সাতবাহন শাসন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণ্য ধর্মাশ্রিত রাষ্ট্র, রাজার ক্ষমতা, সামন্ততন্ত্র, আমলাতন্ত্র, প্রাদেশিক শাসন ও কর আদায় সম্পর্কে জানবো।
সাতবাহন শাসন ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | সাতবাহন শাসন ব্যবস্থা |
সাম্রাজ্য | সাতবাহন সাম্রাজ্য |
প্রতিষ্ঠাতা | সিমুক |
শ্রেষ্ঠ রাজা | গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী |
শেষ রাজা | যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী |
ভূমিকা:- সাতবাহন রাজাদের শিলাপট ও এই যুগের বৌদ্ধ গ্রন্থগুলি থেকে সাতবাহন শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। সাতবাহন শাসন ব্যবস্থা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর ধর্ম নিরপেক্ষ সামরিক রাষ্ট্রের মত জটিল বা অশোক -এর বৌদ্ধ নীতি দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রের মত উদারপন্থী ছিল না।
ব্রাহ্মণ্য ধর্মাশ্রিত সাতবাহন রাষ্ট্র
সাতবাহন শাসন ধর্মশাস্ত্রের বিধি অনুসারে শাসিত হত। সুতরাং এই রাষ্ট্রের আইন-কানুনে জটিলতা ছিল না।
সাতবাহন শাসন ব্যবস্থায় রাজার ক্ষমতা
- (১) সাতবাহন রাজারা বংশানুক্রমিকভাবে শাসন করতেন। যদিও তারা বহু বিবাহ করতেন এবং রাজাদের নামে মাতৃতান্ত্রিক প্রভাব দেখা যায়, তথাপি সিংহাসন নিয়ে কোনো ভ্রাতৃ বিরোধের কথা জানা যায়নি। সাতবাহন রাজারা মাতৃতান্ত্রিক এবং নামের সঙ্গে মাতার নাম ধারণ করলেও, পিতার মৃত্যুর পর বংশানুক্রমিকভাবে সিংহাসনে বসতেন।
- (২) সাতবাহন রাজারা স্বর্গীয় অধিকার দাবী করতেন না এবং কোনো আড়ম্বরপূর্ণ উপাধি ব্যবহার করতেন না। তাঁরা ‘রাজন’ উপাধি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতেন। রাজার ক্ষমতা শাস্ত্রের নির্দেশ ও প্রচলিত প্রথার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। রাজার প্রধান কর্তব্য ছিল দেশ রক্ষার ব্যবস্থা, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করা। তিনি বর্ণাশ্রম ধর্মকে রক্ষা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।
সাতবাহন শাসন ব্যবস্থায় সামন্ততন্ত্র
- (১) রাজাকে শাসনকার্যে রাজপুত্র বা কুমারগণ সাহায্য করতেন। প্রদেশের শাসন অনেক ক্ষেত্রে কুমারদের হাতে দেওয়া হত। সামন্তশ্রেণীও রাজকার্যে অংশ নিত। সর্বোচ্চ সামন্তরা ‘রাজা’ উপাধি নিত। কখনও কখনও এরা নিজ নামে মুদ্রা প্রচার করত।
- (২) ডঃ গোপাল আচারিয়ার মতে, রাজা উপাধিধারী সামন্তরা স্বায়ত্ব শাসনের অধিকার ভোগ করত। এরপর পদমর্যাদা অনুসারে মহারথী, মহাভোজ নামে দুধরনের সামন্তের কথা জানা যায়।
- (৩) ডঃ আচারিয়ার মতে, মহাভোজরা পদমর্যাদায় মহারথীদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিল। এই দুই শ্রেণীর সামন্তরা বংশানুক্রমিকভাবে ক্ষমতা ভোগ করত। ভোজকরা ছিল প্রাচীন গোষ্ঠী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চপদ পেয়ে মহাভোজ উপাধি পায় বলে মনে করা হয়।
- (৪) মহারথীরা যে সকল ভূমি পট্টলী দান করেন তা নিজ অধিকারে দেন। তাতে রাজার সম্মতি বা আদেশের উল্লেখ না থাকায় পণ্ডিতেরা বলেন যে, মহারথীরা স্বায়ত্ব শাসন ভোগ করতেন।
