেনাদল ও ওমরাহদের সাহায্যে কাফুরকে নিহত করেন। কাফুর ৩৫ দিন বেনামী রাজত্ব করার পর প্রাণ হারান।
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজির সুলতান পদ গ্ৰহণ
মালিক কাফুরকে নিহত করার পর কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি কিছুকাল তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শিহাবুদ্দিন খলজীর অভিভাবকের পদ নেন। দুমাস পরে ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি অভিজাতদের নিজ পক্ষে এনে শিহাবুদ্দিনকে অন্ধ করে গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দী করেন এবং নিজে সুলতানের পদ গ্ৰহণ করেন।
পিতার গুণ মোবারক খলজির মধ্যে অনুপস্থিত
সুলতান কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি তাঁর পিতার গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন না। আলাউদ্দিনের আমলের শাসন ব্যবস্থাকে ধরে রাখার ক্ষমতা তার ছিল না।
মোবারক খলজি কর্তৃক দমনমূলক নীতি রদ
- (১) তিনি অভিজাত ও সেনাদলকে তোষণ দ্বারা তাঁর ক্ষমতাকে দৃঢ় করার চেষ্টা করেন। এই কারণে আলাউদ্দিনের আমলের দমনমূলক নীতিগুলি রদ করা হয়। বাজেয়াপ্ত জাগীরগুলি পুনরায় বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
- (২) সেনাদলকে ৬ মাসের বেতন আগাম দেওয়া হয় এবং তাদের বেতন বাড়ান হয়। অভিজাতদের নতুন জাগীর দেওয়া হয়। আলাউদ্দিনের গুপ্তচর ব্যবস্থা রদ করা হয়।
মোবারক খলজির আমলে বিভিন্ন বিদ্রোহের সূচনা
কুতুবউদ্দিনের এই উদার নীতির ফলে জনসাধারণের ধারণা জন্মায় যে, সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যায় এবং সাম্রাজ্য-এর নানা অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দেয়। গুজরাট, দেবগিরি, রাজপুতানা ও তেলেঙ্গানায় বিদ্রোহ দেখা দেয়।
বিদ্রোহ দমনে মোবারক খলজির অবদান
সেনাপতি আইন-উল-মুলক গুজরাটের বিদ্রোহ দমন করেন। দেবগিরিতে হরপালদেব বিদ্রোহ ঘোষণা করলে কুতুবউদ্দিন নিজে এই বিদ্রোহ দমন করেন। হরপালদেব নিহত হন। দেবগিরিকে তুর্কী মালিকদের দ্বারা শাসনের ব্যবস্থা করা হয়। খসরু শাহ তেলেঙ্গানার বিদ্রোহ দমন করেন।
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজির নৈতিক চরিত্র
মালিক খসরু খান ছিলেন এক ধর্মান্তরিত মুসলিম। কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজির ব্যক্তিগত নৈতিক চরিত্র ছিল অত্যন্ত কলঙ্কিত। তিনি খসরু খানের প্রভাবে তাকে উজির ও মালিক নায়েব প্রভৃতি উচ্চপদে নিয়োগ করেন। এজন্য খানদানী তুর্কী সেনাপতিরা কুতুবউদ্দিনের উপর খুবই অসন্তুষ্ট হন।
মোবারক খলজির উদ্দ্যোগে গুজরাটের শাসনকর্তা নিয়োগ
কুতুবউদ্দিন জানতে পারেন যে, তার খুল্লতাত পুত্র আসাদ-উদ-সিসকে তার স্থলে সিংহাসনে বসাবার চক্রান্ত চলছে। এজন্য তিনি গুজরাটের শাসনকর্তা জাফর খানকে প্রাণদণ্ড দেন এবং খসরুর পরামর্শে মালিক নিজামউদ্দিনকে গুজরাটের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
মোবারক খলজির আমোদ প্রমোদ
কুতুবউদ্দিন শাসনকার্যে অবহেলা করে আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত হন। তিনি তার ভাতা খিজির খানের বিধবা পত্নী দেবলাদেবীকে বিবাহ করেন।
ভ্রাতাদের প্রতি মোবারক খলজির অত্যাচার ও ব্যাভিচার
তিনি খসরু খানের পরামর্শে তার অন্যান্য ভ্রাতাদের যথা – শাদিখান, শিহাবুদ্দিন ওমর প্রমুখকে হত্যা করেন। তাঁর অত্যাচার ও ব্যভিচারে দরবারের যোগ্য অভিজাতরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন।
খলজি বংশের পতন
এই সুযোগে তাঁর অনুচর মালিক খসরু গুপ্তঘাতকের দ্বারা ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে তাকে হত্যা করলে খলজি বংশের শাসনের অবসান ঘটে।
উপসংহার :- মোবারক খলজি তার আপন অধঃপতনের জন্যই সিংহাসন ও প্রাণ হারান। তার মৃত্যুতে খলজি শাসনের অবসান ঘটে এবং তুঘলক বংশ -এর শাসন শুরু হয়।
(FAQ) সুলতান কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি।
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি।
তুঘলক বংশ।
১২৯০ খ্রিস্টাব্দে।