দ্বিতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ -এর সময়কাল, বিবাদমান পক্ষ, বেসিনের সন্ধি, বেসিনের সন্ধির প্রতিক্রিয়া, যুদ্ধের সূত্রপাত, সিন্ধিয়া, ভোঁসলের পরাজয়, হোলকারের সাথে যুদ্ধ, দিগ-এর যুদ্ধ, হোলকারের রক্ষা, রাজঘাটের সন্ধি ও দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে জানবো।
১৮০৩-১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ
ঐতিহাসিক ঘটনা | দ্বিতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ |
সময়কাল | ১৮০৩-১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ |
বিবাদমান পক্ষ | ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মারাঠা |
ফলাফল | মারাঠাদের পরাজয় |
ভূমিকা :- পেশোয়া দ্বিতীয় মাধব রাওয়ের আমলে বেরারের ভোঁসলে, বরোদার গাইকোয়াড়, গোয়ালিয়রের মহাদজি সিন্ধিয়া প্রভৃতি মারাঠা সামন্ত প্রভুদের ক্ষমতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধের পূর্বে বেসিনের সন্ধি
নতুন পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও আত্মরক্ষার জন্য ইংরেজদের শরণাপন্ন হয়ে তাদের সাথে বেসিনের সন্ধি (১৮০২ খ্রিস্টাব্দ) স্বাক্ষর করে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বেসিনের সন্ধির প্রতিক্রিয়া
- (১) ১৮০২ সালের বেসিনের সন্ধি মারাঠা জাতির মর্যাদাকে ধূলায় লুণ্ঠিত করে। সিন্ধিয়া ও ভোঁসলে এই সন্ধি মানতে রাজি ছিলেন না। অপরদিকে পেশোয়া বাজিরাও মনে-প্রাণে এই সন্ধি মানতে পারেন নি।
- (২) পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও সিন্ধিয়া ও ভোঁসলেকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য গোপনে উৎসাহিত করতে থাকেন। বরোদার গাইকোয়াড় ও যশোবন্ত হেলকার নিরপেক্ষ থাকেন।
মহারাষ্ট্রে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সূত্রপাত
১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধিয়া ও ভোঁসলের যুগ্মবাহিনী নিজামের রাজ্যের সীমান্তে উপস্থিত হলে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৮০৩-০৫ খ্রিঃ) শুরু হয়।
দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে সিন্ধিয়া ও ভোঁসলের পরাজয়
অসই, ওয়াড়গাঁও, দিল্লি ও লাসওয়ারী-র যুদ্ধে বারংবার পরাজিত হয়ে সিন্ধিয়া ও ভোঁসলে যথাক্রমে ইংরেজদের সঙ্গে সুরজ-অর্জুনগাঁ ও দেবগাঁও -র সন্ধি স্বাক্ষর করে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নেন (১৮০৩ খ্রিঃ)।
১৮০৩-০৫ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ চলাকালীন হোলকারের সাথে যুদ্ধ
এতদিন হোলকার যুদ্ধে যোগদান করেন নি। মারাঠা জাতির স্বাধীনতা বিপন্ন দেখে এবার তিনি ভরতপুরের রাজার সঙ্গে মিত্রতা করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন(১৮০৪ খ্রিঃ)।
দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ চলাকালীন দিগ্ -এর যুদ্ধ
প্রাথমিক কিছু সাফল্যের পর দিগ্-এর যুদ্ধে হোলকার ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন এবং ইংরেজ বাহিনী তাঁর রাজধানী ইন্দোর দখল করে। ভরতপুরের রাজা ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি করেন।
১৮০৩-০৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের পর হোলকারের রক্ষা
মিত্রহীন হেলকার আশ্রয়ের আশায় পাঞ্জাবে আসেন, কিন্তু রণজিৎ সিংহ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। ইতিমধ্যে গভর্নর জেনারেল ওয়েলেসলি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে হোলকার রক্ষা পান।
দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের পর রাজঘাটের সন্ধি
পরবর্তী গভর্নর জেনারেল স্যার জর্জ বার্লো (১৮০৫-০৭ খ্রিঃ) সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির বিরোধী ছিলেন। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি হোলকারের সঙ্গে রাজঘাটের সন্ধি স্থাপন করেন এবং এর ফলে হোলকার তাঁর রাজ্যের কিছু অংশ ফিরে পান।
ভারতে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের ফলাফল
- (১) দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের ফলে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতন প্রায় সুনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বেসিনের সন্ধি দ্বারা পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ইংরেজদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিলেন এবং ইংরেজরা তাঁর সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল।
- (২) সিন্ধিয়া ও ভোঁসলে অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইংরেজদের আশ্রিত হয়ে পড়েন। এক কথায়, মারাঠা রাষ্ট্রমন্ডলী ভেঙে যায়।
উপসংহার :- প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ -এ মারাঠাদের সাফল্য থাকলেও দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে তাদের দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। নতুন গভর্নর জেনারেল জর্জ বার্লো বিভিন্ন মারাঠা নেতার সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। তবে এই যুদ্ধের পর মারাঠা সাম্রাজ্যের পতন প্রায় সুনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
(FAQ) দ্বিতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮০৩-১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ।
দ্বিতীয় বাজিরাও।
লর্ড ওয়েলেসলি।