সাতবাহন শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র
- (১) গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর আমল থেকে সাতবাহন সাম্রাজ্য-এর পরিধি বাড়লে শাসনকার্যের ভার বেড়ে যায়। এই ভার বহনের জন্য নতুন কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়। এদের নাম ছিল মহাসেনাপতি ও মহাতলবার।
- (২) মহাসেনাপতি দলিলপত্রের দায়িত্ব বহন করত এবং জনপদের শাসন পরিচালনা করত। ডঃ নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী বলেন যে, সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলির শাসন তাদের হাতে দেওয়া হত। রাজবংশের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে এই সকল কর্মচারীদের অনুগত রাখার ব্যবস্থা করা হত।
- (৩) কৃষ্ণা উপত্যকায় মহাতলবার নামক কর্মচারীর নাম পাওয়া যায়। এই অর্ধ সামন্ত কর্মচারীরা রাজাকে দরকার হলে সেনাদল দিয়ে সাহায্য করত। যাই হোক, এই সামরিক শাসনকর্তারা স্বায়ত্ব শাসনের অধিকার ভোগ করতেন। এমনকি, তাঁরা নিজ নামে মুদ্রা পর্যন্ত চালাতেন। সাতবাহন সাম্রাজ্যের শেষ দিকে এই সামরিক সামন্ত কর্মচারীরা বিচ্ছিন্নতাবাদ দ্বারা সাম্রাজ্যের পতন ঘটান।
সাতবাহন যুগে প্রাদেশিক শাসন
- (১) উপরে উল্লিখিত সামন্ত কর্মচারী ছাড়া আরও অন্যান্য কর্মচারীদের সাহায্যে সাতবাহন শাসন চালান হত। গ্রামের শাসনের দায়িত্ব নিত গ্রামিক। মহাতারক, ভাণ্ডগারিক, হিরণ্যক, দুতক, মহামাত্র, প্রতিহার প্রভৃতি কর্মচারীরা কেন্দ্রে রাজকার্যে সহায়তা করত। এই সকল কর্মচারীর উপাধিতে মৌর্য যুগের ছাপ দেখা যায়।
- (২) ডঃ গোপাল আচারিয়ার মতে, সাতবাহন শাসন ব্যবস্থার দুটি ভাগ ছিল। সামন্ত শাসিত অঞ্চলে স্বায়ত্ব শাসন থাকায়, সাতবাহন রাজ কর্মচারীদের সে অঞ্চলে কোনো দায়িত্ব ছিল না। যে অঞ্চলে রাজার প্রত্যক্ষ শাসন ছিল, সেখানেই এই সকল কর্মচারী নিযুক্ত হত।
- (৩) মৌর্য শাসনের আদলে এই সকল অঞ্চলে জনপদ বা জেলা এবং গ্রাম স্তরে শাসন চলত। জেলা বিভাগ ও জেলা শাসন ছিল মৌর্য শাসন ব্যবস্থা থেকে গৃহীত। এজন্য সাতবাহন রাজারা তাদের প্রত্যক্ষ অধিকৃত অঞ্চলকে জনপদ এবং জনপদকে আহর, আবার আহরকে গ্রামে ভাগ করেন।
- (৪) ডঃ রায়চৌধুরী অবশ্য মনে করেন যে, সমগ্র সাতবাহন সাম্রাজ্য অর্থাৎ সামন্ত শাসিত অঞ্চল এবং প্রত্যক্ষ শাসিত অঞ্চলকে সাতবাহন রাজারা আহর অথবা জনপদে বিভক্ত করেন।
সাতবাহন শাসন ব্যবস্থায় কর আদায়
সাতবাহন রাজস্ব সংগৃহীত হত ভূমিকর, সীতা জমি, লবণ শুল্ক প্রভৃতি খাত থেকে। নগদ টাকা বা ফসলের ভাগ দ্বারা রাজস্ব প্রদান করা যেত।
উপসংহার:- সাতবাহন শাসনে কৃষকদের অবস্থা সাধারণভাবে স্বচ্ছল ছিল না। সামন্ত প্রথার দরুন কৃষকরা শোষিত হত। কৃষকের জমিতে মাঝে মাঝে সরকারী কর্মচারীদের হস্তক্ষেপ ঘটত।
(FAQ) সাতবাহন শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
দাক্ষিণাত্যে।
অন্ধ্র।
সিমুক।
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।
যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী।